বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডে নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ-৩১ শূন্য পদে ১৪৩ নিয়োগ by শরিফুল হাসান
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডে (বিজিএফসিএল) ৩১টি শূন্য পদের বিপরীতে ১৪৩ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে জনবলকাঠামো-পরিপন্থী এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে।
পেট্রোবাংলার অধীন এ প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার অপারেটর, অগ্নিনির্বাপণকর্মী, অ্যাটেনডেন্ট, অটো ইলেকট্রিশিয়ান ও মেকানিকের শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের জুন মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলার পর এ বছরের ৮ এপ্রিল ১৪৩ জনের নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুতর সমস্যা না থাকলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কাউকে বাদ দেওয়া হয় না। কাজেই যাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে তাঁরা সবাই নিয়োগ পাবেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কম্পিউটার অপারেটরের ১০টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭ জন, অগ্নিনির্বাপণকর্মীর ১১টি শূন্য পদের বিপরীতে ৪৮ জন এবং অ্যাটেনডেন্টের ১০টি পদের বিপরীতে ৫৮ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁদের ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, একেকটি পদের জন্য দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। আর এই ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের’ সঙ্গে জড়িত কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) মুজিবুর রহমান, তাঁর চাচাতো ভাই সিবিএ সভাপতি শাহ আলম ও কথিত ‘বন্ধু’ সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মামুন নাজির।
অভিযোগ উঠেছে, চলমান নিয়োগে জেলা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানা হয়নি। পোষ্যদের সন্তানদেরও বেশির ভাগ চাকরি পাননি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণকর্মী পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী চাওয়া হয়েছিল বলে কেউ কেউ জাল সনদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা এক চাকরিপ্রার্থীর বড় ভাই মিনহাজ নবী খান অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির জন্য আমার ভাই এক প্রভাবশালীকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিল। কিন্তু চাকরি হয়নি। যারা আরও বেশি টাকা দিতে পেরেছে তাদেরই চাকরি হয়েছে।’
কম্পিউটার অপারেটর পদে আরেক চাকরিপ্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পীরবাড়ি এলাকার কাউছার আহম্মেদ একই অভিযোগ করেন।
প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের জন্য মানবসম্পদ মহাব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান এখন মিসরে রয়েছেন। তাঁরা বলেন, নিয়োগের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ৭ এপ্রিল রাতে মিসরে রওনা হন তিনি।
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনরত রফিকুল আলম প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি প্রতিদিনের কাজগুলো করছি। নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাসিমুজ্জামান তালুকদারের স্বাক্ষরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার চিঠিগুলো ছাড়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোট ১৪৩ জনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে যা বলার ব্যবস্থাপনা পরিচালকই বলতে পারবেন। আমার কিছু বলার নেই।’
গৃহীত উদ্যোগের পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাড়তি লোককে অন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যে তিনটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তার বাইরেও অনেক শূন্য পদ আছে। সেসব পদে এসব লোককে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, ভবিষ্যতে আরও লোক লাগবে। সেসব বিবেচনা করেই এই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
এমডি দাবি করেন, নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। যোগ্যতার অভাবে চাকরি না পেয়ে অনেকে এখন এসব কথা বলছেন।
তবে বিজ্ঞপ্তির বাইরে অন্য কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের নেই—উল্লেখ করে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটা করা হলে তা হবে বড় অনিয়ম। শুধু নিয়োগ-বাণিজ্যের জন্যই অতিরিক্ত এই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, সিবিএও এই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএর সভাপতি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ সিবিএর নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেন ও নিয়োগে সুপারিশের অভিযোগ আছে—এ কথা বলা হলে শাহ আলম বলেন, ‘সিবিএর নেতা হিসেবে আমরা অনেকের জন্যই সুপারিশ করতে পারি। কিন্তু তা অর্থের বিনিময়ে নয়। পোষ্যদের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’
পোষ্যদেরও অনেকেই চাকরি পাননি—এ অভিযোগ খণ্ডন করে শাহ আলম বলেন, ‘কে চাকরি পাবে, কার কী যোগ্যতা, সেটি কর্তৃপক্ষ দেখবে।’
সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মামুন নাজিরও নিয়ম ভেঙে বাড়তি লোক নিয়োগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ভবিষ্যৎ জনবলের প্রয়োজনের কথা বলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে জনবলকাঠামো ঠিক করার সময় কর্মকর্তার পদ বাড়িয়ে কর্মচারীর পদ কমিয়ে ফেলা হয়েছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে অনেকেই মারা গেছেন। সামনে কোম্পানির কাজকর্ম বাড়বে। এসব বিবেচনায় রেখেই হয়তো লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদত হোসেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কম্পিউটার অপারেটরের ১০টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭ জন, অগ্নিনির্বাপণকর্মীর ১১টি শূন্য পদের বিপরীতে ৪৮ জন এবং অ্যাটেনডেন্টের ১০টি পদের বিপরীতে ৫৮ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁদের ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, একেকটি পদের জন্য দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। আর এই ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের’ সঙ্গে জড়িত কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) মুজিবুর রহমান, তাঁর চাচাতো ভাই সিবিএ সভাপতি শাহ আলম ও কথিত ‘বন্ধু’ সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মামুন নাজির।
অভিযোগ উঠেছে, চলমান নিয়োগে জেলা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানা হয়নি। পোষ্যদের সন্তানদেরও বেশির ভাগ চাকরি পাননি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণকর্মী পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী চাওয়া হয়েছিল বলে কেউ কেউ জাল সনদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা এক চাকরিপ্রার্থীর বড় ভাই মিনহাজ নবী খান অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির জন্য আমার ভাই এক প্রভাবশালীকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিল। কিন্তু চাকরি হয়নি। যারা আরও বেশি টাকা দিতে পেরেছে তাদেরই চাকরি হয়েছে।’
কম্পিউটার অপারেটর পদে আরেক চাকরিপ্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পীরবাড়ি এলাকার কাউছার আহম্মেদ একই অভিযোগ করেন।
প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের জন্য মানবসম্পদ মহাব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান এখন মিসরে রয়েছেন। তাঁরা বলেন, নিয়োগের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ৭ এপ্রিল রাতে মিসরে রওনা হন তিনি।
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনরত রফিকুল আলম প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি প্রতিদিনের কাজগুলো করছি। নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাসিমুজ্জামান তালুকদারের স্বাক্ষরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার চিঠিগুলো ছাড়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোট ১৪৩ জনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে যা বলার ব্যবস্থাপনা পরিচালকই বলতে পারবেন। আমার কিছু বলার নেই।’
গৃহীত উদ্যোগের পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাড়তি লোককে অন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যে তিনটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তার বাইরেও অনেক শূন্য পদ আছে। সেসব পদে এসব লোককে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, ভবিষ্যতে আরও লোক লাগবে। সেসব বিবেচনা করেই এই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
এমডি দাবি করেন, নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। যোগ্যতার অভাবে চাকরি না পেয়ে অনেকে এখন এসব কথা বলছেন।
তবে বিজ্ঞপ্তির বাইরে অন্য কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের নেই—উল্লেখ করে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটা করা হলে তা হবে বড় অনিয়ম। শুধু নিয়োগ-বাণিজ্যের জন্যই অতিরিক্ত এই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, সিবিএও এই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএর সভাপতি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ সিবিএর নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেন ও নিয়োগে সুপারিশের অভিযোগ আছে—এ কথা বলা হলে শাহ আলম বলেন, ‘সিবিএর নেতা হিসেবে আমরা অনেকের জন্যই সুপারিশ করতে পারি। কিন্তু তা অর্থের বিনিময়ে নয়। পোষ্যদের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’
পোষ্যদেরও অনেকেই চাকরি পাননি—এ অভিযোগ খণ্ডন করে শাহ আলম বলেন, ‘কে চাকরি পাবে, কার কী যোগ্যতা, সেটি কর্তৃপক্ষ দেখবে।’
সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মামুন নাজিরও নিয়ম ভেঙে বাড়তি লোক নিয়োগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ভবিষ্যৎ জনবলের প্রয়োজনের কথা বলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে জনবলকাঠামো ঠিক করার সময় কর্মকর্তার পদ বাড়িয়ে কর্মচারীর পদ কমিয়ে ফেলা হয়েছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে অনেকেই মারা গেছেন। সামনে কোম্পানির কাজকর্ম বাড়বে। এসব বিবেচনায় রেখেই হয়তো লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদত হোসেন।
No comments