মন্ত্রী যদি না পারেন, তাহলে...-ভর্তি-বাণিজ্যে লাগাম পরাবে কে?

দেওয়া টাকা আর ফেরত আসে না, সেটাই যেন প্রমাণিত হলো। মন্ত্রীর হাঁকডাক, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, গণমাধ্যমের সরবতা—সবই বিফল। ভর্তির জন্য নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশের পর আড়াই মাস চলে গেলেও নির্দেশ পালনের একটিও নজির নেই।


প্রায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই অভিভাবকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে নেওয়া অর্থ ফেরত দেয়নি। ভর্তি ফি বাবদ সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নিলে ফেরত দেওয়া এবং নিয়মের বাইরে কোচিং বন্ধ হয়নি। এই গড়িমসি কেবল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশকেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে না, প্রতারণা করছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও। একই কথা প্রযোজ্য কোচিং বিষয়েও।
প্রধানমন্ত্রী নিজেও হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে এসেছে শিক্ষা-বাণিজ্য।’ সত্যিই, প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি-প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেছে টাকার লেনদেন। বিনা রসিদে উন্নয়ন ফির নাম করে অসহায় অভিভাবকদের চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর নামীদামি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আদালতের নির্দেশের চেয়ে অনেক বেশি চলেন বাণিজ্যের প্ররোচনায়। এই প্ররোচনা এতই প্রবল যে তাঁরা আইন অমান্য করে ধরাকে সরা মনে করা শুরু করছেন। এটা তাঁরা করতে পারছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের প্রতাপশালী নেতাদের ক্ষমতার জোরে। সরকার যদি এদের দৌরাত্ম্য দমন না করে, তবে এই অর্থ-শোষণের দায় থেকে তারাও মুক্ত হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, নির্দেশ পালিত না হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুদান বন্ধ করা হবে। সেটা কি করা হয়েছে? তা ছাড়া এই বাড়তি অর্থ আদায় আইনত অপরাধ। সুতরাং মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে কঠোর হতে বাধা কোথায়? আমরা চাই, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আইনের যথাযথ প্রয়োগে দ্বিধা করবেন না। পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও পরিচালনার বিষয়টিও কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা দরকার।
এসব জরুরি কাজ পালনের পাশাপাশি শিক্ষকদের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। যত দিন শিক্ষকেরা অন্যান্য পেশার সমমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা না পাচ্ছেন, তত দিন সুষ্ঠু শিক্ষা-সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না।

No comments

Powered by Blogger.