বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৭১ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ আবুল কাশেম, বীর বিক্রম অবিচল যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরাও বসে থাকল না।
পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। নিমেষে শুরু হয়ে গেল মুখোমুখি যুদ্ধ। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। বারুদের গন্ধে বাতাস ভারী হতে থাকল।
মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন আবুল কাশেম। পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থান বেশ শক্তিশালী। তাদের কাছে আছে অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। পাকিস্তানি অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ছুটে আসছে হাজার হাজার গুলি। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। একই সঙ্গে মর্টার শেল। মুহুর্মুহু মর্টার শেল এসে পড়ছে মুক্তিযোদ্ধাদের আশেপাশে।
সময় যত গড়াচ্ছে, যুদ্ধের তীব্রতা ততই বেড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে আবুল কাশেমের কয়েকজন সহযোদ্ধা আহত হয়েছেন। গোলাগুলির শব্দের মধ্যে ভেসে আসছে তাঁদের আর্তনাদ। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ধরাধরি করে পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী সহযোদ্ধারা। পাল্টা আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিচলিত। কিন্তু আবুল কাশেম এতে বিচলিত হলেন না। বরং তাঁর ক্রোধ আরও বেড়ে গেল। সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধাদের পেছনে ফেলে গুলি করতে করতে একাই এগিয়ে গেলেন সামনে। তাঁর সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা। তাঁরাও গুলি করতে করতে এগিয়ে গেলেন সামনে।
তাঁদের সম্মিলিত আক্রমণে ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো পাকিস্তানিদের এক অংশের প্রতিরক্ষা। এটা দেখে আবুল কাশেমের উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন আরেকটু সামনে। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা তাঁর রণমূর্তি দেখে হতভম্ব। চরম উত্তেজনাকর এই মুহূর্ত। এমন সময় পাকিস্তানিদের গুলি এসে লাগল আবুল কাশেমের দেহে। রক্তাক্ত অবস্থায় ঢলে পড়লেন মাটিতে। গুরুতর আহত হয়েও তিনি জয়ের আশা ছাড়লেন না। সহযোদ্ধাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলে বললেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে’। একটু পর নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা হরিপুরে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর।
হরিপুর রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। জেলা সদর থেকে পশ্চিমে। গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার সীমান্তে হরিপুর। ১৯৭১ সালে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানিদের অবস্থান। তাদের সঙ্গে ছিল একদল রাজাকার।
আবুল কাশেম চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা ও আঙ্গিনাবাদ সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবুল কাশেমকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ১০৯। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল কাশেম হাওলাদার।
শহীদ আবুল কাশেমের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার রাধানগর (তেওয়ারীপুর) গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল ছোমেদ। মায়ের নাম জানা যায়নি। স্ত্রী রাজিয়া বেগম। তাঁদের দুই ছেলে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ৭ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন আবুল কাশেম। পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থান বেশ শক্তিশালী। তাদের কাছে আছে অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। পাকিস্তানি অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ছুটে আসছে হাজার হাজার গুলি। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। একই সঙ্গে মর্টার শেল। মুহুর্মুহু মর্টার শেল এসে পড়ছে মুক্তিযোদ্ধাদের আশেপাশে।
সময় যত গড়াচ্ছে, যুদ্ধের তীব্রতা ততই বেড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে আবুল কাশেমের কয়েকজন সহযোদ্ধা আহত হয়েছেন। গোলাগুলির শব্দের মধ্যে ভেসে আসছে তাঁদের আর্তনাদ। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ধরাধরি করে পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী সহযোদ্ধারা। পাল্টা আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিচলিত। কিন্তু আবুল কাশেম এতে বিচলিত হলেন না। বরং তাঁর ক্রোধ আরও বেড়ে গেল। সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধাদের পেছনে ফেলে গুলি করতে করতে একাই এগিয়ে গেলেন সামনে। তাঁর সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা। তাঁরাও গুলি করতে করতে এগিয়ে গেলেন সামনে।
তাঁদের সম্মিলিত আক্রমণে ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো পাকিস্তানিদের এক অংশের প্রতিরক্ষা। এটা দেখে আবুল কাশেমের উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন আরেকটু সামনে। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা তাঁর রণমূর্তি দেখে হতভম্ব। চরম উত্তেজনাকর এই মুহূর্ত। এমন সময় পাকিস্তানিদের গুলি এসে লাগল আবুল কাশেমের দেহে। রক্তাক্ত অবস্থায় ঢলে পড়লেন মাটিতে। গুরুতর আহত হয়েও তিনি জয়ের আশা ছাড়লেন না। সহযোদ্ধাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলে বললেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে’। একটু পর নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা হরিপুরে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর।
হরিপুর রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। জেলা সদর থেকে পশ্চিমে। গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার সীমান্তে হরিপুর। ১৯৭১ সালে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানিদের অবস্থান। তাদের সঙ্গে ছিল একদল রাজাকার।
আবুল কাশেম চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা ও আঙ্গিনাবাদ সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবুল কাশেমকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ১০৯। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল কাশেম হাওলাদার।
শহীদ আবুল কাশেমের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার রাধানগর (তেওয়ারীপুর) গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল ছোমেদ। মায়ের নাম জানা যায়নি। স্ত্রী রাজিয়া বেগম। তাঁদের দুই ছেলে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ৭ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments