প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার প্রমাণই দেশবাসী দেখতে চায়-বিচারবহির্ভূত হত্যা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে তাঁর সরকার সচেষ্ট বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সমস্যা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে তিনি দেশে যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তা স্বীকার করে নিলেন।


এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী জোর গলায় বলতেন, দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটছে না। আসলে সত্যকে আড়াল করলে এই অপতৎপরতা কখনোই বন্ধ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো, ন্যায়বিচারের পথ সুগম করা। যদি বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ অপরাধ করতে সাহস পাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষে ঠুনকো যুক্তি দিতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। আসলে অগণতান্ত্রিক তথা সামরিক সরকারের আমলেই বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুম খুনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এ ধরনের বেআইনি কাজ চলেছে প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলেই। তবে ২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট চালুর পর এই অভিযানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়মুক্তির আইন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রের কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো বাহিনীর সদস্যদের যখন দায়মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তাঁরা আইন মেনে চলার চেয়ে আইনবহির্ভূত কাজ করতেই উৎসাহিত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী অপরাধ দমন করতে পারলে র‌্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী গঠনেরও প্রয়োজন পড়ে না।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছিল, তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এর বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তাঁর সরকারের আমলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতে পারে না। সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে তাঁরা সচেষ্ট রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন, তাকে স্বাগত জানাই। তবে কেবল সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়, এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নীতিনির্ধারকের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে না, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ অপরাধীদের পাকড়াও করে বিচারে সোপর্দ করা, কাউকে ক্রসফায়ার বা অন্য যে নামেই হোক না কেন, গুলি করে হত্যা করা নয়। মামলার তদন্ত যথার্থ হলে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, জোট আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কেউ সোচ্চার ছিলেন না, সেই তথ্য ঠিক নয়। প্রথম আলো বরাবরই বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরোধিতা করেছে এবং এখনো করছে। সমালোচনা করেছে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনও। এ ক্ষেত্রে কোন দল ক্ষমতায় আছে, সেটি বিচার্য নয়, বিচার্য হলো আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কি না?
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে সদিচ্ছার প্রকাশ করেছেন, দেশবাসী কাজেই তার প্রতিফলন দেখতে চাইবে। তিনি সঠিকভাবেই বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের যদি সাধারণ আদালতে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে অন্য সন্ত্রাসী, অপরাধীদের কেন যাবে না? আইনের শাসনের স্বার্থেই বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.