চরাচর-পোড়াবাড়ীর চমচম by আলম শাইন
মিষ্টির বিপরীত শব্দ টক। শুধু শব্দের ক্ষেত্রেই নয়, মিষ্টি এবং টক-জাতীয় খাবারও একটি অন্যটির চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। অর্থাৎ খাবার হিসেবেও এ দুটির সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিপরীত। এ মূল্যবান খাবার এবং শব্দদ্বয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া না গেলেও একটি জায়গায় শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
সেটি হচ্ছে দুই খাবারই মানুষের মধ্যে প্রচুর লোভ তৈরি করে এবং জিভের জল ঝরিয়ে ছাড়ে। জিভে জল ঝরাতে সাহায্যকারী খাবারের মধ্যে মিষ্টি একটি অন্যতম খাবার। আর সেটি যদি হয় পোড়াবাড়ীর চমচম (মিষ্টি), তাহলে তো কথাই নেই! খেতে যে কারোর সাধ জাগবেই। হ্যাঁ, আমরা টাঙ্গাইল জেলার পোড়াবাড়ীর চমচমের কথাই বলছি, যা একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। নাম শুনলে মনটা চলে যায় ঢাকার অদূরে 'পোড়াবাড়ী' নামক স্থানে। পোড়াবাড়ী একটি গ্রামের নাম। এটি টাঙ্গাইল সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। যমুনা নদীর তীরে একসময় এর অবস্থান ছিল। এখন সেই যমুনা নদীর অবস্থান সেখানে না থাকলেও আছে পোড়াবাড়ী, আছে চমচমও। আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে প্রথম চমচম তৈরি হয়। তবে সর্বপ্রথম কে বানিয়েছেন, সে তথ্য কারোরই জানা নেই। সূত্রমতে জানা যায়, পোড়াবাড়ীতে একসময় একটি লঞ্চঘাট ছিল। সেখানে তখনকার সময় কলকাতা থেকে সরাসরি স্টিমার এসে ভিড়ত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। কারবারিরা পোড়াবাড়ীর ঘাটে নেমে পেটপুরে চমচম খেতেন এবং যাওয়ার সময় কলকাতায় নিয়ে যেতেন। বণ্টন করতেন আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল চমচমের প্রচার। একসময় কলকাতার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ল চমচমের অতুলনীয় স্বাদের কথা। পূর্ব-পশ্চিম বাংলায় বিস্তৃতি লাভ করে ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যেও চমচম হানা দিল। এভাবেই সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল আমাদের পোড়াবাড়ীর চমচম। এমনি স্বাদ ছিল তখন চমচমের। এখন সেই স্বাদও নেই, ভারতবর্ষেও বিচরণ নেই (স্বাদ স্বল্পতার কথা এলাকার লোকজনের সঙ্গে সত্যতা স্বীকার করেছেন, দৈনিক কালের কণ্ঠের টাঙ্গাইল প্রতিনিধিও)। তবে এটি সত্যি, এ দুর্মূল্যের বাজারেও কারিগররা চমচমে ভেজাল দিতে সাহস করেন না। একেবারে গরুর খাঁটি দুধ দিয়েই বানান। তাঁরা প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করে চিনি-ময়দা মিশিয়ে চমচম তৈরি করেন। জানা গেছে, আগে চমচমের সঙ্গে যমুনার জল মেশানো হতো। ফলে খেতে নাকি প্রচুর স্বাদ পাওয়া যেত। এখন সে সুযোগ নেই। সেখানে যমুনা নদীও নেই, স্বাদও নেই। সাপ্লাই পানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
আলম শাইন
No comments