অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতিঃ বুঝেশুনে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা উচিত
চলতি অর্থবছরের (২০০৯-২০১০) প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, লক্ষ্য নির্ধারণ ও নীতিমালা প্রণয়নকালে আমরা বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে কল্পনা বিলাসকে প্রশ্রয় দিতে অভ্যস্ত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রণীত রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি রয়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, আয়কর, ভ্রমণ কর এবং অন্যান্য কর মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বাজেটের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০০৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৬ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। অর্থাত্ ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে। এ খাতে ৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এনবিআর অবশ্য দাবি করেছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায়ের গতি কিছুটা মন্থর থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে শেষের দিকে আদায় বেড়ে যায়। তাই এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে এনবিআর এখনও আশাবাদী। কিন্তু আয়কর খাতে সাধারণত অর্থবছরের প্রথমার্ধে আদায়ের পরিমাণ বেশি থাকে। অথচ এ খাতেই ঘাটতি রয়েছে সর্বাধিক। তারপরও যদি এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে, সেটা একটা বড় সাফল্য বলে বিবেচিত হবে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পূর্ববর্তী ২০০৮-০৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। ধারণা করা হয়েছিল, দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে জাতীয় অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই শুধু নয়, বরং সহজেই টপকে যাওয়া যাবে। বিশ্ব অর্থনীতি থেকে মন্দার ছায়া ক্রমশ কেটে যেতে থাকায় এ ধারণা দৃঢ় প্রত্যয়ে রূপ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে একাধিক কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত গতি লাভ করতে পারেনি। উপরন্তু কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলতে শুরু করেছেন, বিশ্বমন্দার প্রভাব আমাদের দেশে দেরিতে পড়তে শুরু করেছে এবং এ বছর তার নেতিবাচক প্রভাব আমরা তীব্রতরভাবে অনুভব করব বিশ্বব্যাপী মন্দা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও। যদি অর্থনীতিবিদদের এ আশঙ্কা সত্য হয় এবং অর্থনীতির গতি না বাড়ে, তবে এনবিআরের আশাবাদ নিষম্ফল প্রমাণিত হতে পারে। যদি তাই ঘটে, তবে শেষ পর্যন্ত আগের বছরগুলোর মতো রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে মুখরক্ষার চেষ্টা চলবে। কিন্তু তাতে মুখরক্ষা করা গেলেও বাজেটের ওপর যে ধাক্কা আসবে, তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে উন্নয়ন বাজেট সঙ্কুচিত করা, তথা এডিপি কাটছাঁট করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। সে পথেই আমরা যে হাঁটব, তার লক্ষণ এখন বেশ স্পষ্ট।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী যেমন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে হাত করে ফেলে, আবার অন্যদিকে ক্ষেত্রবিশেষে এনবিআরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নিরুপদ্রবে মোটা অংকের ঘুষ খাওয়ার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বাঁকা পথ অবলম্বনে বাধ্য করে। উভয়ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। এতে যে অশুভ চক্র গড়ে উঠেছে, তা ভাঙার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করা হলেও মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা, সততা ও কুশলতার অভাবে প্রতিবারই এসব উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। ফলে যে টাকা রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ার কথা, তা চলে যাচ্ছে অন্যখানে। এতে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অবৈধ বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছেন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত অনেকে কালো টাকার বদৌলতে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে রাজস্ব আদায়ে নিয়োজিত সরকারি অফিসগুলোর সামনে যেভাবে সর্বোত্কৃষ্ট দামি খাদ্যপণ্যের অস্থায়ী বাজার বসে, তাতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, রাজস্ব আদায়ে কেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসে না। এই ছিদ্র বন্ধ করা গেলে সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে অর্থনীতিতে মন্দা চলা সত্ত্বেও।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পূর্ববর্তী ২০০৮-০৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। ধারণা করা হয়েছিল, দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে জাতীয় অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই শুধু নয়, বরং সহজেই টপকে যাওয়া যাবে। বিশ্ব অর্থনীতি থেকে মন্দার ছায়া ক্রমশ কেটে যেতে থাকায় এ ধারণা দৃঢ় প্রত্যয়ে রূপ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে একাধিক কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত গতি লাভ করতে পারেনি। উপরন্তু কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলতে শুরু করেছেন, বিশ্বমন্দার প্রভাব আমাদের দেশে দেরিতে পড়তে শুরু করেছে এবং এ বছর তার নেতিবাচক প্রভাব আমরা তীব্রতরভাবে অনুভব করব বিশ্বব্যাপী মন্দা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও। যদি অর্থনীতিবিদদের এ আশঙ্কা সত্য হয় এবং অর্থনীতির গতি না বাড়ে, তবে এনবিআরের আশাবাদ নিষম্ফল প্রমাণিত হতে পারে। যদি তাই ঘটে, তবে শেষ পর্যন্ত আগের বছরগুলোর মতো রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে মুখরক্ষার চেষ্টা চলবে। কিন্তু তাতে মুখরক্ষা করা গেলেও বাজেটের ওপর যে ধাক্কা আসবে, তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে উন্নয়ন বাজেট সঙ্কুচিত করা, তথা এডিপি কাটছাঁট করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। সে পথেই আমরা যে হাঁটব, তার লক্ষণ এখন বেশ স্পষ্ট।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী যেমন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে হাত করে ফেলে, আবার অন্যদিকে ক্ষেত্রবিশেষে এনবিআরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নিরুপদ্রবে মোটা অংকের ঘুষ খাওয়ার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বাঁকা পথ অবলম্বনে বাধ্য করে। উভয়ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। এতে যে অশুভ চক্র গড়ে উঠেছে, তা ভাঙার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করা হলেও মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা, সততা ও কুশলতার অভাবে প্রতিবারই এসব উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। ফলে যে টাকা রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ার কথা, তা চলে যাচ্ছে অন্যখানে। এতে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অবৈধ বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছেন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত অনেকে কালো টাকার বদৌলতে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে রাজস্ব আদায়ে নিয়োজিত সরকারি অফিসগুলোর সামনে যেভাবে সর্বোত্কৃষ্ট দামি খাদ্যপণ্যের অস্থায়ী বাজার বসে, তাতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, রাজস্ব আদায়ে কেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসে না। এই ছিদ্র বন্ধ করা গেলে সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে অর্থনীতিতে মন্দা চলা সত্ত্বেও।
No comments