নাব্য সঙ্কটে নৌপরিবহন বিপর্যস্তঃ নদীমাতৃক দেশ নদীশূন্য হতে চলেছে
উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, এক সময়ের প্রমত্তা যমুনা নদীতে নাব্য সঙ্কট দেখা দেয়ায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দর অচল হয়ে পড়েছে। বিশাল ব্রহ্মপুত্র নদে চর জেগে ওঠায় অসংখ্য সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। করতোয়া এখন ময়লা-আবর্জনার ড্রেন।
গতকালের আমার দেশ-এ প্রকাশিত এসব খবরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকার পাতায় মরা নদীর ছবি ছাপা হচ্ছে। নাব্য হারিয়ে নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার খবর পড়তে হচ্ছে। এসবই ভবিষ্যত্ নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ-আতঙ্ক সৃষ্টি না করে পারে না।
বাংলাদেশের মানচিত্রের বুক চিরে প্রবাহিত বিশাল যমুনা নদীর পানি প্রবাহ এখন এমনভাবে কমে গেছে যে, গত ১০-১৫ দিন ধরে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়তে পারছে না। জ্বালানি তেল, সার, ক্লিংকারসহ নানা পণ্য নিয়ে ২৭টি নৌযান আটকে আছে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে। ফলে বাঘাবাড়ী ডিপো তেলশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখান থেকেই উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় দৈনিক প্রায় ২৭ লাখ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়, যা থেকে সেচের জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২২ লাখ লিটার ডিজেলের চাহিদা মেটানো হয়। জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিলে উত্তরাঞ্চলের সেচনির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে সারের সঙ্কট দেখা দেয়াও অস্বাভাবিক নয়। অথচ যমুনার নাব্য ঠিক রাখতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গত বছরই ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এতে পরিস্থিতির যে বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি সেটা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি বেড়া ও মানিকগঞ্জ এলাকায় ড্রেজিং করে বালি অপসারণ করা সত্ত্বেও কোনো লাভ হয়নি। ঠিকাদারকে দেয়া কয়েক কোটি টাকা পানিতে ঢালতে হয়েছে। পরিকল্পিত ড্রেজিং ছাড়া এভাবে টাকা খরচ সংশ্লিষ্টদের লুটপাটকেই সহায়তা করে। ড্রেজিংয়ের অভাবে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রের মরে যাওয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থলে প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কমপক্ষে ২০ ফুট পলি জমেছে। এভাবে স্রোতহীন ব্রহ্মপুত্রের বুকে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদী তীরবর্তী ৫০ হাজার একর জমির চাষাবাদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ মাইল দূরত্বের দুই পাড়বিশিষ্ট ব্রহ্মপুত্র এভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় দুই তীরের লাখ লাখ মানুষের স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হলেও দেখার কেউ নেই। একই অবস্থা রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের। এই উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড়াল, করতোয়া, হুড়াসাগর, গোহালা, ছোটধলাই, ধলাই, কাকিয়ানমারী, সুতিখালী নদীও এখন মৃত। পলি ও বালি পড়ে অসংখ্য চরে আটকে গেছে পানি প্রবাহ। নৌ যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি ও পরিবহন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সেচ সঙ্কটের মুখে পড়েছে এলাকাবাসী। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই নদ-নদী মরে যাওয়ার উদ্বেগজনক খবর যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানাভাবে প্রভাবশালীদের দখল, দূষণ ও পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো দখলমুক্ত করে নিয়মিত খনন ও ড্রেজিংয়ের আওতায় না আনার কারণই শুধু এ দুরবস্থার জন্য দায়ী নয়, সীমান্তের ওপার থেকে আসা নদীগুলোর ক্ষেত্রে উজানে পানি প্রত্যাহারও এর পেছনে কাজ করেছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির ১৪তম বছর, এবারও পদ্মায় পানি কম পাওয়া গেছে ৮-১০ হাজার কিউসেক। এভাবে ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম বছর ছাড়া সব বছরই বাংলাদেশকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে ভারত। ফলে পদ্মা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল, বিল, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মরুকরণের শিকার হয়েছে। তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীতে বাঁধ দেয়ার খবরও নতুন নয়। এভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছে বলা যাবে না।
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে রাজপথের প্রতিটি মিছিল ‘তোমার আমার ঠিকানা—পদ্মা মেঘনা যমুনা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠত। এখন আমরা সেই ঠিকানা হারাতে বসেছি। সীমান্তের ওপারে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারে স্বাভাবিক প্রবাহ হারাচ্ছে নদী। পলি পড়ছে দ্রুত। মরে যাচ্ছে শাখা নদীগুলো। আর প্রভাবশালীদের হাতে দখল, দূষণ, বর্জ্যে ভরাট হয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। নদ-নদীর এই দেশ স্বাধীনতা লাভের পর এভাবে নদীশূন্য হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এটা কে ভাবতে পেরেছিল! এ থেকে উদ্ধার লাভের বিষয়টি অতীতমুখী সরকারের কাছে গুরুত্ব পাবে কি?
বাংলাদেশের মানচিত্রের বুক চিরে প্রবাহিত বিশাল যমুনা নদীর পানি প্রবাহ এখন এমনভাবে কমে গেছে যে, গত ১০-১৫ দিন ধরে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়তে পারছে না। জ্বালানি তেল, সার, ক্লিংকারসহ নানা পণ্য নিয়ে ২৭টি নৌযান আটকে আছে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে। ফলে বাঘাবাড়ী ডিপো তেলশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখান থেকেই উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় দৈনিক প্রায় ২৭ লাখ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়, যা থেকে সেচের জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২২ লাখ লিটার ডিজেলের চাহিদা মেটানো হয়। জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিলে উত্তরাঞ্চলের সেচনির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে সারের সঙ্কট দেখা দেয়াও অস্বাভাবিক নয়। অথচ যমুনার নাব্য ঠিক রাখতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গত বছরই ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এতে পরিস্থিতির যে বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি সেটা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি বেড়া ও মানিকগঞ্জ এলাকায় ড্রেজিং করে বালি অপসারণ করা সত্ত্বেও কোনো লাভ হয়নি। ঠিকাদারকে দেয়া কয়েক কোটি টাকা পানিতে ঢালতে হয়েছে। পরিকল্পিত ড্রেজিং ছাড়া এভাবে টাকা খরচ সংশ্লিষ্টদের লুটপাটকেই সহায়তা করে। ড্রেজিংয়ের অভাবে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রের মরে যাওয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থলে প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কমপক্ষে ২০ ফুট পলি জমেছে। এভাবে স্রোতহীন ব্রহ্মপুত্রের বুকে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদী তীরবর্তী ৫০ হাজার একর জমির চাষাবাদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ মাইল দূরত্বের দুই পাড়বিশিষ্ট ব্রহ্মপুত্র এভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় দুই তীরের লাখ লাখ মানুষের স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হলেও দেখার কেউ নেই। একই অবস্থা রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের। এই উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড়াল, করতোয়া, হুড়াসাগর, গোহালা, ছোটধলাই, ধলাই, কাকিয়ানমারী, সুতিখালী নদীও এখন মৃত। পলি ও বালি পড়ে অসংখ্য চরে আটকে গেছে পানি প্রবাহ। নৌ যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি ও পরিবহন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সেচ সঙ্কটের মুখে পড়েছে এলাকাবাসী। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই নদ-নদী মরে যাওয়ার উদ্বেগজনক খবর যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানাভাবে প্রভাবশালীদের দখল, দূষণ ও পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো দখলমুক্ত করে নিয়মিত খনন ও ড্রেজিংয়ের আওতায় না আনার কারণই শুধু এ দুরবস্থার জন্য দায়ী নয়, সীমান্তের ওপার থেকে আসা নদীগুলোর ক্ষেত্রে উজানে পানি প্রত্যাহারও এর পেছনে কাজ করেছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির ১৪তম বছর, এবারও পদ্মায় পানি কম পাওয়া গেছে ৮-১০ হাজার কিউসেক। এভাবে ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম বছর ছাড়া সব বছরই বাংলাদেশকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে ভারত। ফলে পদ্মা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল, বিল, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মরুকরণের শিকার হয়েছে। তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীতে বাঁধ দেয়ার খবরও নতুন নয়। এভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছে বলা যাবে না।
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে রাজপথের প্রতিটি মিছিল ‘তোমার আমার ঠিকানা—পদ্মা মেঘনা যমুনা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠত। এখন আমরা সেই ঠিকানা হারাতে বসেছি। সীমান্তের ওপারে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারে স্বাভাবিক প্রবাহ হারাচ্ছে নদী। পলি পড়ছে দ্রুত। মরে যাচ্ছে শাখা নদীগুলো। আর প্রভাবশালীদের হাতে দখল, দূষণ, বর্জ্যে ভরাট হয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। নদ-নদীর এই দেশ স্বাধীনতা লাভের পর এভাবে নদীশূন্য হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এটা কে ভাবতে পেরেছিল! এ থেকে উদ্ধার লাভের বিষয়টি অতীতমুখী সরকারের কাছে গুরুত্ব পাবে কি?
No comments