সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড-তদন্তে অগ্রগতি নেই হাইকোর্ট বললেন ফলাফল জিরো

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ক্লু মেলেনি দীর্ঘ দুই মাসেও। ডাকাতি নাকি বিরোধের জের ধরে এ জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা-ও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। দীর্ঘ দুই মাসেও হত্যার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।


তলব করা হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম ও তদন্ত কর্মকর্তা রবিউল আলমকে। মামলার নথিপত্র নিয়ে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। হাইকোর্ট বলেন, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন, সেখানে এই মামলায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তের ফল জিরো। পুলিশ কী করছে? দুই মাসেও কোনো ক্লু পায়নি কেন? কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি কেন?
তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন আদালতে বলেন, পুলিশ দুটি দিক নিয়ে তদন্ত করছে। শিগগিরই তদন্তের ফল পাওয়া যাবে।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের বিষয়ে গত ২১ মার্চ পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন গতকাল দুপুরে হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশের পর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ২২ মার্চ এবং তদন্ত কর্মকর্তা ২১ মার্চ পৃথকভাবে দুটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদন দুটি প্রায় একই রকম। এরপর তিনি তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদন পাঠ করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা রবিউল আলম স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদনের শেষ অংশে বলা হয়, 'দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমত, সংঘবদ্ধ পেশাদার কোনো গ্রুপ ডাকাতি করতে এসে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটন করেছে কি না। দ্বিতীয়ত, ভিকটিমদ্বয়ের ব্যক্তিগত/পারিবারিক/পেশাগত কোনো প্রতিপক্ষ দ্বারা হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে কি না। এ লক্ষ্যে ঘটনাস্থল, বাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার, পরিচারক-পরিচারিকা, অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ, বাড়ির মালিক, অতিথিবর্গ, আশপাশের ব্যক্তিবর্গ, তাঁদের সহকর্মীবৃন্দ, সম্ভাব্য শক্রপক্ষসহ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'বাদীর পরবর্তী সম্পূরক অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। পেশাদার অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করে জড়িত থাকার ব্যাপারে সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ঘটনাস্থল থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে সম্ভাব্য সকল প্রকার অভিযান চলছে। এ ব্যাপারে গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আসামি গ্রেপ্তারসহ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।'
রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, 'এটা একটা পাবলিক ডকুমেন্ট। এ প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আরো আগেই এসেছে। কিন্তু আমাকে অনুলিপি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এটা কনফিডেনশিয়াল। কিন্তু আজ দেখলাম, যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে তাতে কোনো অগ্রগতির কথা বলা নেই। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। রেজাল্ট জিরো।' তিনি বলেন, 'এ ধরনের চাঞ্চল্যকর একটা মামলায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়োগ না করে একজন পরিদর্শককে দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে। এ ধরনের নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এই মামলায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই উদ্বিগ্ন। যারা এই তদন্ত করছে, তারা কেন তদন্তকে এগিয়ে নিতে পারছে না? এদের পুলিশ বিভাগে থাকা উচিত নয়।'
এ সময় আদালত বলেন, 'আমাদের আদেশ দেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে রুমানা মঞ্জুরের ঘটনায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো। অথচ দুই মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি। ফলাফল জিরো। কেন?'
জবাবে এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, তদন্ত ভালোভাবেই চলছে। শিগগিরই ফল পাওয়া যাবে। মামলার এফআইআর কোথায়- আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে আলতাফ হোসেন বলেন, 'এখানে কপি নেই।'
এ সময় মনজিল মোরসেদ বলেন, এ মামলায় তদন্তকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য জানা দরকার। তারা আদালতে এসে বক্তব্য দিক। এ জন্য আদালত একটি আদেশ দিতে পারেন। এরপর আদালত আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। এই জোড়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)' হাইকোর্টে রিট করে। এই রিট আবেদনে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুল জারি করেন। এ ছাড়া আদালত ২২ মার্চের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.