জাতি কি কলঙ্কমুক্ত হলো? by মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন
ভাবছিলাম এবার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে লিখব। কিন্তু ঘটনাক্রমে বুধবার রাতে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত পাঁচজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় বিষয়টিকে বাদ দিয়ে অন্যকিছু লেখার ইচ্ছে ত্যাগ করতে হলো।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে একটা কথা আছে, সেটা হলো ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড এবং ২৭ জানুয়ারি, ২০১০ সালে সেই হত্যাকাণ্ডের দায়ে পাঁচজনের ফাঁসির বিষয়টি যে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এটা অস্বীকার করা যাবে না। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে কারণ নিহিত, সেই কারণ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এ থেকে জাতি যে কখনই কলঙ্কমুক্ত হবে না—এটা জোর দিয়েই বলা যায়। ফলে পাঁচজন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়ে গেল এই ধারণার বশে কেউ যদি আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তবে বলতে হবে তিনি বা তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছেন অথবা দেশের জনগণের সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে, ভবিষ্যতে জাতিকে কলঙ্কের মধ্য দিয়ে চলার ধারাবাহিকতার মধ্যে রেখে দিতে চাচ্ছেন। হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সমকাল প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাঙালি জাতির কলঙ্ক কালিমা মোচন হলো। বেদনার অশ্রুতে মাখা অগণিত দিবস রজনী শেষে আলো-আঁধারির অবগুণ্ঠন উন্মোচনের অনেক আগেই জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের ফাঁসিতে প্রাণ সংহার করা হলো। ঘাতকদের রক্ষা করার সর্বাত্মক অপচেষ্টা জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রহেলিকার জাল ছিন্ন হলো বুধবার রাতে (সূত্র : সমকাল, ২৮ জানুয়ারি, ২০১০)।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুব সহজভাবে যদি বলি তবে বলতে হয়, এ হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশ প্রশ্নে তত্কালীন পরাশক্তিসমূহের অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিণতি। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আমাদের তথা দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের কারও জন্য কাম্য নয়। কিন্তু কাম্য না হলেও বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা থেকে আমরা আজও মুক্ত হতে পারিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নামে এখনও এ দেশে অনেক হত্যাকাণ্ডই সংঘটিত হচ্ছে যাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্নে যতদিন বিদেশি পরাশক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করে চলবেন, নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্নে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চলার বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে পরাশক্তিসমূহের স্বার্থে কাজ করে যাবেন, ততদিন পর্যন্ত এ দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কাকেই আমরা জিইয়ে রাখব। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯-এ সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড তারই একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। কেউ যদি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় তবে তিনি এর পেছনের কারণ সম্পর্কে কিছুই অবগত নন। পরাশক্তিসমূহের স্বার্থের বিষয়কে বাংলাদেশে আরও গভীরতর করার প্রচেষ্টার সঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের যে গভীর সম্পর্ক আছে একথা এখন অস্বীকার করবেন এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে নিতান্তই গৌণ। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেয়াই ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। এই অর্থে এ হত্যাকাণ্ডকে অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলার কোনো যুক্তি নেই। ফলে একটি মাত্র ঘটনার বিচার করে, অভিযুক্ত পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়ে গেল, এ কথা বলার কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশ সেদিনই কলঙ্কমুক্ত হবে যেদিন এ দেশের ক্ষমতাধররা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে স্বাধীনভাবে অর্থাত্ কোনো পরাশক্তি বা আধিপত্যবাদী শক্তির চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উপযোগী হয়ে উঠবেন। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে যে অবস্থায় আছি এবং চলছি তাতে করে একথা বলা যাবে না যে, আমরা পরাশক্তি ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর স্বার্থের বলয় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে স্বাক্ষরিত চুক্তি, সমঝোতা ও যৌথ ইশতেহার প্রমাণ করে আমরা এখনও পরাশক্তি ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর বলয়ের মধ্যেই অবস্থান করছি। এই যদি হয় অবস্থা তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, যে কারণে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেই কারণ থেকে আমরা আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারিনি। অর্থাত্ দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত ৫ জনের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে যারা বলছেন জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো, তাদের বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। দেশ ও জনগণের কল্যাণের স্বার্থেই বিষয়টির গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করে আমাদের মানসিক গঠন সঠিকভাবে গড়ে তোলাই হবে এই সময়ের চাহিদা। এই চাহিদাকে উপেক্ষা করার অর্থ হবে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের ধারাবাহিকতায় ডুবে থাকা।
দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি আগ্রাসী শক্তিগুলো তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়ে এ দেশের জনগণকেই ব্যবহার করে। জনগণকে ব্যবহার করার ক্ষেত্র তখনই তৈরি হয় যখন দেশীয় ক্ষমতাধররা দেশ-জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোষ্ঠীগত বা দলীয় স্বার্থে পরাশক্তির তোষামোদী করে। এটা করতে গিয়ে যেসব দেশীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকা ও মননের উন্নতি ঘটানো সেসব সম্পদকে তারা বিদেশি আগ্রাসী পরাশক্তির স্বার্থের নাগপাশে বেঁধে ফেলে বিভিন্ন অসম চুক্তির মাধ্যমে। ফলে দেশের জনগণের জীবন-জীবিকা-মনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মধ্যে বিক্ষোভ ঘনীভূত হতে থাকে। এসব বিক্ষোভকে উস্কে দিয়ে পরাশক্তিগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়ায় যারা অংশগ্রহণ করে তারা হয়তো ভেবে বসে এই পথে তাদের মানসিক বিক্ষোভ প্রকাশিত হবে কিন্তু ঘটনাক্রমে তারা দেখতে পায় যেই তিমিরে তারা ছিল সেখানে কোনো আলোর প্রবেশ ঘটছে না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা আরও প্রকট হয় কিন্তু তখন তাদের আর করার কিছু থাকে না। যতদিন এদেশীয় রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা তাদের ক্ষমতার প্রশ্নে পরাশক্তিগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে বড় করে দেখবে ততদিন এদেশে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার স্বার্থের অন্তর্দ্বন্দ্বে এ দেশের জনগণকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রও প্রস্তুত থাকবে। স্বভাবতই আমরা বলতে পারি পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের ভিতকে দেশের অভ্যন্তরে অকেজো করার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে সমস্ত দেশীয় সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জীবন-জীবিকা ও মননের শান্তি বিধানে, সর্বোচ্চ মাত্রায় তাকে কাজে লাগানো। দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পথ বন্ধ করার এটাই মোক্ষম পথ। কিন্তু আমরা কি সেটা করছি বা আমাদের দেশীয় রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা কি সেটা করছে?
আমাদের দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা মোটেই সেটা করছে না। বিদেশি পরাশক্তিগুলোর স্বার্থে একের পর এক অসম চুক্তি তারা করেই যাচ্ছে। আর এ কারণেই এসব চুক্তির শর্তসমূহ গোপন রাখার প্রশ্নে তারা বেশি আগ্রহী। চুক্তি প্রকাশ হলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে দেশবাসী জেনে ফেলবে, প্রতিবাদ করবে, ফলে তাদের ক্ষমতার মসনদ দুর্বল হয়ে পড়বে—এটাই তাদের ভয়। মঞ্চে-সেমিনারে বক্তৃতায় তারা কঠিন দেশপ্রেমিক কিন্তু কাজে তা নয়। এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা যদি প্রকৃতই দেশপ্রেমিক হন তবে সেটা প্রমাণ করার উপায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জনগণের সামনে খোলামেলাভাবে প্রকাশ করা। কিন্তু আমাদের দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের ইতিহাস বলে বিপরীত কথা। অর্থাত্ বিদেশিদের স্বার্থে করা চুক্তি তারা গোপন রাখতেই ভালোবাসেন। গণতন্ত্রের প্রতি বা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ যদি তাদের থাকে তবে তারা বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তি অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আজকে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সম্পাদিত চুক্তির কথা বলে দেশ বিক্রির অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাদেরও উচিত নিজেদের স্বচ্ছতার স্বার্থে তাদের আমলে বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো প্রকাশ করা। তাহলে আমরা তথা এ দেশের জনগণ বুঝতে সক্ষম হব কারা দেশের স্বার্থে চুক্তি করেছেন আর কারা করেননি। যারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেননি তাদের আমরা প্রত্যাখ্যান করব আর যারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছেন তাদের গ্রহণ করব। কিন্তু নিজ আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো গোপন রেখে অন্যের আমলে করা চুক্তির দোহাই পেড়ে দেশপ্রেমিক সাজার কোনো যুক্তি নেই। তাই এই সময় সচেতন দেশবাসী যারা সব সময় দেশের স্বার্থের কথা বলে থাকেন তাদের একটি প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার, আর সেটা হলো বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যেসব চুক্তি বিদেশিদের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে তা সব জনগণের সামনে পূর্ণাঙ্গাকারে প্রকাশ করার দাবি তোলা। রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের মধ্যে যারা এই প্রশ্নে ইতিবাচক সাড়া দেবেন এবং জনসমক্ষে চুক্তিগুলো পূর্ণাঙ্গাকারে তুলে ধরবেন তাদের আমরা স্বাগত জানাব। এই ক্ষেত্রে জনমত যত শক্তিশালী হবে, রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা বাধ্য হবে চুক্তিগুলো প্রকাশ করতে। আর আমরা এটাই চাই। গোপনীয়তার গোলকধাঁধায় বন্দি হয়ে কাউকে দেশপ্রেমিক আর কাউকে দেশ বিক্রেতা বলে অভিহিত করতে চাই না। চুক্তিগুলো প্রকাশিত হলে আমরাই বুঝে নেব কারা দেশপ্রেমিক, আর কারা দেশ বিক্রেতা। চুক্তি গোপন রেখে বলবেন আমরা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেইনি, এটা বিশ্বাস করা যাবে না। অভিযোগ যখন উঠেছে দেশ বিক্রির তখন তা খণ্ডন করার জন্য চুক্তির গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিত নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৫ ও ১৪৫ (ক)তে বলা হয়েছে বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার কথা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা যখন শপথ নেন তখন বলেন যে, সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব। বিদেশের সহিত সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার সাংবিধানিক বিধান থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা যদি তা না করেন তবে সেসব রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ হয়ে পড়েন—এটা কি অস্বীকার করা যাবে? বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার সাংবিধানিক বিধানটি যদি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা না মেনে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন তবে বলা যাবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছেন তাদের ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়। আর এই অবৈধ ক্ষমতাকে কেউ যদি শক্তির বলে উচ্ছেদ করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বা সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে দেশ শাসন করার দায়ভার গ্রহণ করেন তাকে কি অবৈধ বলা যাবে?
অর্থাত্ বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে চলার মানসিকতা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে উত্সাহিত করার রাস্তা পরিষ্কার করে। তাই অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে উত্সাহিত করতে না চাইলে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের এই মুহূর্তেই করণীয় হবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করা। আর তারা যদি এই কাজটি না করেন তবে বলতে হবে তাদের কারণেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি উত্সাহিত হবে এবং এর পরিণতিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। যদি এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা সেটা না করেন, তবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ভবিষ্যত্ ঝুঁকিকেই তারা উত্সাহিত করবে।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুব সহজভাবে যদি বলি তবে বলতে হয়, এ হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশ প্রশ্নে তত্কালীন পরাশক্তিসমূহের অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিণতি। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আমাদের তথা দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের কারও জন্য কাম্য নয়। কিন্তু কাম্য না হলেও বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা থেকে আমরা আজও মুক্ত হতে পারিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নামে এখনও এ দেশে অনেক হত্যাকাণ্ডই সংঘটিত হচ্ছে যাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্নে যতদিন বিদেশি পরাশক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করে চলবেন, নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্নে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চলার বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে পরাশক্তিসমূহের স্বার্থে কাজ করে যাবেন, ততদিন পর্যন্ত এ দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কাকেই আমরা জিইয়ে রাখব। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯-এ সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড তারই একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। কেউ যদি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় তবে তিনি এর পেছনের কারণ সম্পর্কে কিছুই অবগত নন। পরাশক্তিসমূহের স্বার্থের বিষয়কে বাংলাদেশে আরও গভীরতর করার প্রচেষ্টার সঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের যে গভীর সম্পর্ক আছে একথা এখন অস্বীকার করবেন এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে নিতান্তই গৌণ। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেয়াই ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। এই অর্থে এ হত্যাকাণ্ডকে অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলার কোনো যুক্তি নেই। ফলে একটি মাত্র ঘটনার বিচার করে, অভিযুক্ত পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়ে গেল, এ কথা বলার কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশ সেদিনই কলঙ্কমুক্ত হবে যেদিন এ দেশের ক্ষমতাধররা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে স্বাধীনভাবে অর্থাত্ কোনো পরাশক্তি বা আধিপত্যবাদী শক্তির চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উপযোগী হয়ে উঠবেন। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে যে অবস্থায় আছি এবং চলছি তাতে করে একথা বলা যাবে না যে, আমরা পরাশক্তি ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর স্বার্থের বলয় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে স্বাক্ষরিত চুক্তি, সমঝোতা ও যৌথ ইশতেহার প্রমাণ করে আমরা এখনও পরাশক্তি ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর বলয়ের মধ্যেই অবস্থান করছি। এই যদি হয় অবস্থা তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, যে কারণে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেই কারণ থেকে আমরা আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারিনি। অর্থাত্ দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত ৫ জনের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে যারা বলছেন জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো, তাদের বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। দেশ ও জনগণের কল্যাণের স্বার্থেই বিষয়টির গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করে আমাদের মানসিক গঠন সঠিকভাবে গড়ে তোলাই হবে এই সময়ের চাহিদা। এই চাহিদাকে উপেক্ষা করার অর্থ হবে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের ধারাবাহিকতায় ডুবে থাকা।
দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি আগ্রাসী শক্তিগুলো তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়ে এ দেশের জনগণকেই ব্যবহার করে। জনগণকে ব্যবহার করার ক্ষেত্র তখনই তৈরি হয় যখন দেশীয় ক্ষমতাধররা দেশ-জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোষ্ঠীগত বা দলীয় স্বার্থে পরাশক্তির তোষামোদী করে। এটা করতে গিয়ে যেসব দেশীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকা ও মননের উন্নতি ঘটানো সেসব সম্পদকে তারা বিদেশি আগ্রাসী পরাশক্তির স্বার্থের নাগপাশে বেঁধে ফেলে বিভিন্ন অসম চুক্তির মাধ্যমে। ফলে দেশের জনগণের জীবন-জীবিকা-মনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মধ্যে বিক্ষোভ ঘনীভূত হতে থাকে। এসব বিক্ষোভকে উস্কে দিয়ে পরাশক্তিগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়ায় যারা অংশগ্রহণ করে তারা হয়তো ভেবে বসে এই পথে তাদের মানসিক বিক্ষোভ প্রকাশিত হবে কিন্তু ঘটনাক্রমে তারা দেখতে পায় যেই তিমিরে তারা ছিল সেখানে কোনো আলোর প্রবেশ ঘটছে না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা আরও প্রকট হয় কিন্তু তখন তাদের আর করার কিছু থাকে না। যতদিন এদেশীয় রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা তাদের ক্ষমতার প্রশ্নে পরাশক্তিগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে বড় করে দেখবে ততদিন এদেশে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার স্বার্থের অন্তর্দ্বন্দ্বে এ দেশের জনগণকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রও প্রস্তুত থাকবে। স্বভাবতই আমরা বলতে পারি পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের ভিতকে দেশের অভ্যন্তরে অকেজো করার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে সমস্ত দেশীয় সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জীবন-জীবিকা ও মননের শান্তি বিধানে, সর্বোচ্চ মাত্রায় তাকে কাজে লাগানো। দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পথ বন্ধ করার এটাই মোক্ষম পথ। কিন্তু আমরা কি সেটা করছি বা আমাদের দেশীয় রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা কি সেটা করছে?
আমাদের দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা মোটেই সেটা করছে না। বিদেশি পরাশক্তিগুলোর স্বার্থে একের পর এক অসম চুক্তি তারা করেই যাচ্ছে। আর এ কারণেই এসব চুক্তির শর্তসমূহ গোপন রাখার প্রশ্নে তারা বেশি আগ্রহী। চুক্তি প্রকাশ হলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে দেশবাসী জেনে ফেলবে, প্রতিবাদ করবে, ফলে তাদের ক্ষমতার মসনদ দুর্বল হয়ে পড়বে—এটাই তাদের ভয়। মঞ্চে-সেমিনারে বক্তৃতায় তারা কঠিন দেশপ্রেমিক কিন্তু কাজে তা নয়। এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা যদি প্রকৃতই দেশপ্রেমিক হন তবে সেটা প্রমাণ করার উপায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জনগণের সামনে খোলামেলাভাবে প্রকাশ করা। কিন্তু আমাদের দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের ইতিহাস বলে বিপরীত কথা। অর্থাত্ বিদেশিদের স্বার্থে করা চুক্তি তারা গোপন রাখতেই ভালোবাসেন। গণতন্ত্রের প্রতি বা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ যদি তাদের থাকে তবে তারা বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তি অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আজকে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সম্পাদিত চুক্তির কথা বলে দেশ বিক্রির অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাদেরও উচিত নিজেদের স্বচ্ছতার স্বার্থে তাদের আমলে বিদেশিদের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো প্রকাশ করা। তাহলে আমরা তথা এ দেশের জনগণ বুঝতে সক্ষম হব কারা দেশের স্বার্থে চুক্তি করেছেন আর কারা করেননি। যারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেননি তাদের আমরা প্রত্যাখ্যান করব আর যারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছেন তাদের গ্রহণ করব। কিন্তু নিজ আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো গোপন রেখে অন্যের আমলে করা চুক্তির দোহাই পেড়ে দেশপ্রেমিক সাজার কোনো যুক্তি নেই। তাই এই সময় সচেতন দেশবাসী যারা সব সময় দেশের স্বার্থের কথা বলে থাকেন তাদের একটি প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার, আর সেটা হলো বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যেসব চুক্তি বিদেশিদের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে তা সব জনগণের সামনে পূর্ণাঙ্গাকারে প্রকাশ করার দাবি তোলা। রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের মধ্যে যারা এই প্রশ্নে ইতিবাচক সাড়া দেবেন এবং জনসমক্ষে চুক্তিগুলো পূর্ণাঙ্গাকারে তুলে ধরবেন তাদের আমরা স্বাগত জানাব। এই ক্ষেত্রে জনমত যত শক্তিশালী হবে, রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা বাধ্য হবে চুক্তিগুলো প্রকাশ করতে। আর আমরা এটাই চাই। গোপনীয়তার গোলকধাঁধায় বন্দি হয়ে কাউকে দেশপ্রেমিক আর কাউকে দেশ বিক্রেতা বলে অভিহিত করতে চাই না। চুক্তিগুলো প্রকাশিত হলে আমরাই বুঝে নেব কারা দেশপ্রেমিক, আর কারা দেশ বিক্রেতা। চুক্তি গোপন রেখে বলবেন আমরা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেইনি, এটা বিশ্বাস করা যাবে না। অভিযোগ যখন উঠেছে দেশ বিক্রির তখন তা খণ্ডন করার জন্য চুক্তির গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিত নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৫ ও ১৪৫ (ক)তে বলা হয়েছে বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার কথা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা যখন শপথ নেন তখন বলেন যে, সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব। বিদেশের সহিত সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার সাংবিধানিক বিধান থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা যদি তা না করেন তবে সেসব রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ হয়ে পড়েন—এটা কি অস্বীকার করা যাবে? বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে পেশ করার সাংবিধানিক বিধানটি যদি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা না মেনে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন তবে বলা যাবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছেন তাদের ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়। আর এই অবৈধ ক্ষমতাকে কেউ যদি শক্তির বলে উচ্ছেদ করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বা সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে দেশ শাসন করার দায়ভার গ্রহণ করেন তাকে কি অবৈধ বলা যাবে?
অর্থাত্ বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে চলার মানসিকতা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে উত্সাহিত করার রাস্তা পরিষ্কার করে। তাই অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে উত্সাহিত করতে না চাইলে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের এই মুহূর্তেই করণীয় হবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করা। আর তারা যদি এই কাজটি না করেন তবে বলতে হবে তাদের কারণেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি উত্সাহিত হবে এবং এর পরিণতিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে নিজ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাষ্ট্র ক্ষমতাধরদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। যদি এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা সেটা না করেন, তবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ভবিষ্যত্ ঝুঁকিকেই তারা উত্সাহিত করবে।
No comments