সুরঞ্জিতের মন্ত্রিত্ব নিয়ে সার্কাসঃ দফতরবিহীন মন্ত্রী করলেন শেখ হাসিনাঃ প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপের গুজব
পা পিছলে গেলেও পড়লেন না সুরঞ্জিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরঞ্জিতের মন্ত্রিত্ব নিয়ে সার্কাস দেখালেন। ঠেকিয়ে দিলেন তার পতন। শেষ পর্যন্ত দফতরবিহীন মন্ত্রী বা ‘উজিরে খামাখা’ হিসেবে থেকে গেলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় কাঁধে নিয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে রেলভবনে গত রোববার নিজের পদত্যাগের ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার কথাও জানিয়ে দেন। কিন্তু তার পদত্যাগের ৩০ ঘণ্টার মাথায় নাটকীয়ভাবে সরকার এক তথ্য বিবরণী জারি করে জানায়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারের দফতরবিহীন মন্ত্রী। শেখ হাসিনার তরফ থেকে ‘সারপ্রাইজ’টি পেয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনা দলেরও প্রধান, সরকারেরও প্রধান। প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন, এ নিয়ে তার বলার কিছু নেই।
গতকাল রাত ৮টায় পাঠানো সরকারের ১২৭৯ নম্বর তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Rules of Business 1996-এর Rule 3(iv)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।’ উল্লেখ্য, রুলস্ অব বিজনেসের ৩(৪) ধারায় বলা হয়েছে, (iv) The Prime Minister may assign a Division or a Ministry or more than one Division or one Ministry to the charge of the Prime Minister, a Minister or a Minister of State :
Provided that a Division or Ministry not so assigned shall be in direct charge of the Prime Minister.
ঘুষ কেলেঙ্কারির আলোচিত ঘটনার এক সপ্তাহ পর্যন্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। তুরস্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর রোববার রাতে রেলমন্ত্রীকে গণভবনে তলব করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। পরদিনই সুরঞ্জিত সোজা রেলভবনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত্ শেষ করে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কিন্তু একদিনের মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটল, যার কারণে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হলেন তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রেখে দেয়ার। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, একটি বিদেশি দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তাকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেয়া হয়েছে। রাতে একটি বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সন্ধ্যায় ফোন করেন। তার ফোনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট সচিবকে তলব করেন। কেবিনেট সচিব এ সময় একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ফোন পেয়ে তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ঘোষণা জারি করেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, সুরঞ্জিতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার চাপ রয়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাকে নির্দোষ হিসেবে প্রমাণ করারও চাপ আছে। এক্ষেত্রে এপিএস ফারুক এবং জিএম মৃধা ফেঁসে যাচ্ছেন।
সুরঞ্জিতের পদত্যাগকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়ে একে গণতন্ত্রের পরাকাষ্ঠা হিসেবে বর্ণনা করেছিল গতকাল সকালেও। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, এ ধরনের পদত্যাগের সাহসী সিদ্ধান্ত একমাত্র আওয়ামী লীগই নিতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় উল্টো নাটক। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের এ সম্পর্কে নতুন করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ৩০ ঘণ্টা অতিক্রম করতে না করতেই দেখা গেল সবই হয়ে গেছে কথার কথা।
উল্লেখ্য, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রোববার সংবাদ সম্মেলনে নিজের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বলেন, রেলওয়ের সফলতা যেমন আমার, তেমন ব্যর্থতাও আমার ওপর বর্তায়। এ ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিয়ে আমি রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নিলাম। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে পদত্যাগের অভিপ্রায় গ্রহণ করি। উনি সাগ্রহে সম্মতি দিয়েছেন। তাই আমি সব ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ সময় তিনি বলেন, তদন্তের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসব। তাহলে কি আপনি রাজনীতি থেকেও সরে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যাত্রাবিরতি।
মঙ্গলবার রাতে তাকে আবারও দফতরবিহনী মন্ত্রী নিয়োগ করার নাটকীয় ঘোষণা আসার এর আগে একইদিনে দুর্নীতি দমন কমিশন ঘোষণা করে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধান করে দেখা হবে। দুদকের মহাপরিচালক এম এইচ সালাউদ্দিন বলেন, তারা মূলত দুটি বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন। প্রথমত, ৯ এপ্রিল যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই ঘটনা অনুসন্ধান কমিটি খতিয়ে দেখবে। দ্বিতীয়ত, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সম্প্রতি যে টেলিকম কোম্পানি গঠন করেছেন, সেই ব্যবসার অর্থের সূত্র অনুসন্ধান করবে দুদক।
এদিকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে সুরঞ্জিত সেনকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখার বিষয়ে আমার দেশ-কে দেয়া তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তদন্ত কাজ যাতে প্রভাবিত না হয় এই যুক্তি দেখিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়টি সবার কাছে যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার মাধ্যমে গোটা বিষয়টির সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রী থাকলে তদন্ত কাজ সঠিকভাবে না হওয়ার বিপদ আছে। সেই কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন করতে গেলেন।
এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন, তাহলে তাতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে রেলমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার সময় যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে উল্লেখ করেছিলেন তিনি অব্যাহতি নিচ্ছেন তদন্তের স্বার্থে। এখন তাকে যদি আবার দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়, তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বড় কথা হচ্ছে, জনগণ এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দেখতে চায়। কিন্তু মন্ত্রিত্ব রাখায় ওই তদন্ত কার্যক্রমের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহ্বুবউল্লাহ্ বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতির বিস্মিত হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। আমিও আশ্চর্য হয়েছি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে হেলাফেলায় পরিণত করেছে। যখন যা ইচ্ছা তা-ই করছে। তিনি বলেন, কালোটাকার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অব্যাহতি নিলেন। কিন্তু এখন যদি তাকে মন্ত্রিপরিষদে রাখা হয়, তাহলে কীভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব? দুর্নীতির দায় নিয়েই যখন সুরঞ্জিত বাবু পদত্যাগ করলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতাবলে আবার তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে দুর্নীতিকে কি মেনে নিলেন? জনগণ এ প্রশ্ন তুললে তার উত্তর কী হবে?
সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন এটা তার এখতিয়ার। তিনি কোনো মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাকে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতেই পারেন। তবে আমরা চাই দুর্নীতি বিষয়টির সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত হোক। মন্ত্রীর পদে থাকলে তদন্ত কতটা প্রভাবমুক্ত হবে, সেটাই প্রশ্ন।
Provided that a Division or Ministry not so assigned shall be in direct charge of the Prime Minister.
ঘুষ কেলেঙ্কারির আলোচিত ঘটনার এক সপ্তাহ পর্যন্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। তুরস্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর রোববার রাতে রেলমন্ত্রীকে গণভবনে তলব করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। পরদিনই সুরঞ্জিত সোজা রেলভবনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত্ শেষ করে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কিন্তু একদিনের মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটল, যার কারণে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হলেন তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রেখে দেয়ার। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, একটি বিদেশি দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তাকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেয়া হয়েছে। রাতে একটি বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সন্ধ্যায় ফোন করেন। তার ফোনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট সচিবকে তলব করেন। কেবিনেট সচিব এ সময় একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ফোন পেয়ে তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ঘোষণা জারি করেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, সুরঞ্জিতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার চাপ রয়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাকে নির্দোষ হিসেবে প্রমাণ করারও চাপ আছে। এক্ষেত্রে এপিএস ফারুক এবং জিএম মৃধা ফেঁসে যাচ্ছেন।
সুরঞ্জিতের পদত্যাগকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়ে একে গণতন্ত্রের পরাকাষ্ঠা হিসেবে বর্ণনা করেছিল গতকাল সকালেও। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, এ ধরনের পদত্যাগের সাহসী সিদ্ধান্ত একমাত্র আওয়ামী লীগই নিতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় উল্টো নাটক। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের এ সম্পর্কে নতুন করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ৩০ ঘণ্টা অতিক্রম করতে না করতেই দেখা গেল সবই হয়ে গেছে কথার কথা।
উল্লেখ্য, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রোববার সংবাদ সম্মেলনে নিজের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বলেন, রেলওয়ের সফলতা যেমন আমার, তেমন ব্যর্থতাও আমার ওপর বর্তায়। এ ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিয়ে আমি রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নিলাম। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে পদত্যাগের অভিপ্রায় গ্রহণ করি। উনি সাগ্রহে সম্মতি দিয়েছেন। তাই আমি সব ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ সময় তিনি বলেন, তদন্তের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসব। তাহলে কি আপনি রাজনীতি থেকেও সরে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যাত্রাবিরতি।
মঙ্গলবার রাতে তাকে আবারও দফতরবিহনী মন্ত্রী নিয়োগ করার নাটকীয় ঘোষণা আসার এর আগে একইদিনে দুর্নীতি দমন কমিশন ঘোষণা করে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধান করে দেখা হবে। দুদকের মহাপরিচালক এম এইচ সালাউদ্দিন বলেন, তারা মূলত দুটি বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন। প্রথমত, ৯ এপ্রিল যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই ঘটনা অনুসন্ধান কমিটি খতিয়ে দেখবে। দ্বিতীয়ত, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সম্প্রতি যে টেলিকম কোম্পানি গঠন করেছেন, সেই ব্যবসার অর্থের সূত্র অনুসন্ধান করবে দুদক।
এদিকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে সুরঞ্জিত সেনকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখার বিষয়ে আমার দেশ-কে দেয়া তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তদন্ত কাজ যাতে প্রভাবিত না হয় এই যুক্তি দেখিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়টি সবার কাছে যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার মাধ্যমে গোটা বিষয়টির সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রী থাকলে তদন্ত কাজ সঠিকভাবে না হওয়ার বিপদ আছে। সেই কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন করতে গেলেন।
এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন, তাহলে তাতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে রেলমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার সময় যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে উল্লেখ করেছিলেন তিনি অব্যাহতি নিচ্ছেন তদন্তের স্বার্থে। এখন তাকে যদি আবার দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়, তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বড় কথা হচ্ছে, জনগণ এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দেখতে চায়। কিন্তু মন্ত্রিত্ব রাখায় ওই তদন্ত কার্যক্রমের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহ্বুবউল্লাহ্ বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতির বিস্মিত হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। আমিও আশ্চর্য হয়েছি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে হেলাফেলায় পরিণত করেছে। যখন যা ইচ্ছা তা-ই করছে। তিনি বলেন, কালোটাকার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অব্যাহতি নিলেন। কিন্তু এখন যদি তাকে মন্ত্রিপরিষদে রাখা হয়, তাহলে কীভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব? দুর্নীতির দায় নিয়েই যখন সুরঞ্জিত বাবু পদত্যাগ করলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতাবলে আবার তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে দুর্নীতিকে কি মেনে নিলেন? জনগণ এ প্রশ্ন তুললে তার উত্তর কী হবে?
সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন এটা তার এখতিয়ার। তিনি কোনো মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাকে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতেই পারেন। তবে আমরা চাই দুর্নীতি বিষয়টির সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত হোক। মন্ত্রীর পদে থাকলে তদন্ত কতটা প্রভাবমুক্ত হবে, সেটাই প্রশ্ন।
No comments