গাছতলায় লেখাপড়া-আনন্দ নয়, শঙ্কাই মূল

বৃক্ষতলে বিদ্যাদান যদিও এই উপমহাদেশে নতুন নয়; ময়মনসিংহের নান্দাইলের কুলধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেই ঐতিহ্য শিরোধার্য করেছে বলে জানা নেই। সেখানকার কয়েকটি শ্রেণীর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গাছতলায় আশ্রয় নিয়েছে মূলত প্রাণভয়ে।


অস্বীকার করা যাবে না যে, শতবর্ষী বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কা থেকেও কোথাও কোথাও এ ধরনের আপদকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু কুলধুরুয়ার ভবনটি নির্মাণের মাত্র ১৫ বছর পরই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তার সামনেই ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ার পর তিনি সেখানে পাঠদান বারণ করেন। এই সতর্কতা সাধুবাদ পেতেই পারে। তবে তার চেয়ে জরুরি হচ্ছে, এর নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থ নয়-ছয় নয়; শিক্ষার্থীদের মূল্যবান প্রাণ ঝুঁকির মধ্যে ফেলা এবং শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করার দায়ও সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবিলম্বে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে অবহেলা করবে না। একই সঙ্গে ভবনটি সংস্কার, প্রয়োজনে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারটিও অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানাই আমরা। এখন না হয় গাছের ছায়া ও খোলা হাওয়া উপভোগ্য হচ্ছে। আর কিছুদিন পর ঝড়-বৃষ্টির দিনে কীভাবে পাঠদান চলবে, সেই জবাব কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয়রাও কিন্তু উদ্যোগী হতে পারেন। শিক্ষার জাতীয়করণের আগে আমাদের দেশে জনসাধারণের উদ্যোগেই শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। স্থানীয় উদ্যোগে নির্মিত অনেক বিদ্যায়তন এখনও গৌরব বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। নান্দাইলের সচেতন নাগরিকরা তাদের সন্তানের শিক্ষার জন্য কুলধুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী গৃহ কি নির্মাণ করতে পারে না? আমরা বিশ্বাস করি, উপযুক্ত উদ্যোগ নেওয়া হলে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেনই। কেবল এ ব্যাপারে নয়, সরকারের পক্ষে ভবন সংস্কার কিংবা নির্মাণের জন্যও যে স্থানীয়দের ঐক্য প্রয়োজন, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.