কিছু অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা আর ‘বিশ্বাস অযোগ্য’ গুঞ্জন by মুনজের আহমদ চৌধুরী
বৃহত্তর সিলেটে বিএনপি’র রাজনীতির এ সময়ের কাণ্ডারি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আর দাপুটে স্বভাবের সাবেক এ সাংসদ নিখোঁজ হবার পর পেরিয়ে গেছে দু’টি দিন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সিলেটজুড়ে চলছে বিএনপির আন্দোলন, ডাকা হয়েছে হরতালও।
আগামী রোববার হরতাল ডাকা হয়েছে দেশজুড়েও। তার খোঁজ চেয়ে স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। ওই রিট আবেদনে লুনা অভিযোগ করেছেন, তার স্বামীকে আইনশৃংখলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলীর খোঁজ চেয়ে বিএনপির ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় স্বারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সাক্ষাত শেষে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, ইলিয়াস আলীর ঘটনায় সরকার বিব্রত।
তবে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার ধারাহিকতায় এসবই পুরনো খবর।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইলিয়াস আলী রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার ঘটনায় তার ‘খোঁজ মেলা’ সংক্রান্ত কোনও খবর দিতে পারেননি সরকার; সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনী।
এ বিষয়ে ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার পর র্যাব-পুলিশসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউই ইলিয়াস আলীর অবস্থান সম্পর্কে নুন্যতম কোন ধারনাও দিতে পারেননি।
অপরদিকে, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যদের কান্নার রোল থামছে না। সর্বশেষ আলাপকালে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘উনার কোনও খোঁজ আমরা পাইনি। থানা-হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই তার খোঁজ নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, তিনি যেন আমার স্বামীর, আমার অবুঝ তিন সন্তানের পিতার অন্তত খোঁজটি দেন।’
ইলিয়াস আলীর তিন সন্তান আবরার ইলিয়াস অর্নব, লাবিব সাহার ও একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাউয়ালের কান্না সংক্রমিত করছে আশপাশের মানুষকেও।
ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংঘঠনিক সম্পাদক। বৃহত্তর সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচাইতে প্রভাবশালী ও আলোচিত নেতা। ৩২ বছরের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ নেতা ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যোগ দেন। নানা চড়াৎ উৎরাই পেরিয়ে ‘সিলেটী’ এ নেতা ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সন্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
ইলিয়াস আলী গত জোট সরকারের আমলে সিলেটের বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের এমপি থাকা অবস্থায় তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে দেশজুড়ে আলোচনার তুঙ্গে উঠে আসেন। তার নানা কর্মকাণ্ডে সংক্ষুব্ধ সাইফুর রহমান একপর্যায়ে অভিমানে রাজনীতি থেকে অবসরে যাবার ঘোষনা দেন। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে সাইফুর রহমান সিদ্বান্ত থেকে সরে আসেন।
বিগত ১/১১ পরবর্তী সময়ে সিলেট বিএনপির কর্তৃত্ব নিয়ে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় সাইফুর রহমান অনুসারীদের। একপর্যায়ে সিলেট বিএনপির একচ্ছত্র নেতৃত্ব নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রয়াত সভাপতি কমর উদ্দীনের সঙ্গেও প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় ইলিয়াস আলীর। এরপর কমর উদ্দীনের মৃত্যুর পর সিলেট বিভাগে বিএনপির একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আভিভূর্ত হন ইলিয়াস।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরেক সিলেটী নেতা শমশের মবিন চৌধুরীর সঙ্গেও নানা ইস্যুতে শীতল সম্পর্ক সৃষ্টি হয় ইলিয়াস আলীর। নিজের রাজনৈতিক জীবনে সব সময়েই আলোচনা আর সমালোচনার তুঙ্গে থাকা এ নেতার নিজের নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের পাশাপাশি সিলেট বিভাগজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে আলাদা ইমেজ। সাহসী সংগঠক হিসেবে সিলেটে ছাত্রদল ও যুবদলের তরুণ নেতাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার ঘটনায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
আমার ৬ বছরের ক্ষুদ্র এ সাংবাদিকতা জীবনে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ইলিয়াস আলীকে। আমি তাকে যতটুকু দেখেছি, রাগী আর একগুঁয়ে হলেও একইসঙ্গে নিবেদিতপ্রাণ আর কর্মীঅন্তঃপ্রাণ মানুষ ইলিয়াস আলী। ব্যক্তিজীবনে ধার্মিক।
সহসাই ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ রহস্যকে ঘিরে রাজনীতির লাভ-ক্ষতির নানা জটিল-কুটিল বিচার বিশ্লেষণ নিয়ে সিলেট এখন সরগরম। তবে এ ইস্যুকে নিয়ে এখনও ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারছে না সিলেট বিএনপির ইলিয়াস সমর্থিত আর বিরোধী বলয়। বৃহস্পতিবারের হরতালেও সিলেট নগরীতে ইলিয়াস সমর্থক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান আর ইলিয়াস বিরোধী ডা. শাহরিয়ারের সমর্থকরা আলাদা অবস্থান নেয়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট বিএনপির দীর্ঘদিনের গ্রপিং রাজনীতিতেও অনেকটা বেকায়দায় ছিলেন ইলিয়াস আলী।
গত ২২ মার্চ সিলেটের উপশহর এলাকায় খুন হন ছাত্রদলের মীরাবাজার গ্রুপের কর্মী মাহমুদ হোসেন শওকত। তখন এ খুনের ঘটনায় ছাত্রদলের উপশহর গ্রুপের শীর্ষনেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দিনারকে প্রধান আসামি করে মামলাও করে শওকতের পরিবার। এরপর থেকে দিনার পুলিশের খাতায় পলাতক। তবে সত্যিকারার্থে দিনার গত ৩ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছে পরিবার। এসময় দিনারের সাথে থাকা আরেক ছাত্রদল কর্মীও নিখোঁজ হন।
আর এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভক্তি আর ফাটলের সৃষ্টি হয় সিলেট বিএনপির ইলিয়াস আলীর নিজ গ্রুপেও। খুন হওয়া শওকত ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত সিলেট ছাত্রদলের মিরাবাজার উপগ্রুপের কর্মী এবং অভিযুক্ত দিনার ছাত্রদলের উপশহর গ্রুপের শীর্ষ নেতা। আর এ দুটি উপগ্রুপই ইলিয়াস আলীর অনুসারী। শওকত হত্যার পরদিন ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান জামানের মালিকানাধীন দৈনিক শ্যামল সিলেটে শওকত হত্যার জন্য ছাত্রদল নেতা দিনারকে দায়ী করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে শামছুজ্জামান জামানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও দায়ের করেন দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন। এরপর দিনার নিখোঁজ হবার পরদিন দিনারের স্ত্রী, মা ও শ্বশুর সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার সিলেটে সংবাদ সমন্মেলন করে অভিযোগ করেন, ছাত্রদল কর্মী শওকতকে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত দিনার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে ঢাকায় গেলে আইনশৃংখলা বাহিনী উত্তরা এলাকা থেকে তাকে আটক করে।
অপরদিকে, দিনারের স্ত্রী জামানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করলে প্রকট হয়ে উঠে ছাত্রদলের মিরাবাজার ও উপশহর উপগ্রুপের দ্বন্দ্ব। নিজের গ্রুপ নিয়ে বেকায়দায় পড়েন ইলিয়াস আলী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৈঠক ডাকেন ইলিয়াস আলী। কিন্তু ইলিয়াস পরপর তিনটি বৈঠক ডাকলেও সিনিয়র নেতাদের কেউই তাতে অংশগ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আরো জটিলতর হয়।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকায় ইলিয়াস আলী একটি সমাবেশ করতে চাইলে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি আহবান করে। পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন নিষেধাঞ্জা জারি করায় সমাবেশ করতে পারেননি ইলিয়াস আলী।
আর দিনার নিখোঁজ হবার পর গত ৬ এপ্রিল সংবাদ সন্মেলন করে ইলিয়াস আলী বলেন, ‘বিএনপি নেতারা তাদের নিজস্ব সোর্সে নিশ্চিত হয়েছেন দিনারকে র্যাব-১ এর সদস্যরা আটক করেছে। অথচ র্যাব দিনারকে আটকের সত্যতা স্বীকার করছে না আবার অস্বীকারও করছে না।’
এদিকে দিনার ও দিনারের সঙ্গে থাকা অপর ছাত্রদল কর্মী জুনেদের কোন খোঁজ মেলেনি বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ূয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, দিনার ও জুনেদের খোঁজ পেতে ঢাকায় পুলিশের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ দু’জনের নিখোঁজ হবার ব্যাপারে সুনির্র্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এটি হয়ত নিতান্তই একটি বিছিন্ন ঘটনা। হয়তোবা এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই ইলিয়াস আলীর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার। তবুও আরেকটি বিছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করছি।
গত ৬ এপ্রিল মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজের অদূরে ছাত্রদল পরিচয়ে একদল যুবক আটক করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট বিএনপির আরেক আলোচিত নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িটি। জানা গেছে, নিছক পারিবারিক সফরেই মৌলভীবাজার এসেছিলেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ মুকিত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কি কারণে তারা আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িটি আটক করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ওই যুবকরা ছাত্রদলের কর্মী নয় বলে দাবি করেছেন মৌলভীবাজার বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার হারুন ওর রশিদ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িতে হামলার চেষ্টাকারীদের দু’টি মোটরসাইকেল মৌলভীবাজার থানা পুলিশ আটক করেছে। মোটরসাইকেল দু’টি এখনও মৌলভীবাজার থানায় আটক রয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনার ৬ দিনেও আরিফুল হক চৌধুরী কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
তবে এ ঘটনার ব্যাপারে বুধবার দফায় দফায় যোগাযোগ করেও আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, ইলিয়াস আলী আটক নাকি আত্মগোপনে- সিলেটের বিভিন্ন মহলে এমন গুঞ্জন আর ইলিয়াস আলীকে ঘিরে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি পক্ষ। এরমধ্যে ইলিয়াস আলীকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরেই অপহরণ করা হয়েছে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সবসময়ই নিজেকে আলোচনা আর সমালোচনার তুঙ্গে রাখা এ নেতা নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে নিজেই আত্মগোপন করেছেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে খোদ ফেসবুকেও। তবে শাষকদলই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
প্রসঙ্গত, ‘বিএনপি নেতা ইলিয়াছ দেশে না বিদেশে?’ শীর্ষক একটি সংবাদ কয়েকমাস আগে ইলিয়াস আলীর একান্ত সচিবের উদ্বৃতি দিয়ে বাংলানিউজে এবং পরে একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১১ ডিসেম্বর ২০১১ সালে প্রকাশিত ওই নিউজের প্রতিবাদে পরদিন ইলিয়াস আলীর দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারটিও প্রকাশ করে বাংলানিউজ ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে: ইলিয়াস আলী’ শিরোনামে। (নিউজ দু’টির লিঙ্ক নিচে দেওয়া হলো)
(পরবর্তীতে জানা যায়, কাউকে না জানিয়ে ইলিয়াস ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’ দেশের বাইরে ছিলেন।)
এদিকে, ইলিয়াস নিখোঁজের বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শমশের মবিন চৌধুরীর দৃষ্টি আর্কষণ করলে বুধবার তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তখন হয়তো কেউ ভুল সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ইলিয়াস আলীর মতো একজন কেন্দ্রীয় নেতা নিখোঁজ হবার ঘটনা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। এমন ক্রান্তিকালেও ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার ঘটনাকে কেন্দ্র যেসব অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে সেসব ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদ জানাই।’
বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নতুন একটি ইস্যু সৃষ্টি করে সুরঞ্জিতের ঘটনা আড়াল করতে সরকারই ইলিয়াস আলীকে আটক করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রব্বানী আলাপকালে বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর দ্রুত খোঁজ না দিতে পারলে এ সরকারের চূড়ান্ত বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে। ইলিয়াস আলীর জন্য শুধু বিএনপি নয়, সারা সিলেটের তথা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন গত বুধবার ফোনে বলেন, ‘সরকারই ইলিয়াস আলীকে আটকে রেখে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
তবে গুঞ্জন আর রাজনীতির জটিল সমীকরণের নানা প্রচার-অপপ্রচারের ডালপালা যতই বি¯তৃত হোক, এসব কিছু পেছনে ফেলে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে সরকারের প্রতি সাধারণের দাবিই এখন সোচ্চার কণ্ঠে ধ্বণিত হচ্ছে দেশজুড়ে। কেবল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী আর তিন সন্তান নন, কেবল বিএনপির নেতাকর্মীরাই নন, ইলিয়াস আলীর জন্য উদ্বিগ্ন এখন পুরো দেশ।
আমাদের সামনে মুখ ব্যাদান করে থাকা জটিল প্রশ্নের মত সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু ‘গুম’ আর ‘নিখোঁজের’ কান্নাভেজা উদাহরণ পেছনে ফেলে সদাপ্রাণবন্ত ইলিয়াস আলী আবার ফিরবেন...তার আপন ঘরে, প্রিয়তমা স্ত্রী আর আদরের সন্তানদের কাছে, নেতাকর্মীদের কাছে- এ আশা সবার।
বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলীর খোঁজ চেয়ে বিএনপির ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় স্বারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সাক্ষাত শেষে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, ইলিয়াস আলীর ঘটনায় সরকার বিব্রত।
তবে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার ধারাহিকতায় এসবই পুরনো খবর।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইলিয়াস আলী রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার ঘটনায় তার ‘খোঁজ মেলা’ সংক্রান্ত কোনও খবর দিতে পারেননি সরকার; সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনী।
এ বিষয়ে ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার পর র্যাব-পুলিশসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউই ইলিয়াস আলীর অবস্থান সম্পর্কে নুন্যতম কোন ধারনাও দিতে পারেননি।
অপরদিকে, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যদের কান্নার রোল থামছে না। সর্বশেষ আলাপকালে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘উনার কোনও খোঁজ আমরা পাইনি। থানা-হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই তার খোঁজ নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, তিনি যেন আমার স্বামীর, আমার অবুঝ তিন সন্তানের পিতার অন্তত খোঁজটি দেন।’
ইলিয়াস আলীর তিন সন্তান আবরার ইলিয়াস অর্নব, লাবিব সাহার ও একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাউয়ালের কান্না সংক্রমিত করছে আশপাশের মানুষকেও।
ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংঘঠনিক সম্পাদক। বৃহত্তর সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচাইতে প্রভাবশালী ও আলোচিত নেতা। ৩২ বছরের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ নেতা ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যোগ দেন। নানা চড়াৎ উৎরাই পেরিয়ে ‘সিলেটী’ এ নেতা ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সন্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
ইলিয়াস আলী গত জোট সরকারের আমলে সিলেটের বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের এমপি থাকা অবস্থায় তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে দেশজুড়ে আলোচনার তুঙ্গে উঠে আসেন। তার নানা কর্মকাণ্ডে সংক্ষুব্ধ সাইফুর রহমান একপর্যায়ে অভিমানে রাজনীতি থেকে অবসরে যাবার ঘোষনা দেন। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে সাইফুর রহমান সিদ্বান্ত থেকে সরে আসেন।
বিগত ১/১১ পরবর্তী সময়ে সিলেট বিএনপির কর্তৃত্ব নিয়ে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় সাইফুর রহমান অনুসারীদের। একপর্যায়ে সিলেট বিএনপির একচ্ছত্র নেতৃত্ব নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রয়াত সভাপতি কমর উদ্দীনের সঙ্গেও প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় ইলিয়াস আলীর। এরপর কমর উদ্দীনের মৃত্যুর পর সিলেট বিভাগে বিএনপির একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আভিভূর্ত হন ইলিয়াস।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরেক সিলেটী নেতা শমশের মবিন চৌধুরীর সঙ্গেও নানা ইস্যুতে শীতল সম্পর্ক সৃষ্টি হয় ইলিয়াস আলীর। নিজের রাজনৈতিক জীবনে সব সময়েই আলোচনা আর সমালোচনার তুঙ্গে থাকা এ নেতার নিজের নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের পাশাপাশি সিলেট বিভাগজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে আলাদা ইমেজ। সাহসী সংগঠক হিসেবে সিলেটে ছাত্রদল ও যুবদলের তরুণ নেতাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার ঘটনায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
আমার ৬ বছরের ক্ষুদ্র এ সাংবাদিকতা জীবনে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ইলিয়াস আলীকে। আমি তাকে যতটুকু দেখেছি, রাগী আর একগুঁয়ে হলেও একইসঙ্গে নিবেদিতপ্রাণ আর কর্মীঅন্তঃপ্রাণ মানুষ ইলিয়াস আলী। ব্যক্তিজীবনে ধার্মিক।
সহসাই ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ রহস্যকে ঘিরে রাজনীতির লাভ-ক্ষতির নানা জটিল-কুটিল বিচার বিশ্লেষণ নিয়ে সিলেট এখন সরগরম। তবে এ ইস্যুকে নিয়ে এখনও ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারছে না সিলেট বিএনপির ইলিয়াস সমর্থিত আর বিরোধী বলয়। বৃহস্পতিবারের হরতালেও সিলেট নগরীতে ইলিয়াস সমর্থক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান আর ইলিয়াস বিরোধী ডা. শাহরিয়ারের সমর্থকরা আলাদা অবস্থান নেয়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট বিএনপির দীর্ঘদিনের গ্রপিং রাজনীতিতেও অনেকটা বেকায়দায় ছিলেন ইলিয়াস আলী।
গত ২২ মার্চ সিলেটের উপশহর এলাকায় খুন হন ছাত্রদলের মীরাবাজার গ্রুপের কর্মী মাহমুদ হোসেন শওকত। তখন এ খুনের ঘটনায় ছাত্রদলের উপশহর গ্রুপের শীর্ষনেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দিনারকে প্রধান আসামি করে মামলাও করে শওকতের পরিবার। এরপর থেকে দিনার পুলিশের খাতায় পলাতক। তবে সত্যিকারার্থে দিনার গত ৩ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছে পরিবার। এসময় দিনারের সাথে থাকা আরেক ছাত্রদল কর্মীও নিখোঁজ হন।
আর এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভক্তি আর ফাটলের সৃষ্টি হয় সিলেট বিএনপির ইলিয়াস আলীর নিজ গ্রুপেও। খুন হওয়া শওকত ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত সিলেট ছাত্রদলের মিরাবাজার উপগ্রুপের কর্মী এবং অভিযুক্ত দিনার ছাত্রদলের উপশহর গ্রুপের শীর্ষ নেতা। আর এ দুটি উপগ্রুপই ইলিয়াস আলীর অনুসারী। শওকত হত্যার পরদিন ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান জামানের মালিকানাধীন দৈনিক শ্যামল সিলেটে শওকত হত্যার জন্য ছাত্রদল নেতা দিনারকে দায়ী করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে শামছুজ্জামান জামানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও দায়ের করেন দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন। এরপর দিনার নিখোঁজ হবার পরদিন দিনারের স্ত্রী, মা ও শ্বশুর সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার সিলেটে সংবাদ সমন্মেলন করে অভিযোগ করেন, ছাত্রদল কর্মী শওকতকে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত দিনার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে ঢাকায় গেলে আইনশৃংখলা বাহিনী উত্তরা এলাকা থেকে তাকে আটক করে।
অপরদিকে, দিনারের স্ত্রী জামানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করলে প্রকট হয়ে উঠে ছাত্রদলের মিরাবাজার ও উপশহর উপগ্রুপের দ্বন্দ্ব। নিজের গ্রুপ নিয়ে বেকায়দায় পড়েন ইলিয়াস আলী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৈঠক ডাকেন ইলিয়াস আলী। কিন্তু ইলিয়াস পরপর তিনটি বৈঠক ডাকলেও সিনিয়র নেতাদের কেউই তাতে অংশগ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আরো জটিলতর হয়।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকায় ইলিয়াস আলী একটি সমাবেশ করতে চাইলে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি আহবান করে। পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন নিষেধাঞ্জা জারি করায় সমাবেশ করতে পারেননি ইলিয়াস আলী।
আর দিনার নিখোঁজ হবার পর গত ৬ এপ্রিল সংবাদ সন্মেলন করে ইলিয়াস আলী বলেন, ‘বিএনপি নেতারা তাদের নিজস্ব সোর্সে নিশ্চিত হয়েছেন দিনারকে র্যাব-১ এর সদস্যরা আটক করেছে। অথচ র্যাব দিনারকে আটকের সত্যতা স্বীকার করছে না আবার অস্বীকারও করছে না।’
এদিকে দিনার ও দিনারের সঙ্গে থাকা অপর ছাত্রদল কর্মী জুনেদের কোন খোঁজ মেলেনি বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ূয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, দিনার ও জুনেদের খোঁজ পেতে ঢাকায় পুলিশের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ দু’জনের নিখোঁজ হবার ব্যাপারে সুনির্র্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এটি হয়ত নিতান্তই একটি বিছিন্ন ঘটনা। হয়তোবা এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই ইলিয়াস আলীর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার। তবুও আরেকটি বিছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করছি।
গত ৬ এপ্রিল মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজের অদূরে ছাত্রদল পরিচয়ে একদল যুবক আটক করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট বিএনপির আরেক আলোচিত নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িটি। জানা গেছে, নিছক পারিবারিক সফরেই মৌলভীবাজার এসেছিলেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ মুকিত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কি কারণে তারা আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িটি আটক করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ওই যুবকরা ছাত্রদলের কর্মী নয় বলে দাবি করেছেন মৌলভীবাজার বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার হারুন ওর রশিদ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়িতে হামলার চেষ্টাকারীদের দু’টি মোটরসাইকেল মৌলভীবাজার থানা পুলিশ আটক করেছে। মোটরসাইকেল দু’টি এখনও মৌলভীবাজার থানায় আটক রয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনার ৬ দিনেও আরিফুল হক চৌধুরী কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
তবে এ ঘটনার ব্যাপারে বুধবার দফায় দফায় যোগাযোগ করেও আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, ইলিয়াস আলী আটক নাকি আত্মগোপনে- সিলেটের বিভিন্ন মহলে এমন গুঞ্জন আর ইলিয়াস আলীকে ঘিরে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি পক্ষ। এরমধ্যে ইলিয়াস আলীকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরেই অপহরণ করা হয়েছে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সবসময়ই নিজেকে আলোচনা আর সমালোচনার তুঙ্গে রাখা এ নেতা নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে নিজেই আত্মগোপন করেছেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে খোদ ফেসবুকেও। তবে শাষকদলই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
প্রসঙ্গত, ‘বিএনপি নেতা ইলিয়াছ দেশে না বিদেশে?’ শীর্ষক একটি সংবাদ কয়েকমাস আগে ইলিয়াস আলীর একান্ত সচিবের উদ্বৃতি দিয়ে বাংলানিউজে এবং পরে একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১১ ডিসেম্বর ২০১১ সালে প্রকাশিত ওই নিউজের প্রতিবাদে পরদিন ইলিয়াস আলীর দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারটিও প্রকাশ করে বাংলানিউজ ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে: ইলিয়াস আলী’ শিরোনামে। (নিউজ দু’টির লিঙ্ক নিচে দেওয়া হলো)
(পরবর্তীতে জানা যায়, কাউকে না জানিয়ে ইলিয়াস ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’ দেশের বাইরে ছিলেন।)
এদিকে, ইলিয়াস নিখোঁজের বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শমশের মবিন চৌধুরীর দৃষ্টি আর্কষণ করলে বুধবার তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তখন হয়তো কেউ ভুল সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ইলিয়াস আলীর মতো একজন কেন্দ্রীয় নেতা নিখোঁজ হবার ঘটনা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। এমন ক্রান্তিকালেও ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার ঘটনাকে কেন্দ্র যেসব অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে সেসব ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদ জানাই।’
বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নতুন একটি ইস্যু সৃষ্টি করে সুরঞ্জিতের ঘটনা আড়াল করতে সরকারই ইলিয়াস আলীকে আটক করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রব্বানী আলাপকালে বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর দ্রুত খোঁজ না দিতে পারলে এ সরকারের চূড়ান্ত বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে। ইলিয়াস আলীর জন্য শুধু বিএনপি নয়, সারা সিলেটের তথা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন গত বুধবার ফোনে বলেন, ‘সরকারই ইলিয়াস আলীকে আটকে রেখে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
তবে গুঞ্জন আর রাজনীতির জটিল সমীকরণের নানা প্রচার-অপপ্রচারের ডালপালা যতই বি¯তৃত হোক, এসব কিছু পেছনে ফেলে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে সরকারের প্রতি সাধারণের দাবিই এখন সোচ্চার কণ্ঠে ধ্বণিত হচ্ছে দেশজুড়ে। কেবল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী আর তিন সন্তান নন, কেবল বিএনপির নেতাকর্মীরাই নন, ইলিয়াস আলীর জন্য উদ্বিগ্ন এখন পুরো দেশ।
আমাদের সামনে মুখ ব্যাদান করে থাকা জটিল প্রশ্নের মত সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু ‘গুম’ আর ‘নিখোঁজের’ কান্নাভেজা উদাহরণ পেছনে ফেলে সদাপ্রাণবন্ত ইলিয়াস আলী আবার ফিরবেন...তার আপন ঘরে, প্রিয়তমা স্ত্রী আর আদরের সন্তানদের কাছে, নেতাকর্মীদের কাছে- এ আশা সবার।
No comments