অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও খুনি ধরা পড়েনি-২৭ মাসে ১০০ ‘নিখোঁজ by গোলাম মর্তুজা
তদন্ত চলছে’, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি’ তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ কথা শুনতে শুনতে দিন পার করছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। নিখোঁজ হওয়ার পর অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। যাদের লাশও পাওয়া যায়নি, তাদের স্বজনেরা এখনো খুঁজছে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৭ মাস ১৯ দিনে সারা দেশে ১০০ ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ এবং ১৩টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য বের করা হয়েছে। এই ১০০ জনের মধ্যে ২১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭৬ জনের কোনো খোঁজ নেই।
প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শুধু ঢাকা শহর থেকেই ৩০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের লাশ পাওয়া যায় গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, আশুলিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও সাভার থানা এলাকায়। দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন এখনো নিখোঁজ। পরিবারের শঙ্কা, এঁরা সবাই গুপ্তহত্যার শিকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘সব অপহরণ ঘটনারই তদন্ত চলছে।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ও ‘গুপ্তহত্যা’র অভিযোগ ওঠা কিছু মামলা ডিবির কাছে এসেছে। এর কয়েকটি অধিকতর তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো সিআইডির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদারকে (৫০) ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এখনো তাঁর খোঁজ মেলেনি। করিমের স্ত্রী নাসিমা আক্তার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুঝতে পারছেন, কী পরিস্থিতিতে আছি আমরা। ছয়টা মাস বুকে পাথর বেঁধে বসে আছি। লোকটা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তা-ও জানি না। বাচ্চাগুলাকে সান্ত্বনা দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, মামলার তদন্তভার যখন থানা থেকে ডিবিতে গেল, তখন তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে ডিবির কর্মকর্তারা বলেই যাচ্ছেন যে তাঁরা চেষ্টা করছেন।
গত ২৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে আল আমিন ও মাসুম হোসেন নামে তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে পুলিশ দুটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। এর একটি লাশ ইসমাইলের বলে তাঁর স্বজনেরা বাসায় নিয়ে গেছে। বাকি দুজনের খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ শামীমের ভাই সাইমুন ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ, র্যাব, নেতা, মন্ত্রী, সাংবাদিক—সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ভাইয়ের কোনো খোঁজই পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর মালিবাগ থেকে অপহূত হন একসঙ্গে সাতজন। এঁদের পাঁচজন ওই দিন সকালে ভোলার বোরহানউদ্দীন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়। ধরে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মো. মিরাজ ও শেখ সাদী নামের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ১০ দিন পর আশুলিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার হয় এঁদের একজন জসীমউদ্দীনের লাশ। বাকিরা এখনো নিখোঁজ। জসীমউদ্দীনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেন, ভাইয়ের লাশ পাওয়ায় তাঁরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া মিরাজ এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। এজাহারে মিরাজ উল্লেখ করেন, অপহরণকারীরা তাঁর মামাতো ভাই আকাশের ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায়। ওই কার্ডের গোপন শনাক্তকরণ নম্বর নিয়ে মৌচাক-শান্তিনগর এলাকার যেকোনো একটি বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিরপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন চার ভাসমান ব্যবসায়ী কালাম শেখ (৪০), তাঁর মামাতো ভাই আবুল বাশার শেখ (৩২), আবদুর রহিম (৪০) ও যাত্রাবাড়ীর আতাউর রহমান ওরফে ইস্রাফিল। ইস্রাফিলের শ্যালক কামরুল হাসান গতকাল বলেন, এই চারজনেরও খোঁজ মেলেনি।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ফেনীর সোনাগাজীর যুবলীগের নেতা সারোয়ার জাহানকে। তাঁরও খোঁজ নেই বলে গতকাল জানিয়েছেন তাঁর ভাই আবদুর রহিম।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টন লাইনে বাসার নিচ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা কে এম শামীম আকতারকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তাঁর পরিবারের শঙ্কা, শামীম গুপ্তহত্যার শিকার।
শামীমের স্ত্রী ঝর্ণা খানম গতকাল বলেন, ‘আমরা তো অনেক দৌড়ালাম। শামীম বেঁচে আছে না মরে গেছে, এখন আমরা শুধু সেই তথ্যটা জানতে চাই। কিন্তু আমাদের মামলার কোনো গুরুত্বই নেই।’
গত বছরের ২০ অক্টোবর সাভার থেকে নিখোঁজ হন রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ওরফে নূর হাজি। এরপর ৩ ডিসেম্বর শ্যামলী থেকে নিখোঁজ হন তাঁর জামাতা আবদুল মান্নান। মান্নানের সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন ইকবাল নামের আরেকজন। নূর হাজির আরেক জামাতা জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেন, এঁদের কাউকেই এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।
লাশ মিলেছে, খুনি মেলেনি: অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও এসব ঘটনার কোনোটিরই সুরাহা হয়নি। ধরা পড়েনি খুনি।
গত ৩১ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দেওয়া সশস্ত্র ব্যক্তিরা দয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় জুয়েল সরদার, রাজীব সরদার ও মিজানুর হোসেন নামের তিন তরুণকে। জুয়েল ও রাজীব সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এর পাঁচ দিন পর ঢাকা বাইপাসের পাশে গাজীপুরের পুবাইলে পাওয়া যায় জুয়েল আর মিজানের লাশ। রাজীবের লাশ মেলে ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে সিরাজদীখানের নিমতলীতে। তিনজনেরই হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর আগে ৪ জুলাই টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে সজল ও ইমরান নামে দুই তরুণকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত সশস্ত্ররা। প্রায় আট দিন পর ১২ জুলাই সজলের লাশ পাওয়া যায় ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে সমর সিংহ গ্রামে। পরদিন ১৩ জুলাই ইমরানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ার একটি ইটভাটায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ: সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ একের পর এক এ ধরনের রহস্যজনক নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার রহস্য উম্মোচন হচ্ছে না, যা সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি বিকাশের জন্য একটি হুমকি। সকল নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শুধু ঢাকা শহর থেকেই ৩০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের লাশ পাওয়া যায় গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, আশুলিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও সাভার থানা এলাকায়। দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন এখনো নিখোঁজ। পরিবারের শঙ্কা, এঁরা সবাই গুপ্তহত্যার শিকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘সব অপহরণ ঘটনারই তদন্ত চলছে।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ও ‘গুপ্তহত্যা’র অভিযোগ ওঠা কিছু মামলা ডিবির কাছে এসেছে। এর কয়েকটি অধিকতর তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো সিআইডির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদারকে (৫০) ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এখনো তাঁর খোঁজ মেলেনি। করিমের স্ত্রী নাসিমা আক্তার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুঝতে পারছেন, কী পরিস্থিতিতে আছি আমরা। ছয়টা মাস বুকে পাথর বেঁধে বসে আছি। লোকটা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তা-ও জানি না। বাচ্চাগুলাকে সান্ত্বনা দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, মামলার তদন্তভার যখন থানা থেকে ডিবিতে গেল, তখন তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে ডিবির কর্মকর্তারা বলেই যাচ্ছেন যে তাঁরা চেষ্টা করছেন।
গত ২৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে আল আমিন ও মাসুম হোসেন নামে তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে পুলিশ দুটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। এর একটি লাশ ইসমাইলের বলে তাঁর স্বজনেরা বাসায় নিয়ে গেছে। বাকি দুজনের খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ শামীমের ভাই সাইমুন ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ, র্যাব, নেতা, মন্ত্রী, সাংবাদিক—সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ভাইয়ের কোনো খোঁজই পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর মালিবাগ থেকে অপহূত হন একসঙ্গে সাতজন। এঁদের পাঁচজন ওই দিন সকালে ভোলার বোরহানউদ্দীন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়। ধরে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মো. মিরাজ ও শেখ সাদী নামের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ১০ দিন পর আশুলিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার হয় এঁদের একজন জসীমউদ্দীনের লাশ। বাকিরা এখনো নিখোঁজ। জসীমউদ্দীনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেন, ভাইয়ের লাশ পাওয়ায় তাঁরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া মিরাজ এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। এজাহারে মিরাজ উল্লেখ করেন, অপহরণকারীরা তাঁর মামাতো ভাই আকাশের ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায়। ওই কার্ডের গোপন শনাক্তকরণ নম্বর নিয়ে মৌচাক-শান্তিনগর এলাকার যেকোনো একটি বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিরপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন চার ভাসমান ব্যবসায়ী কালাম শেখ (৪০), তাঁর মামাতো ভাই আবুল বাশার শেখ (৩২), আবদুর রহিম (৪০) ও যাত্রাবাড়ীর আতাউর রহমান ওরফে ইস্রাফিল। ইস্রাফিলের শ্যালক কামরুল হাসান গতকাল বলেন, এই চারজনেরও খোঁজ মেলেনি।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ফেনীর সোনাগাজীর যুবলীগের নেতা সারোয়ার জাহানকে। তাঁরও খোঁজ নেই বলে গতকাল জানিয়েছেন তাঁর ভাই আবদুর রহিম।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টন লাইনে বাসার নিচ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা কে এম শামীম আকতারকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তাঁর পরিবারের শঙ্কা, শামীম গুপ্তহত্যার শিকার।
শামীমের স্ত্রী ঝর্ণা খানম গতকাল বলেন, ‘আমরা তো অনেক দৌড়ালাম। শামীম বেঁচে আছে না মরে গেছে, এখন আমরা শুধু সেই তথ্যটা জানতে চাই। কিন্তু আমাদের মামলার কোনো গুরুত্বই নেই।’
গত বছরের ২০ অক্টোবর সাভার থেকে নিখোঁজ হন রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ওরফে নূর হাজি। এরপর ৩ ডিসেম্বর শ্যামলী থেকে নিখোঁজ হন তাঁর জামাতা আবদুল মান্নান। মান্নানের সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন ইকবাল নামের আরেকজন। নূর হাজির আরেক জামাতা জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেন, এঁদের কাউকেই এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।
লাশ মিলেছে, খুনি মেলেনি: অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও এসব ঘটনার কোনোটিরই সুরাহা হয়নি। ধরা পড়েনি খুনি।
গত ৩১ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দেওয়া সশস্ত্র ব্যক্তিরা দয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় জুয়েল সরদার, রাজীব সরদার ও মিজানুর হোসেন নামের তিন তরুণকে। জুয়েল ও রাজীব সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এর পাঁচ দিন পর ঢাকা বাইপাসের পাশে গাজীপুরের পুবাইলে পাওয়া যায় জুয়েল আর মিজানের লাশ। রাজীবের লাশ মেলে ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে সিরাজদীখানের নিমতলীতে। তিনজনেরই হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর আগে ৪ জুলাই টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে সজল ও ইমরান নামে দুই তরুণকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত সশস্ত্ররা। প্রায় আট দিন পর ১২ জুলাই সজলের লাশ পাওয়া যায় ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে সমর সিংহ গ্রামে। পরদিন ১৩ জুলাই ইমরানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ার একটি ইটভাটায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ: সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ একের পর এক এ ধরনের রহস্যজনক নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার রহস্য উম্মোচন হচ্ছে না, যা সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি বিকাশের জন্য একটি হুমকি। সকল নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
No comments