পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ পল্টনে, ভাঙচুর-আগুন
রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপে পুরো এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুলিশের গাড়িসহ ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
তিনটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ছয়টি হাতবোমা বিস্ফোরিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এদিকে সংঘর্ষের জন্য সরকার ও পুলিশকে দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা। তাঁরা বলেন, পুলিশ অতর্কিতে তাঁদের মিছিলে হামলা চালায়। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বোমা হামলা চালালে জানমাল রক্ষার্থে তারা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কাউকে আটক করা হয়নি।
নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি ২০ গজের মতো সামনে এগোলে সিটি ব্যাংকের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সামনে যেতে চাইলেও অর্ধশতাধিক পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। নেতা-কর্মীরাও ব্যানারের বাঁশ, লাঠি ও খণ্ড খণ্ড ইট ছুড়তে থাকে। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র নেতাদের দলের কর্মীরা ঘিরে রেখে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যায়। টিয়ারশেলের গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুলিশের সঙ্গে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে ফকিরাপুল থেকে বিজয়নগর সড়কসহ আশপাশের গলিতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে অনেকেই আহত হন। দেখতে না পেয়ে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, আরামবাগ ও পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শতাধিক টিয়ারশেল ছাড়াও গরম পানি ছোড়ে পুলিশ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরপর ছয়টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে মসজিদের গলি থেকে বোমাগুলো ছোড়া হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের পাশাপাশি রাবার বুলেট ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন র্যাবের সদস্যরা।
সংঘর্ষের সময় আরটিভি, এটিএন নিউজের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের সামনে একটি প্রাইভেট কার, একটি বাস ও একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে দমকল বাহিনী এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু করে। তবে রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও র্যাব সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে জানান, সমাবেশ শেষে তাঁদের মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিছিল বের হওয়ার পরপরই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সংঘর্ষের সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকন, রিজভী আহমেদসহ শতাধিক নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোনো উসকানি ছাড়াই একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায় এবং উপর্যুপরি টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে। তিনি বলেন, 'একবার মিছিল আটকে দিলে আমরা তাদের বুঝিয়ে আবার চলতে শুরু করি। একপর্যায়ে হঠাৎ করেই পুলিশ হামলা করে।'
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নিচতলায় ছাত্রদলের অফিসে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে মিছিলে হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করেছে। সরকারের নির্দেশেই এ হামলা চালানো হয়েছে। সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করে এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'পুলিশ বা সরকার যদি আমাদের বলত যে, মিছিল-সমাবেশ করা যাবে না, তাহলে আমরা মিছিল বের করতাম না।'
সরকার এই বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে জানত কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, 'অবশ্যই জানত। আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে আমাদের এই কর্মসূচি চলছিল।' তিনি বলেন, হত্যা-গুম, মিছিল-সমাবেশে হামলা চালিয়ে সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ও তাদের জোট এসব ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী আচরণের দাঁতভাঙা জবাব দেবে। অগণতান্ত্রিক এ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিশোধ নেবে।
এদিকে ডিএমপির সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা বোমা হামলা চালালে পুলিশ 'অ্যাকশনে' যেতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল ছোড়ে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্রূপ করছেন : ফখরুল
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার আগে গতকাল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। কিন্তু তিনি তা না করে এক আলোচনা সভায় এ নিয়ে বিদ্রুপ-উপহাস করেছেন। উল্টো তিনি এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করেছেন।'
অবিলম্বে ইলিয়াস আলীর সন্ধান না দিলে সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি জানান মির্জা ফখরুল। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ আয়োজন করে মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকারের লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি জীবিত আছেন না মরে গেছেন- আমরা কিছুই জানি না। সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে, ইলিয়াস আলীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।' তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলব, টালবাহানা না করে এই মুহূর্তে ইলিয়াস আলীকে ফেরত দিন। তা না হলে বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হোন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে- হত্যা-গুমের ইতিহাস। ১৯৭২-৭৫ সালে ৩৪ হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। এ জন্য দেশের মানুষ তাদের ২১ বছর ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। এবার ক্ষমতায় এসে তারা অসংখ্য মানুষকে গুম ও হত্যা করেছে। ইতিহাস বলে, গুম করে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইলিয়াস আলীকে সরকার ফেরত না দিলে শুধু হরতালই নয়, আগামীতে কঠিন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের পতন ত্বরান্বিত করা হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লংমার্চ সফল করা, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সিলেট সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদসহ সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার কারণেই ইলিয়াসকে রোষানলে পড়তে হয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এদিকে সংঘর্ষের জন্য সরকার ও পুলিশকে দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা। তাঁরা বলেন, পুলিশ অতর্কিতে তাঁদের মিছিলে হামলা চালায়। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বোমা হামলা চালালে জানমাল রক্ষার্থে তারা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কাউকে আটক করা হয়নি।
নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি ২০ গজের মতো সামনে এগোলে সিটি ব্যাংকের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সামনে যেতে চাইলেও অর্ধশতাধিক পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। নেতা-কর্মীরাও ব্যানারের বাঁশ, লাঠি ও খণ্ড খণ্ড ইট ছুড়তে থাকে। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র নেতাদের দলের কর্মীরা ঘিরে রেখে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যায়। টিয়ারশেলের গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুলিশের সঙ্গে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে ফকিরাপুল থেকে বিজয়নগর সড়কসহ আশপাশের গলিতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে অনেকেই আহত হন। দেখতে না পেয়ে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, আরামবাগ ও পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শতাধিক টিয়ারশেল ছাড়াও গরম পানি ছোড়ে পুলিশ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরপর ছয়টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে মসজিদের গলি থেকে বোমাগুলো ছোড়া হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের পাশাপাশি রাবার বুলেট ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন র্যাবের সদস্যরা।
সংঘর্ষের সময় আরটিভি, এটিএন নিউজের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের সামনে একটি প্রাইভেট কার, একটি বাস ও একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে দমকল বাহিনী এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু করে। তবে রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও র্যাব সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে জানান, সমাবেশ শেষে তাঁদের মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিছিল বের হওয়ার পরপরই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সংঘর্ষের সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকন, রিজভী আহমেদসহ শতাধিক নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোনো উসকানি ছাড়াই একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায় এবং উপর্যুপরি টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে। তিনি বলেন, 'একবার মিছিল আটকে দিলে আমরা তাদের বুঝিয়ে আবার চলতে শুরু করি। একপর্যায়ে হঠাৎ করেই পুলিশ হামলা করে।'
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নিচতলায় ছাত্রদলের অফিসে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে মিছিলে হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করেছে। সরকারের নির্দেশেই এ হামলা চালানো হয়েছে। সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করে এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'পুলিশ বা সরকার যদি আমাদের বলত যে, মিছিল-সমাবেশ করা যাবে না, তাহলে আমরা মিছিল বের করতাম না।'
সরকার এই বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে জানত কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, 'অবশ্যই জানত। আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে আমাদের এই কর্মসূচি চলছিল।' তিনি বলেন, হত্যা-গুম, মিছিল-সমাবেশে হামলা চালিয়ে সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ও তাদের জোট এসব ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী আচরণের দাঁতভাঙা জবাব দেবে। অগণতান্ত্রিক এ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিশোধ নেবে।
এদিকে ডিএমপির সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা বোমা হামলা চালালে পুলিশ 'অ্যাকশনে' যেতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল ছোড়ে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্রূপ করছেন : ফখরুল
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার আগে গতকাল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। কিন্তু তিনি তা না করে এক আলোচনা সভায় এ নিয়ে বিদ্রুপ-উপহাস করেছেন। উল্টো তিনি এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করেছেন।'
অবিলম্বে ইলিয়াস আলীর সন্ধান না দিলে সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি জানান মির্জা ফখরুল। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ আয়োজন করে মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকারের লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি জীবিত আছেন না মরে গেছেন- আমরা কিছুই জানি না। সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে, ইলিয়াস আলীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।' তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলব, টালবাহানা না করে এই মুহূর্তে ইলিয়াস আলীকে ফেরত দিন। তা না হলে বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হোন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে- হত্যা-গুমের ইতিহাস। ১৯৭২-৭৫ সালে ৩৪ হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। এ জন্য দেশের মানুষ তাদের ২১ বছর ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। এবার ক্ষমতায় এসে তারা অসংখ্য মানুষকে গুম ও হত্যা করেছে। ইতিহাস বলে, গুম করে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইলিয়াস আলীকে সরকার ফেরত না দিলে শুধু হরতালই নয়, আগামীতে কঠিন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের পতন ত্বরান্বিত করা হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লংমার্চ সফল করা, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সিলেট সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদসহ সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার কারণেই ইলিয়াসকে রোষানলে পড়তে হয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
No comments