স্থিতিশীল হোক পুঁজিবাজার

এ বছরের আলোচিত বিষয় বোধ হয় শেয়ারবাজার। গত বছরের শেষার্ধে এসে ঊর্ধ্বগতির শেয়ারবাজার হঠাৎ ধাক্কা খায়। শেয়ারবাজারের অনেক বিনিয়োগকারীই সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেন, এমন কথাও শোনা গেছে। অন্যদিকে অভিযোগ ছিল, পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।


এর মধ্যে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতারও আভাস পান অনেকে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের সময় দেওয়া হয় দুই মাস। ২৫ জানুয়ারি চার সদস্যের কমিটির প্রধান হিসেবে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খালেদের নাম ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এর পরদিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এক প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিটির অন্য দুই সদস্যের নাম ঘোষণা করে। পরে যুক্ত হন আরো একজন। তদন্ত কমিটি গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এসইসির অদক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কার্যকর করার সুপারিশ করেছে। বাজারে কারসাজির পেছনে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা তদন্ত কমিটি খুঁজে পায়নি বলে জানা গেছে। বাজার থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তে পাওয়া গেছে জানিয়ে কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, তা কোনোভাবেই বিএনপির দাবি করা ৮৪ হাজার কোটি টাকা নয়। এর পরিমাণ হতে পারে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৬ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐকমত্যের সরকার ক্ষমতায় আসে। আর শেয়ারবাজারে দেখা দেয় তেজিভাব। কিন্তু পাঁচ মাসের মাথায় বাজারে ধস নামে। সেবার যা হয়েছিল পাঁচ মাসে, এবার সেটি ঘটেছে আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মাথায়। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে ভরাডুবির পর গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেছিল। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল ১৫ কম্পানি ও ব্রোকারেজ হাউসের মালিকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে এসইসি। তারপর ১৪ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু সে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নিয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেই এসইসির পক্ষ থেকে।
এবারের তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এসইসির অদক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কারের সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে এসইসির পেশাগত দক্ষতা কাজ করেনি। তদন্ত কমিটি এসইসি পুনর্গঠনের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করেছে বলে জানান তিনি। ১১ ধরনের বিষয় খতিয়ে দেখার কথা কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়। কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, 'ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জ (সিএসই) এবং সরকারি ও বিরোধী দলের যাঁরা ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত তাঁদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অনৈতিক হলেও আইনের মধ্যেই এগুলো ঘটেছে।' তিনি বলেছেন, 'শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক উত্থান-পতনে অনেক পক্ষই সক্রিয় ছিল।' সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (সিএসই) অবহেলার কারণে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এসইসি আরো সক্রিয় থাকলে এমনটা হতো না বলে মনে করেন তদন্ত কমিটির প্রধান। তদন্ত কমিটির সুপারিশ সম্পর্কে ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, 'এসইসি সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করতে হবে।' এ ছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সংস্কার, ডিএসই ও সিএসইর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট সুপারিশও আছে প্রতিবেদনে। এবার যেন ১৯৯৬-এর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ কাজে লাগিয়ে স্থিতিশীল করা হোক পুঁজিবাজার।

No comments

Powered by Blogger.