সুভাষ বহরা-চীন ও ভারতের এগিয়ে যাওয়া

পৃথিবীর ৪০ শতাংশ মানুষ বাস করে ভারত ও চীনে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশ দুটি বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এশিয়ার দেশ দুটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি কারণ তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন এবং তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত নীতিমালা। চীন বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ। চীনের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি।


তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বছরে ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত একটি দেশ, যার মাথাপিছু আয় ৪৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। এদিকে ভারতের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার ও চীনের মাথাপিছু আয় সাত হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদ পিটার পি বটলেয়ারের মতে, দেশ দুটি পৃথিবীর সেরা অর্থনৈতিক উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ঠিক, তবে এর জন্য আরো কয়েক দশক সময় লাগবে। ভারত বিশ্বের সেরা গণতান্ত্রিক দেশ। অন্যদিকে চীন এখনো কমিউনিস্টশাসিত দেশ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রণব বর্ধন বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে তখনই বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করে যখন সেই দেশের শাসক শ্রেণীর কাছ থেকে ব্যবসাবান্ধব আচরণ তারা পায়। এটা নিশ্চিত, ভারতে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকার কারণে সংগত কারণেই সে সুযোগ তারা পেয়ে থাকে। অধ্যাপক বর্ধনের মতে, চীনেও ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অনেকাংশে উদার ভূমিকা পালন করা হয়ে থাকে। তার মানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু গণতান্ত্রিক পরিবেশকেই প্রাধান্য দেয় না; তারা ওই জায়গায়ই যেতে বেশি উৎসাহ বোধ করে, যেখানে অধিক অর্থ রোজগার করা সম্ভব। ভারতের দিলি্ল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক ড. পামি ডোয়ারের মতে, চীনের পূর্ব দিকের কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হওয়ার কারণেও দেশটি বাণিজ্য সুবিধা পেয়েছে। নিকটবর্তী কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে জাপান, তাইওয়ান, হংকং, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর চীনে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে উন্নত প্রযুক্তি-সুবিধা এবং বিশেষজ্ঞদের সুবিধাগুলো তাদের সেখানে যেতে উৎসাহী করেছে। কিন্তু ভারতের নিকট প্রতিবেশী দেশগুলো সেদিক থেকে তেমন গতিশীল নয়। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল প্রভৃতি দেশ তার নিকট প্রতিবেশী। তারা ভারতের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পেরেছে কমই।
অধ্যাপক বটলেয়ার মনে করেন, চীন ও ভারত আবার কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়েছে। উভয় দেশেই বিশেষ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উভয় দেশই ৯ থেকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। দেশ দুটির সামনে এটিই চ্যালেঞ্জ নয়। চীনের প্রবৃদ্ধি অধিক মাত্রায় বাড়ছে মূলত তাদের ওখানে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে উদারনীতি গ্রহণ করায়। কিছু অর্থনীতিবিদ আবার মনে করেন, ভারত বিশ্বায়ন বাসের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছানো একটু কষ্টকর হবে বৈকি। ভারতের সামনে তাদের অবকাঠামোগত ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি চ্যালেঞ্জ বলে গণ্য। তাদের জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করার ব্যাপারটিও আছে। সেখানে শ্রমব্যবস্থারও সংস্কার প্রয়োজন। চীনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার সফটওয়্যারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া। চীনের মানুষের ইংরেজি ব্যবহারে অনীহার ব্যাপারটিও এখানে উল্লেখ করা যায়। চীনের কিছু বাড়তি সুবিধাও আছে, যা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে জনশক্তির বিষয়টি আলোচ্য। একই যোগ্যতাসম্পন্ন একজন শ্রমিক চীনে যে পারিশ্রমিকে কাজ করে, ভারতে তা সম্ভব নয়।
১৯৬২ সালের সীমান্তযুদ্ধ শেষ করে দেশ দুটি বহু দূর এগিয়ে গেছে। দেশ দুটি শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই এগিয়ে যায়নি, তারা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সবার আগে উল্লেখ করতে হবে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও গত নভেম্বরে ভারতে সরকারি সফরে আসার পর দেশ দুটির সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ১৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পেঁৗছেছে। তারা এই লেনদেনকে দ্বিগুণ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আরেকটি সংশয়ও কাজ করছে। তাদের ধারণা, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান তা কি চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে? তবে পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে চীনকে তেমন উচ্চবাচ্য করতে শোনা যাচ্ছে না। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্ট যখন ভারত সফর করেছেন তখনো এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি।
লেখক : সাংবাদিক
ভিওএ থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.