টিফা চুক্তি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন কৌশলঃ চাপের কাছে নতিস্বীকার কাম্য নয়
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তি (টিফা) সম্পাদনের লক্ষ্যে এখনও যে পুরোপুরি সক্রিয় তা বোঝা যায় এদেশের শ্রমমান পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল পাঠানোর উদ্যোগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ মাইকেল দোনাভানের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদল যে ফেব্রুয়ারি মাসেই আসছে, তা ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক চিঠি দিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শ্রমমান বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চিংড়ি ও ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। পর্যবেক্ষণ শেষে এ প্রতিনিধিদলের দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চিঠিতে একথাও মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি রিভিউ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের কোনো তথ্য যদি পাওয়া যায় তবে সেগুলো তুলে ধরা হবে ওই বৈঠকে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে টিফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে জোর লবিং চালাচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিধিদলটির আগমন ঘটতে যাচ্ছে, সেটা এখন স্পষ্ট। টিফা চুক্তি সম্পাদন না হলে বাংলাদেশের যে গুরুতর বাণিজ্যিক ক্ষতি হতে পারে, সে ব্যাপারে হুমকি প্রদর্শন খুব একটা প্রচ্ছন্ন থাকেনি মার্কিন দূতাবাসের চিঠিতে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ওয়াশিংটন টিফা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন চায়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাসহ ৩২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে টিফা চুক্তি করেছে। এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি মালদ্বীপকেও চাপ দেয়া হচ্ছে এ চুক্তিতে আসার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র যদি এতে সফল হয় তবে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটির বাণিজ্যিক প্রভাব যে আরও বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
টিফা চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশী পণ্য মার্কিন বাজারে প্রকারভেদে শুল্কমুক্তভাবে ও নামমাত্র শুল্কে প্রবেশাধিকার পাবে—একথা বলা হচ্ছে। তাত্ক্ষণিকভাবে টিফা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় মনে হওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তির একটি শর্ত হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ওপর যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে। এছাড়াও কপিরাইট ও শ্রমমান সংক্রান্ত শর্তাবলী বাংলাদেশকে জটিলতার জালে আটকে ফেলতে পারে। তাই ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে টিফা চুক্তির প্রস্তাব করা হলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে খুব একটা উত্সাহ দেখায়নি। কারণ, একটু তলিয়ে দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, টিফা হচ্ছে এক ধরনের অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তি। চুক্তিতে বর্ণিত সুবিধা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশকে প্রতি পদক্ষেপে মার্কিন খবরদারি সহ্য করতে হবে। আরও একটি ব্যাপার আছে বিবেচনা করার মতো। বলা হচ্ছে, টিফা চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে। অর্থাত্ এক্ষেত্রে সুবিধাদাতা দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সুবিধা গ্রহণকারী বাংলাদেশ। অতএব, এতে বাংলাদেশের উত্সাহ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে টিফা চুক্তির বদৌলতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে। মার্কিন বিদেশনীতির ধারাবাহিকতার সঙ্গে বিষয়টি একেবারেই বেমানান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বৃহত্ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার শীর্ষে ক্লিনটন, বুশ, ওবামার পালাবদল এবং ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের পাল্লাপাল্টি প্রাধান্য সত্ত্বেও বন্ধুত্বের এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিল্লি এখন ওয়াশিংটনের জুনিয়র পার্টনার, এমন কথা মিডিয়ায় হর-হামেশা প্রকাশ পায়। কাকতালীয়ভাবে দেশ দুটি বাংলাদেশকে নানারকম সুবিধা দেয়ার জন্য প্রায় সমান্তরালভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শতভাগ সফল’ ভারত সফরকালে দিল্লি বাংলাদেশকে যা দেয়ার দিয়ে দিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র উতলা হয়ে উঠেছে দেয়ার জন্য। আমরা জানি না শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মতো আরেকটি ‘শতভাগ সফল’ ওয়াশিংটন সফর আসন্ন কিনা। যদি তেমনটি ঘটে, যদি টিফা চুক্তি হয়েই যায়, তবে ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। অবশ্য এই ষোলকলা সর্বনাশের নাকি সর্বগ্রাসের সেটাই হচ্ছে কথা।
টিফা চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশী পণ্য মার্কিন বাজারে প্রকারভেদে শুল্কমুক্তভাবে ও নামমাত্র শুল্কে প্রবেশাধিকার পাবে—একথা বলা হচ্ছে। তাত্ক্ষণিকভাবে টিফা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় মনে হওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তির একটি শর্ত হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ওপর যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে। এছাড়াও কপিরাইট ও শ্রমমান সংক্রান্ত শর্তাবলী বাংলাদেশকে জটিলতার জালে আটকে ফেলতে পারে। তাই ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে টিফা চুক্তির প্রস্তাব করা হলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে খুব একটা উত্সাহ দেখায়নি। কারণ, একটু তলিয়ে দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, টিফা হচ্ছে এক ধরনের অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তি। চুক্তিতে বর্ণিত সুবিধা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশকে প্রতি পদক্ষেপে মার্কিন খবরদারি সহ্য করতে হবে। আরও একটি ব্যাপার আছে বিবেচনা করার মতো। বলা হচ্ছে, টিফা চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে। অর্থাত্ এক্ষেত্রে সুবিধাদাতা দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সুবিধা গ্রহণকারী বাংলাদেশ। অতএব, এতে বাংলাদেশের উত্সাহ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে টিফা চুক্তির বদৌলতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে। মার্কিন বিদেশনীতির ধারাবাহিকতার সঙ্গে বিষয়টি একেবারেই বেমানান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বৃহত্ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার শীর্ষে ক্লিনটন, বুশ, ওবামার পালাবদল এবং ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের পাল্লাপাল্টি প্রাধান্য সত্ত্বেও বন্ধুত্বের এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিল্লি এখন ওয়াশিংটনের জুনিয়র পার্টনার, এমন কথা মিডিয়ায় হর-হামেশা প্রকাশ পায়। কাকতালীয়ভাবে দেশ দুটি বাংলাদেশকে নানারকম সুবিধা দেয়ার জন্য প্রায় সমান্তরালভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শতভাগ সফল’ ভারত সফরকালে দিল্লি বাংলাদেশকে যা দেয়ার দিয়ে দিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র উতলা হয়ে উঠেছে দেয়ার জন্য। আমরা জানি না শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মতো আরেকটি ‘শতভাগ সফল’ ওয়াশিংটন সফর আসন্ন কিনা। যদি তেমনটি ঘটে, যদি টিফা চুক্তি হয়েই যায়, তবে ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। অবশ্য এই ষোলকলা সর্বনাশের নাকি সর্বগ্রাসের সেটাই হচ্ছে কথা।
No comments