জনপ্রশাসন-নিয়োগই কি শেষ কথা? by সুলতান মাহমুদ রানা
বিভিন্ন দফতর, মন্ত্রণালয় কিংবা বিভিন্ন অফিসে হাজার হাজার পদ শূন্য হয়েছে, যাতে সরকারি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডও যথাযথভাবে করা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, পিসএসসি সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারি প্রশাসনে লোক নিয়োগের জন্য কিন্তু এর কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতি সম্পন্ন
কিছু দিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে জানলাম, সরকার জনপ্রশাসনে অর্ধলক্ষাধিক দলীয় কর্মকর্তা অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শিরোনামটি যদি এমন হতো যে, জনপ্রশাসনে অর্ধলক্ষাধিক কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে অর্থাৎ 'দলীয়' কথাটি যদি বাদ থাকত, তবে আরও অনেকেই বেশি খুশি হতেন। যদি সত্যিই দলীয় ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ হয় তাহলে নিশ্চয়ই নির্দলীয় প্রার্থীরা বাদ পড়বেন, এ ক্ষেত্রে না হয় বিরোধী দলের কথা বাদই রাখলাম। অতিসম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা ১৯৯৪-এর সংশোধনী অনুমোদন হয়েছে এবং বিভিন্ন দফতরে অ্যাডহক নিয়োগের নিমিত্তে শূন্য পদের তালিকাও প্রস্তুত হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) নামক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, এটা কি শুধু নামমাত্র প্রতিষ্ঠান? যে প্রতিষ্ঠান সাধারণত বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
বিভিন্ন দফতর, মন্ত্রণালয় কিংবা বিভিন্ন অফিসে হাজার হাজার পদ শূন্য হয়েছে, যাতে সরকারি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডও যথাযথভাবে করা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, পিসএসসি সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারি প্রশাসনে লোক নিয়োগের জন্য কিন্তু এর কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন। যে কোনো একটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই বছর। বর্তমান শিক্ষা কাঠামোর পরিমাপে এটা নিশ্চয়ই খুব কম সময় নয়। একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পাস করার পর তার পরিবার থেকে মাসে মাসে টাকা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া কতটা কষ্টকর তা শুধু নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের সন্তানরাই বুঝতে পারে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। একজন চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীকে বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার সব ধাপ অতিক্রম শেষে যখন খালি হাতে ফেরত যেতে হয় তখন তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে কেউ থাকে না। কাজেই সরকারের উচিত, বিসিএস পরীক্ষার ঢিলেমি প্রক্রিয়াটি কীভাবে দ্রুত গতিসম্পন্ন করা যায় সেদিকটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। যাতে কেউ একবার খালি হাতে ফিরলেও পরবর্তী সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উদ্যম, ইচ্ছা এবং মনোবল যেন হারিয়ে না ফেলে।
দ্রুত অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অতীব প্রশংসনীয়। কারণ যেখানে নিয়োগ পেতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর, সেখানে যদি রাতারাতি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে যোগদান করা যায় সেটা তো অবশ্যই স্বপ্নের চেয়ে আরও বেশি কিছু মনে হয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগদানের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হবে সেটা যেন অবশ্যই অত্যন্ত স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটি যেন দেশের অসৎ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের বাণিজ্যের উপাদানে পরিণত না হয়। তা না হলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনার যে সুনাম ও মর্যাদা রয়েছে তার গায়ে কালি লাগতে পারে। আর এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট। অতএব এমন কোনো পিএসসি গঠন করা হোক, যেখানে অতি অল্প সময়ে সরকারি প্রশাসনে শূন্য পদে লোক নিয়োগ দান করে প্রশাসনিক কাজে গতি ফিরিয়ে আনা যায় কিংবা গতি বাড়ানো যায়। এ জন্য পিএসসি পুনর্গঠন করে সেখানে প্রয়োজনে আরও কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রে গতি বাড়ানো সম্ভব হয়, তা হলে নিশ্চয়ই শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে সরকার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হতে পারে। আর এ প্রশংসার পরিমাণ দলীয় ভিত্তিতে অ্যাডহকভিত্তিক লোক নিয়োগের চাইতে বেশি হবে বলে আমার মনে হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা যেহেতু মহাজোট সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, কাজেই যারা নির্বাচনে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছে তাদের দিকটা একটু জোরালোভাবে ভেবে দেখা দরকার। জানা যায়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই অ্যাডহক ভিত্তিক সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেছে। এমনকি সরকার সমর্থিত ডাক্তারদের সংগঠনের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। যার ফলে অনেক মেধাবী এবং নির্দলীয় প্রার্থী ডাক্তার নিয়োগে বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই আগামীতে জনপ্রশাসনে যে নিয়োগটি হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তার ক্ষেত্রেও এর কোনো অংশে ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের মহাবিজয়কে পুনরায় নিশ্চিত করার জন্য এমন কিছু করা দরকার যাতে অন্ততপক্ষে যতটা সম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে চলা যায়।
সুলতান মাহমুদ রানা : শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sultanmahmud.rana@gmail.com
বিভিন্ন দফতর, মন্ত্রণালয় কিংবা বিভিন্ন অফিসে হাজার হাজার পদ শূন্য হয়েছে, যাতে সরকারি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডও যথাযথভাবে করা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, পিসএসসি সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারি প্রশাসনে লোক নিয়োগের জন্য কিন্তু এর কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন। যে কোনো একটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই বছর। বর্তমান শিক্ষা কাঠামোর পরিমাপে এটা নিশ্চয়ই খুব কম সময় নয়। একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পাস করার পর তার পরিবার থেকে মাসে মাসে টাকা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া কতটা কষ্টকর তা শুধু নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের সন্তানরাই বুঝতে পারে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। একজন চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীকে বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার সব ধাপ অতিক্রম শেষে যখন খালি হাতে ফেরত যেতে হয় তখন তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে কেউ থাকে না। কাজেই সরকারের উচিত, বিসিএস পরীক্ষার ঢিলেমি প্রক্রিয়াটি কীভাবে দ্রুত গতিসম্পন্ন করা যায় সেদিকটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। যাতে কেউ একবার খালি হাতে ফিরলেও পরবর্তী সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উদ্যম, ইচ্ছা এবং মনোবল যেন হারিয়ে না ফেলে।
দ্রুত অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অতীব প্রশংসনীয়। কারণ যেখানে নিয়োগ পেতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর, সেখানে যদি রাতারাতি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে যোগদান করা যায় সেটা তো অবশ্যই স্বপ্নের চেয়ে আরও বেশি কিছু মনে হয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগদানের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হবে সেটা যেন অবশ্যই অত্যন্ত স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটি যেন দেশের অসৎ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের বাণিজ্যের উপাদানে পরিণত না হয়। তা না হলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনার যে সুনাম ও মর্যাদা রয়েছে তার গায়ে কালি লাগতে পারে। আর এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট। অতএব এমন কোনো পিএসসি গঠন করা হোক, যেখানে অতি অল্প সময়ে সরকারি প্রশাসনে শূন্য পদে লোক নিয়োগ দান করে প্রশাসনিক কাজে গতি ফিরিয়ে আনা যায় কিংবা গতি বাড়ানো যায়। এ জন্য পিএসসি পুনর্গঠন করে সেখানে প্রয়োজনে আরও কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রে গতি বাড়ানো সম্ভব হয়, তা হলে নিশ্চয়ই শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে সরকার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হতে পারে। আর এ প্রশংসার পরিমাণ দলীয় ভিত্তিতে অ্যাডহকভিত্তিক লোক নিয়োগের চাইতে বেশি হবে বলে আমার মনে হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা যেহেতু মহাজোট সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, কাজেই যারা নির্বাচনে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছে তাদের দিকটা একটু জোরালোভাবে ভেবে দেখা দরকার। জানা যায়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই অ্যাডহক ভিত্তিক সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেছে। এমনকি সরকার সমর্থিত ডাক্তারদের সংগঠনের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। যার ফলে অনেক মেধাবী এবং নির্দলীয় প্রার্থী ডাক্তার নিয়োগে বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই আগামীতে জনপ্রশাসনে যে নিয়োগটি হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তার ক্ষেত্রেও এর কোনো অংশে ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের মহাবিজয়কে পুনরায় নিশ্চিত করার জন্য এমন কিছু করা দরকার যাতে অন্ততপক্ষে যতটা সম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে চলা যায়।
সুলতান মাহমুদ রানা : শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sultanmahmud.rana@gmail.com
No comments