এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না-রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা

অতিঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এই মহানগর ঢাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পয়োবর্জ্য। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার ঘনমিটার সঠিক পদ্ধতিতে পয়ঃশোধনাগারে পৌঁছে শোধন হয়। ৭০ শতাংশ পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পৌঁছানোর বা শোধন করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তা হলে এই বিপুল পরিমাণ পয়োবর্জ্য কোথায় যায়? কী ঘটে তার ফলে?


মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনটিতে যে বিবরণ পাওয়া গেল, তা এককথায় মারাত্মক। পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকার ঘরবাড়ির পয়োনিষ্কাশনের নিজস্ব লাইনগুলো জুড়ে দেওয়া হয়েছে ওয়াসার পানিনিষ্কাশনের লাইনের সঙ্গে, ওয়াসার পানিনিষ্কাশনের লাইন গিয়ে পড়েছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। ফলে সে এলাকার ওই সব ঘরবাড়ির মনুষ্যবর্জ্য গিয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। একই প্রক্রিয়ায় পয়োবর্জ্যে দূষিত হচ্ছে বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদী—ঢাকার চারপাশের অমূল্য প্রাকৃতিক স্রোতস্বিনীগুলো।
রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থার এই বিপর্যয়-দশা কেন? দৃশ্যত মনে হচ্ছে এদিকে কখনোই কোনো কর্তৃপক্ষের বিশেষ মনোযোগ ছিল না। গত এক যুগে ঢাকার জনসংখ্যা যতই বাড়ুক, পয়োনিষ্কাশন লাইন বাড়েনি এক ইঞ্চিও। নব্বইয়ের দশকের এক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, এই মহানগরে মোট পয়োনিষ্কাশন লাইন প্রয়োজন তিন হাজার ১৫৫ কিলোমিটার। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে মাত্র ৬৩১ কিলোমিটার। বিষয়টির প্রতি যে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি, তার প্রমাণ হলো এই ২০১১ সালেও মোট পয়োনিষ্কাশন লাইন রয়ে গেছে ৬৩১ কিলোমিটার। অর্থাৎ জনসংখ্যা ও পয়োবর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে, আর নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গিয়েছে কমে।
পয়োবর্জ্য শোধনের ব্যবস্থাও সামান্য। পাগলায় অবস্থিত ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারে শোধন হতে পারে দৈনিক ৩৫ থেকে ৫০ হাজার ঘনমিটার পয়োবর্জ্য, যা মোট উৎপন্ন পয়োবর্জ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ। উপরন্তু শোধনাগারের মোট শোধনক্ষমতার অর্ধেক অকেজো।
এভাবে আর চলতে পারে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে, মাটির নিচের বর্জ্য থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত চাপের ফলে নিষ্কাশন লাইনে বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বাড়ছে। অবিলম্বে এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। পয়োনিষ্কাশন লাইন বাড়ানো, নতুন পয়ঃশোধনাগার স্থাপনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে রাজধানী ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.