সৌভাগ্যবান জন্মে বঙ্গে by আবিদ রহমান
মেলবোর্ণের আন্ডারওয়ার্ল্ড কম শক্তিশালী নয়। মানি লন্ডারিং, ড্রাগস, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের নিয়ন্ত্রক আন্ডারওয়ার্ল্ড। যথানিয়মে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, জখম-পাল্টা জখম ও খুনোখুনি লেগেই থাকে। পুলিশ আর আন্ডারওয়ার্ল্ডের মধ্যে চোর-পুলিশ নিত্যকার খেলা।
দীর্ঘ তদন্তের পর মেলবোর্ণ পুলিশ আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘ছায়া সন্ত্রাস’ কার্ল উইলিয়ামসকে গ্রেফতার করে বেশ ক’বছর আগে। কার্ল আন্ডার ওয়ার্ল্ডের বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত খুনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলো। কার্লের নিয়ন্ত্রণে বিশাল মাপের ড্রাগ ব্যবসা। সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে কার্লের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কার্লকে রাখা হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বারওয়েন কারাগারে। গুজব আছে, আন্ডারওয়ার্ল্ড সম্পর্কিত মূল্যবান তথ্যাদিতে পুলিশকে ‘আন্তরিকভাবে’ সহায়তা করায় কার্লকে ‘হাল্কা’ মাত্রার সাজা দিয়ে কারা অভ্যন্তরের জীবনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। শোনা যায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘কালো লম্বা হাত’ নিরাপদ কারাগারেও সমান মাত্রায় সক্রিয়।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের লম্বা কালো হাত কার্লকে শেষাবধি রেহাই দেইনি। পুলিশের সাথে সহযোগিতা করে তথ্য দেবার ‘প্রতিশোধে’ দু’বছর আগে কারাগারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রকোষ্ঠে কার্ল খুন হন অন্য এক মারাত্মক কয়েদীর হাতে। কার্লের বিধবা স্ত্রী ও তিন সন্তানের মা এবং বাবা (যিনি নিজেও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের একজন) এখন কার্লের মৃত্যুর বিশাল আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে বলছেন, কার্লের সন্তানদের পিতৃহারা করার অধিকার কারো নেই। অথচ কার্ল নিজের হাতেই অনেকের সন্তানকে পিতৃহারা করেছিলো।
অষ্টাশি সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ত্রাস’ পাগলা শহীদ খুন হয়। শহীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খুনের অভিযোগ ছিলো। চাঁদাবাজি ও কথায় কথায় অস্ত্রের ঝলকানি দেখানো নাকি ছিলো পাগলা শহীদের ‘বৈশিষ্ট্য’। ভাইয়ের লাশের পাশে তাঁর বোনের আহাজারি দেখেছি। বোনটি চিৎকার করে বারবার বলছিলেন, ‘আমার নিঃস্পাপ-নিরীহ ভাইয়ের হত্যাকারীকে আমি খুন করতে চাই। কেউ আমাকে একটা অস্ত্র দিন।’ নিহত পাগলা শহীদের বোনের বাড়াবাড়ি দেখে পাশে দাঁড়ানো ইত্তেফাকের জাঁদরেল রিপোর্টার হাসিমুখের গিয়াস ভাই ফিসফিসিয়ে বল্লেন, ‘কমুনি, তোমার ভাইয়ের হাতে যারা খুন হয়েছে, তাদের বোনেরা যদি তোমার মতোই অস্ত্র নিয়ে আসতে চায়? বুঝলি, নিজের ভাই সব সময় নিরীহই হয়।’ কথাটা বেশ মনে ধরেছিলো। পাপের শাস্তিতে হত্যাকারীরা নিজেরাই ‘হত্যা’ হয়। গিয়াস ভাই এখন কোন পত্রিকায় জানিনা।
পাগলা শহীদ বেঁচেও থাকলে রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এখন হয়তো কোনো বড় দলের নেতা থাকতেন। সাংসদ হতেন। কোনো জেলা শাখার সভাপতি হতেন। পদে থাকাকালীন পাগলা শহীদের কিছু হলে দেশ জ্বলে উঠতো প্রতিবাদে। কিন্তু পাগলা শহীদের হাতে গুম-খুন হওয়া কারো পরিবার হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্যে বিচার প্রার্থী হতে পারতেন না বিভিন্ন আনুষাংগিক কারণে।
কার্ল উইলিয়ামের দূর্ভাগ্য সে বাংলাদেশে জন্ম নেয়নি। কোনো বাংলাদেশি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার সৌভাগ্য পায়নি। পেলে কার্লের গ্রেফতারে রাজপথে নামতো দলীয় কর্মীদের জঙ্গি মিছিল। দিনভর পিকেটিংয়ে ভাংগতো গাডি। পুড়তো টায়ার। হয়তো ডাক দেয়া হতো হরতালের।
এমন সুযোগ কেবল বাংলাদেশেই অফুরান।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের লম্বা কালো হাত কার্লকে শেষাবধি রেহাই দেইনি। পুলিশের সাথে সহযোগিতা করে তথ্য দেবার ‘প্রতিশোধে’ দু’বছর আগে কারাগারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রকোষ্ঠে কার্ল খুন হন অন্য এক মারাত্মক কয়েদীর হাতে। কার্লের বিধবা স্ত্রী ও তিন সন্তানের মা এবং বাবা (যিনি নিজেও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের একজন) এখন কার্লের মৃত্যুর বিশাল আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে বলছেন, কার্লের সন্তানদের পিতৃহারা করার অধিকার কারো নেই। অথচ কার্ল নিজের হাতেই অনেকের সন্তানকে পিতৃহারা করেছিলো।
অষ্টাশি সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ত্রাস’ পাগলা শহীদ খুন হয়। শহীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খুনের অভিযোগ ছিলো। চাঁদাবাজি ও কথায় কথায় অস্ত্রের ঝলকানি দেখানো নাকি ছিলো পাগলা শহীদের ‘বৈশিষ্ট্য’। ভাইয়ের লাশের পাশে তাঁর বোনের আহাজারি দেখেছি। বোনটি চিৎকার করে বারবার বলছিলেন, ‘আমার নিঃস্পাপ-নিরীহ ভাইয়ের হত্যাকারীকে আমি খুন করতে চাই। কেউ আমাকে একটা অস্ত্র দিন।’ নিহত পাগলা শহীদের বোনের বাড়াবাড়ি দেখে পাশে দাঁড়ানো ইত্তেফাকের জাঁদরেল রিপোর্টার হাসিমুখের গিয়াস ভাই ফিসফিসিয়ে বল্লেন, ‘কমুনি, তোমার ভাইয়ের হাতে যারা খুন হয়েছে, তাদের বোনেরা যদি তোমার মতোই অস্ত্র নিয়ে আসতে চায়? বুঝলি, নিজের ভাই সব সময় নিরীহই হয়।’ কথাটা বেশ মনে ধরেছিলো। পাপের শাস্তিতে হত্যাকারীরা নিজেরাই ‘হত্যা’ হয়। গিয়াস ভাই এখন কোন পত্রিকায় জানিনা।
পাগলা শহীদ বেঁচেও থাকলে রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এখন হয়তো কোনো বড় দলের নেতা থাকতেন। সাংসদ হতেন। কোনো জেলা শাখার সভাপতি হতেন। পদে থাকাকালীন পাগলা শহীদের কিছু হলে দেশ জ্বলে উঠতো প্রতিবাদে। কিন্তু পাগলা শহীদের হাতে গুম-খুন হওয়া কারো পরিবার হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্যে বিচার প্রার্থী হতে পারতেন না বিভিন্ন আনুষাংগিক কারণে।
কার্ল উইলিয়ামের দূর্ভাগ্য সে বাংলাদেশে জন্ম নেয়নি। কোনো বাংলাদেশি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার সৌভাগ্য পায়নি। পেলে কার্লের গ্রেফতারে রাজপথে নামতো দলীয় কর্মীদের জঙ্গি মিছিল। দিনভর পিকেটিংয়ে ভাংগতো গাডি। পুড়তো টায়ার। হয়তো ডাক দেয়া হতো হরতালের।
এমন সুযোগ কেবল বাংলাদেশেই অফুরান।
No comments