কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অসংগতি
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের একরকম গায়ের জোরে ভূমি অধিগ্রহণ দেখে বোঝা যায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অবস্থা কতটা অকার্যকর ও নাজুক। একাধিক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ সংগঠন, এমনকি বিচার বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় কেন জমি অধিগ্রহণ অব্যাহত রেখেছে সেটা
রহস্যজনকই বটে। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপত্তি তোলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কেন্দ্র নির্ধারণ করা স্থানে নির্মাণ করা হলে কী ধরনের সমস্যা বন্দরে ভোগ করতে হবে, তা সভায় তুলে ধরা হয়। সে সমস্যার কথা বন্দর কর্তৃপক্ষ তুলে ধরে, তা খুবই যৌক্তিক ও যথাযথ। ওই একই বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নিয়ম অনুযায়ী বিমানবন্দরের ১৫ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ৫০০ ফুটের অধিক উচ্চতার কোনো স্থাপনা সম্ভব নয়। অথচ চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর মাত্র আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উল্লেখ্য, যে বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া, বাষ্প ও উড়ন্ত ছাই নির্গত হবে তা বিমান চলাচলকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে। এর তিন মাস পর, ১৪ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে আরো একটি সভা হয়। সে সভায়ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তারা তাঁদের আপত্তির কারণগুলো তুলে ধরেন। এদিকে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে একটি রিট পিটিশন করা হয়। ফলে আদালত রুল জারি করেন। সংগঠনটি মামলা চলাকালে আদালতের কাছে স্থিতাবস্থার আবেদন জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একটি গাছ কাটলে ১৭টি গাছ রোপণ করার নির্দেশ দেন এবং এর সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের মতামত গ্রহণের নির্দেশ দেন। এত কিছুর পরও আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়া ও মাঝেরচর এলাকায় ৬৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ কেন অব্যাহত রাখা হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। সেখানে অবস্থিত শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি ও খামারের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। এ অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণের ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত না হয়, তাহলে কী হবে? এ অবস্থায় জমি অধিগ্রহণে মন্ত্রণালয়ের এত তাড়া কিসের? আমরা জানি, অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত পেতেও পিতা-পুত্রের জীবদ্দশা কেটে যায়। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে এখনই একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এলাকাবাসীকে চরম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা এবং পরিবেশ ও বন্দরের কথা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। তাই এ ব্যাপারে হুটহাট কিছু করে ফেলার অবকাশ নেই।
No comments