কাশেম আউট মাহমুদুল হাসান ইন
হাসান শাফিঈ: ঋণ ও বিল খেলাপের অভিযোগে টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় পার্টির আবুল কাশেমের সদস্য পদ বাতিল হচ্ছে। আবুল কাশেমের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। এর প্রেক্ষিতে আগামী রোববার কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্পিকারকে জানানো হবে। মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে গতকাল একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আদালতের রায়ের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের বাইরে আছেন। তিনি আসবেন শুক্রবার। আগামী রোববারের কমিশন বৈঠকেই আদালতের রায় অনুযায়ী আবুল কাশেমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আবুল কাশেম লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী ঘোষিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান ৭২ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। তবে নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েও রণে ক্ষান্ত দেননি মাহমুদুল হাসান। তিনি বিজয়ী প্রার্থী আবুল কাশেমের প্রার্থিতা অবৈধ ছিল দাবি করে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যান মাহমুদুল হাসান। তিনি তার আবেদনে আবুল কাশেম মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ‘বিল ও ঋণখেলাপি’ ছিলেন দাবি করেন। মাহমুদুল হাসানের আবেদনে বলা হয়, গত ৪ঠা ডিসেম্বর (২০০৮) জেলা রিটার্নিং অফিসার আবুল কাশেমের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছিল। তবে সোনালী ব্যাংকে তার ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৩৭ টাকা ঋণ রয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, ময়মনসিংহ টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আবুল কাশেমের নামে ৩২ হাজার ১১০ টাকা ফোন বিল বকেয়া রয়েছে। ইলেকশন পিটিশন নম্বর ০৮/২০০৯ এর প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট সংসদ সদস্য আবুল কাশেমের প্রার্থিতা বাতিল করে জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন। এই আদেশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার জন্যও এতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আপিলে যান সংসদ সদস্য আবুল কাশেম। সিভিল আপিল নম্বর ২৭/২০১১ খারিজ করে আবার গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। এরপর গত ২৯শে এপ্রিল আপিল বিভাগের এই রায়ের কপি নির্বাচন কমিশনে আসে। এ কপি পাওয়ার পর কমিশন সচিবালয়ের আইন শাখা কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে একটি কার্যপত্র তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, যেহেতু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে সেহেতু নির্বাচনী এলাকা ১৩৪ টাঙ্গাইল-৫ এ গত জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে রায় বাস্তবায়নে যে নির্দেশনা রয়েছে এ বিষয়েও কার্যপত্রে কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী রোববারের কমিশন সভায়ই আবুল কাশেমের বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ঋণ খেলাপি ও বিল খেলাপি হওয়ার পরেও গত নির্বাচনে টাঙ্গাইলের রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) আবুল কাশেমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। এ বিষয়ে ডিসি’র কাছে জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও তখন ডিসি তার কোন উত্তর দেননি। পরে আবুল কাশেমের ঋণ ও বিল খেলাপের বিষয়ে তদন্তে সত্যতা পায় কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১) এর (ঠ)-এ বলা হয়েছে, কৃষিকাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্রঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখের পনের দিন পূর্বে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত কোন ঋণ বা তার কোন কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষিত হবে না। এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য হইবার বা থাকিবার অযোগ্য হইবেন।
No comments