সংকটে শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন-গতি আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড শক্ত না হলে যেমন কোনো মানুষ দাঁড়াতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি দাঁড়াতে পারে না। মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির পক্ষে এগিয়ে যাওয়া কিংবা উন্নতি করা অসম্ভব। আর তাই বর্তমান মহাজোট সরকার ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল।


অধিকাংশ মানুষই এই শিক্ষানীতির প্রশংসা করেছিল। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি যদি কাজীর গরুর মতো শুধু কেতাবেই থেকে যায়, তাহলে লাভ কী? শিক্ষানীতির বাস্তবায়নে যে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কারণ হিসেবে যেমন রয়েছে আর্থিক সংকট, তেমনি রয়েছে কথিত দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা। ফলে নতুন শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণীর বদলে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, গত দুই বছরেও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা অবকাঠামো। আর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো অর্থ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নেই ছয়-সাত বছর লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে যত জন শিক্ষক আছেন, তা দিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এ জন্য আরো অনেক শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের কাজও খুব একটা এগোয়নি। বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তার কোনো সম্ভাবনাই নেই। অন্যদিকে দেশে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু আইনি সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বিবেচিত হলেও সে ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষক নিয়োগে আলাদা কমিশন গঠনের বিষয়টিও এখনো ঝুলে আছে। এ অবস্থায় আমরা শিক্ষানীতির কাঙ্ক্ষিত সুফল কোনোভাবেই আশা করতে পারি না।
শিক্ষা খাতে দুর্নীতিও শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি বড় বাধা হয়ে বিরাজ করছে। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শিক্ষা ভবনের দুর্নীতি যেন নতুন করে ডালপালা বিস্তার করছে। দেশের ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, এমপিওভুক্তি, টাইম স্কেলসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের নানা রকম সুযোগ-সুবিধা এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন আবেদন বছরের পর বছর ফাইলচাপা পড়ে থাকে, না হয় হারিয়ে যায়। শিক্ষক-কর্মচারীরা জানেন, শিক্ষা ভবনে এলেই নাকের পানি-চোখের পানি একাকার হয়ে যাবে। তবু তাঁরা এখানে আসতে বাধ্য হন। শিক্ষকের মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে তাঁরা পিয়ন বা কেরানিদের পেছন পেছন দৌড়ান। এই যদি হয় শিক্ষকদের মূল্যায়ন, তাহলে এ দেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে কি?
আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার তাদের প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। অনেক দেশেই শিক্ষা খাতে ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশেও একই বিবেচনা থেকে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হোক।

No comments

Powered by Blogger.