কল্যাণময় কোরআনুল কারীম by হাসনাইন হাফিজ

মানবজাতির একমাত্র জীবনব্যবস্থা আল কোরআন। কোরআন মানুষকে আলোর পথ দেখায়, কল্যাণের পথ দেখায়। এ কোরআন শুধু আরব জাতির জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। এ কোরআনের আলোকে স্বয়ং মহানবী (সা.) ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সব সমস্যার সমাধান করেছেন। তার প্রিয় সাহাবিগণও এ কোরআনের ওপর আমল করে সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন।


কোরআন মজিদ মুমিন হৃদয়ের সব কল্যাণ ও প্রজ্ঞার ধারাপ্রবাহের উৎস। কোরআন আল্লাহর রজ্জু, সুস্পষ্ট আলো এবং উপকারী চিকিৎসা। যে কোরআনকে আঁকড়ে ধরবে, সে পাপ-অপবিত্রতা থেকে রক্ষা পাবে। যে কোরআন অনুসরণ করবে সে নাজাত পাবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না, বরং আল্লাহর নিয়ামত ও সন্তুষ্টি পাবে; সে বাঁকা পথে যাবে না, বরং সহজ-সরল পথে পরিচালিত হবে।
রাসূলে করিম (সা.) হজরত আবু যর গিফারি (রা.)কে উপদেশ দিয়েছেন, 'তোমার কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। কেননা তা দুনিয়ায় তোমার জন্য আলো এবং আসমানে তোমার জন্য সঞ্চিত ধনভাণ্ডার।' হজরত মাকাল ইবনে ইয়াছার (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর কোরআন কলব বা হৃৎপিণ্ড। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সওয়াবের উদ্দেশ্যে তা পাঠ করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন। (আবু দাউদ. নাসায়ী, আহমদ)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোথাও একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছিলেন। তিনি তাদের থেকে কোরআন শুনতে চাইলেন। প্রত্যেকে কোরআনের যা জানতেন, তা পাঠ করে শোনাতে লাগলেন। ইত্যবসরে এক অল্পবয়স্ক যুবক উপস্থিত হলে তাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে যুবক! তোমার সঙ্গে কী আছে? যুবকটি বলল, আমার সঙ্গে ইত্যাদি ইত্যাদি এবং সূরা বাকারা আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার সঙ্গে সূরা বাকারাও আছে? যুবকটি বলল, জি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যাও, তুমিই এদের নেতা।'
আমাদের পূর্বসূরি আল্লাহর নেক বান্দাগণ পবিত্র কোরআন ও তার তেলাওয়াতের অশেষ ফজিলত সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তারা কোরআনকে আইন-কানুন ও বিধিবিধানের উৎস, সংবিধান, হৃদয়ের বসন্ত এবং ইবাদতের অজিফা বানিয়েছিলেন। তারা কোরআনের জন্য অন্তর খুলে দিয়েছিলেন। হৃদয় দিয়ে কোরআনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। কোরআনের উচ্চমানের শিক্ষা ও তাৎপর্য তাদের রূহ বা আত্মাকে পরিতৃপ্ত করেছে। আল্লাহতায়ালা তাদের দুনিয়ার জীবনে নেতৃত্ব দান করেন। আর তাদের জন্য পরকালে উচ্চতর মর্যাদা রয়েছে। পক্ষান্তরে কোরআনের কোনো সূরা বা আয়াত শেখার পর ভুলে যাওয়ার চেয়ে বড় গুনাহ আর নেই।
অতএব প্রত্যেক মুসলিমের, বিশেষত আলেম, বুদ্ধিজীবী, নেতৃবর্গ ও কর্মীদের উচিত, আল্লাহতায়ালার কিতাবকে সর্বাগ্রে অজিফা বানানো এবং প্রতিদিন কোরআনের কিছু অংশ পাঠ করা। প্রত্যেকে নিজের সময়-সুযোগমতো তেলাওয়াত করবেন, যাতে একটি দিনও তেলাওয়াতবিহীন অবস্থায় অতিবাহিত না হয়। কেউ পাঠ করতে না পারলে শোনার চেষ্টা করবেন। অন্তত ছোট ছোট সূরা মুখস্থ করে তা সময়-সুযোগমতো তেলাওয়াত করা উচিত।
আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই আসছে পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান। আল্লাহতায়ালা বলেন, 'রমজান সেই মাস, যে মাসে নাজিল হয়েছে কোরআন।' কোরআনের ফজিলতের শেষ নেই। রমজানে এক খতম কোরআন_ অন্য যে কোনো মাসের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি সওয়াব। যারা জীবনে কোনোদিন কোরআন নামক গ্রন্থটিকে ছুঁয়ে ধরার সুযোগ পাননি কিংবা সুযোগ পেয়েছেন, তেলাওয়াত করার সুযোগ হয়নি কিংবা নিয়মিত তেলাওয়াতও হয় বটে অর্থ ও মর্ম বুঝতে চান কিংবা যারা তেলাওয়াতে নিয়মিত না বা ব্যস্ততায় কোরআনের খতম দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য প্রতিদিন কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও তেলাওয়াত করা এবং কোরআনের রঙে নিজেদের রাঙিতে তুলতে পরামর্শ জানাচ্ছি।
 

No comments

Powered by Blogger.