শ্রীলঙ্কাঃ নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি by ড. মাহবুব উল্লাহ্
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী মাহিন্দা রাজাপাকসে নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি (বুধবার) আনুষ্ঠানিকভাবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।
তিনি আগামী ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হলেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মাহিন্দা রাজাপাকসে ৫৭ শতাংশ এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল শরত্ ফনসেকা পেয়েছেন ৪০ শতাংশ ভোট। অন্য প্রার্থীরা পেয়েছেন মোট ৩ শতাংশ। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের জন্য এটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিজয়। তার মুখপাত্র চন্দ্রপালা লিয়ানাগে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ১৮ লাখের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোট পড়েছে ১ কোটিরও বেশি। নির্বাচনী ফলাফলে রাজাপাকসে খুবই আনন্দিত এবং তিনি সব ভোটারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু তামিল অধ্যুষিত এলাকায় ভোট দেয়ার হার ছিল খুবই কম। ওই এলাকায় ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন বলেছে, তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে অনেকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শ্রীলঙ্কার রাজনীতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলেছে। ভোটের ব্যবধান বিপুল হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সারাথ ফনসেকা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ফলাফল চ্যালেঞ্জেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন সাবেক এ জেনারেল। নির্বাচনের আগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফনসেকা। সরকারি সংবাদ মাধ্যম ও টেলিভিশনের ব্যাপক অপব্যবহার করা হয়েছে। তার সমর্থকদের ভোট দিতে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার তাকে হত্যা করতে চাইছে। সাবেক সেনাপ্রধান ফনসেকা কয়েকজন বিরোধী নেতাসহ কলম্বোর যে বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছেন, সেটি ঘিরে রেখেছে ভারি অস্ত্রসজ্জিত সেনাসদস্যরা। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উদয়া নানা য়িক্করা বলেছেন, হোটেলের ভেতরে প্রায় চারশ’ লোক অবস্থান করছে। নানা য়িক্করা বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান তাদের লক্ষ্য নন। তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। তিনি স্বাধীনভাবে হোটেল ত্যাগ করতে পারবেন। প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, জেনারেল ফনসেকা ইচ্ছা করলে হোটেল থেকে চলে যেতে পারেন। তবে নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন, সে ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হতে পারে।
নির্বাচনে ভোটের যে ব্যবধান তা দেখে মনে হয় নির্বাচনের আগে কথিত অনিয়মের আশ্রয় না নিলেও রাজাপাকসে জয়লাভ করতেন; কিন্তু বিপুলভাবে জয়লাভ করার পর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক জেনারেল ফনসেকা একটি হোটেলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তা দেখে বিসদৃশ মনে হয়। আসলে নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে তিক্ততা এত তীব্র হয়ে ওঠে যে, এখন নির্বাচনের ফলাফলের পর পরাজিত প্রধান প্রার্থীর জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার জন্য এরকম পরিস্থিতি কোনো প্রকার শুভ ইঙ্গিত দেয় না। গত বছর শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে নির্ধারক এক অভিযান চালায়। এ অভিযানে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে এবং তাদের নেতা প্রভাকরণ নিহত হন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং সামরিক নেতৃত্ব দেন শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান জেনারেল সারাথ ফনসেকা। এর আগে শ্রীলঙ্কার সরকার ও তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে নরওয়েজীয় উদ্যোগে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা চলে। সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শ্রীলঙ্কা সরকার সামরিক সমাধানের পথই বেছে নেয়। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সরকার সামরিকভাবে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। যেভাবে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বছরের পর বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করছিল এবং বৈদেশিক সাহায্যে মারমুখী হয়ে উঠেছিল তার ফলে সামরিকভাবে শ্রীলঙ্কার সরকার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারবে, সে ব্যাপারে অনেকেরই আস্থা ছিল না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের রাজনৈতিক দৃঢ়তা এবং শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মরণপণ লড়াই বিজয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিত করে তোলে। পাশ্চাত্যের বৃহত্ শক্তিগুলো শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল না। প্রতিবেশী ভারত ছিল বৈরী। যুদ্ধে যখন শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী একের পর এক বিজয় অর্জন করছিল তখন ভারত মানবাধিকারের অজুহাত তুলে শ্রীলঙ্কা সরকারকে সংযম অবলম্বনের জন্য চাপ দিচ্ছিল। শ্রীলঙ্কা সরকার ভারতীয় চাপের কাছে নতিস্বীকার করলে বিজয় তো দূরের কথা শ্রীলঙ্কা আজও রক্তাক্ত হতো।
যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে এবং জেনারেল সরথ ফনসেকা উভয়েই জাতীয় বীরে পরিণত হন; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক দেশে যুগপত্ দু’জন জাতীয় বীর থাকবেন এবং দু’জনের মধ্যেই চমত্কার সম্পর্ক থাকবে—শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা দেখে মনে হয়, এ যেন প্রায় অসম্ভব। যুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে সেনাপ্রধান চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, আত্মসমর্পণকারী তামিল বিদ্রোহীদের হত্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে একে অপরের চরম প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় বিশাল বিজয়ের পর এই অনৈক্য এবং পারস্পরিক তিক্ততা কোনোক্রমেই শ্রীলঙ্কার জন্য শুভ সঙ্কেত দেয় না।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার মেয়াদ দু’বছর অবশিষ্ট থাকার আগেই জনগণের কাছ থেকে নতুন ম্যান্ডেট নেয়ার জন্য নির্বাচন ঘোষণা দেন।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এরকম ঔদার্য বিরল ঘটনা বটে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে কেন এ ঔদার্যের পথ বেছে নিলেন, সেই সম্পর্কে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হলো রাজাপাকসে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের সুযোগ পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি শুধু রাষ্ট্রপ্রধানই ছিলেন না, তিনি শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর প্রধান অধিনায়কও ছিলেন। সরথ ফনসেকা যদি হঠাত্ সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ না করতেন তাহলে বিজয় অর্জনের পুরো গৌরবই নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি দাবি করতে পারতেন। অবশ্য এ বিষয়ে রাজাপাকসের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তার দাবি হলো তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থেই আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ অবলম্বন করেছেন। ২০০৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তামিলরা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। কারণ, সশস্ত্র তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংস্থা লিবারেশন টাইগার অব তামিল ইলম নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিল। উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মূল তামিল ভূখণ্ডের বাইরেও তামিলরা এরকম পরিস্থিতিতে ভোট দিতে উত্সাহী হয়নি। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দাবি করেছেন, আগাম নির্বাচন দেয়ার পেছনে একটি মহত্ উদ্দেশ্য কাজ করেছে। উদ্দেশ্যটি হলো, যুদ্ধপরবর্তী জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট গ্রহণ। এ ম্যান্ডেটের আওতা উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের তামিল জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জাতিগত যুদ্ধের ক্ষেত্রে সামরিক বিজয় অর্জন এক কথা; কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিসত্তাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া ভিন্ন কথা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বটে। তামিল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, তাদের শ্রীলঙ্কার রাজনীতির মূলস্রোত থেকে প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তারা মনে করে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তারা সংখ্যালঘু হওয়ার ফলে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নির্বাচনের পর সামান্যই গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থাত্ এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ তামিলদের মনে কাজ করত।
সাবেক জেনারেল ফনসেকা নির্বাচনী লড়াইয়ে তামিল সমর্থন অর্জনের প্রয়াস নেন। তামিল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মুখপাত্র তামিল ন্যাশনাল পার্টিরও তিনি সমর্থন অর্জন করেছিলেন। যুদ্ধের সময় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি নিজেকে তামিলদের কাছে অনেকটা গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। ধারণা করা হয়েছিল, তামিলরা একযোগে ফনসেকাকে সমর্থন করলে এবং সিংহলিদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে তার বিজয় অসম্ভব কিছু হবে না। ফলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করলেন, নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং ফনসেকার জয়ী হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। তামিলরা ভোটকেন্দ্রে এসেছে খুবই কম হারে। তদুপরি তাদের অনেকে ভোটার না হওয়ার কারণে ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এরকম কিছু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, এখনও অনেক তামিল আশ্রয় শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। তত্সত্ত্বেও তামিলদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ তাদের শ্রীলঙ্কার মূল রাজনৈতিক ধারায় অংশগ্রহণের প্রবণতারই প্রমাণ। যেখানে ২০০৫’র নির্বাচনে তামিলরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি বললেই চলে, সেখানে এটি একটি বিরাট অগ্রগতি।
যুদ্ধোত্তর শ্রীলঙ্কাকে পুনর্নির্মাণ ও ঐক্যবদ্ধ করা একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে যদি ধৈর্য ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির ব্যবহার না করেন তাহলে এটি দুরূহতর হয়ে উঠবে। নির্বাচনোত্তর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে অনুমান করা যায়, শ্রীলঙ্কার রাজনীতি আগামী দিনে নিস্তরঙ্গ থাকবে না। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ফনসেকার মুখপাত্র মানোগনেশান বলেছেন, তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি সাহায্যের আবেদন জানাবেন। তিনি বলেন, ‘ফনসেকার নিরাপত্তার জন্য আমি প্রতিবেশী একটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।’ প্রতিবেশী দেশ বলতে তিনি সম্ভবত ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনার নির্মম পরিহাসই বলতে হবে। যে ফনসেকা একদিন নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এবং ভারতীয় হস্তক্ষেপের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সঙ্কল্পবদ্ধ ছিলেন সেই ফনসেকার নিরাপত্তার জন্য ভারতীয় সহায়তা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সোজা কথায়, ভারতকে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নাক গলানোর জন্য আমন্ত্রণ জ্ঞাপন। দেশীয় রাজনীতিতে অন্তর্বিরোধের ফলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কামনা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে একজন সাবেক সেনাপ্রধানের পক্ষে যখন এ রকম হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়, তখন পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের অনৈতিক রাজনীতি চালু আছে। গৃহবিবাদ থাকলে তার সুযোগে বাইরের লোকদের নাক গলানো অসম্ভব কিছু নয়। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে রাজনৈতিক পেশীর জোরে প্রতিপক্ষকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেয়াও চরম অপরিণামদর্শিতা। বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে শ্রীলঙ্কা যাতে কোনো রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে না পড়ে সেটাই আমাদের কামনা।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু তামিল অধ্যুষিত এলাকায় ভোট দেয়ার হার ছিল খুবই কম। ওই এলাকায় ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন বলেছে, তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে অনেকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শ্রীলঙ্কার রাজনীতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলেছে। ভোটের ব্যবধান বিপুল হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সারাথ ফনসেকা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ফলাফল চ্যালেঞ্জেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন সাবেক এ জেনারেল। নির্বাচনের আগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফনসেকা। সরকারি সংবাদ মাধ্যম ও টেলিভিশনের ব্যাপক অপব্যবহার করা হয়েছে। তার সমর্থকদের ভোট দিতে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার তাকে হত্যা করতে চাইছে। সাবেক সেনাপ্রধান ফনসেকা কয়েকজন বিরোধী নেতাসহ কলম্বোর যে বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছেন, সেটি ঘিরে রেখেছে ভারি অস্ত্রসজ্জিত সেনাসদস্যরা। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উদয়া নানা য়িক্করা বলেছেন, হোটেলের ভেতরে প্রায় চারশ’ লোক অবস্থান করছে। নানা য়িক্করা বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান তাদের লক্ষ্য নন। তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। তিনি স্বাধীনভাবে হোটেল ত্যাগ করতে পারবেন। প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, জেনারেল ফনসেকা ইচ্ছা করলে হোটেল থেকে চলে যেতে পারেন। তবে নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন, সে ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হতে পারে।
নির্বাচনে ভোটের যে ব্যবধান তা দেখে মনে হয় নির্বাচনের আগে কথিত অনিয়মের আশ্রয় না নিলেও রাজাপাকসে জয়লাভ করতেন; কিন্তু বিপুলভাবে জয়লাভ করার পর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক জেনারেল ফনসেকা একটি হোটেলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তা দেখে বিসদৃশ মনে হয়। আসলে নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে তিক্ততা এত তীব্র হয়ে ওঠে যে, এখন নির্বাচনের ফলাফলের পর পরাজিত প্রধান প্রার্থীর জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার জন্য এরকম পরিস্থিতি কোনো প্রকার শুভ ইঙ্গিত দেয় না। গত বছর শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে নির্ধারক এক অভিযান চালায়। এ অভিযানে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে এবং তাদের নেতা প্রভাকরণ নিহত হন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং সামরিক নেতৃত্ব দেন শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান জেনারেল সারাথ ফনসেকা। এর আগে শ্রীলঙ্কার সরকার ও তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে নরওয়েজীয় উদ্যোগে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা চলে। সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শ্রীলঙ্কা সরকার সামরিক সমাধানের পথই বেছে নেয়। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সরকার সামরিকভাবে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। যেভাবে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বছরের পর বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করছিল এবং বৈদেশিক সাহায্যে মারমুখী হয়ে উঠেছিল তার ফলে সামরিকভাবে শ্রীলঙ্কার সরকার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারবে, সে ব্যাপারে অনেকেরই আস্থা ছিল না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের রাজনৈতিক দৃঢ়তা এবং শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মরণপণ লড়াই বিজয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিত করে তোলে। পাশ্চাত্যের বৃহত্ শক্তিগুলো শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল না। প্রতিবেশী ভারত ছিল বৈরী। যুদ্ধে যখন শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী একের পর এক বিজয় অর্জন করছিল তখন ভারত মানবাধিকারের অজুহাত তুলে শ্রীলঙ্কা সরকারকে সংযম অবলম্বনের জন্য চাপ দিচ্ছিল। শ্রীলঙ্কা সরকার ভারতীয় চাপের কাছে নতিস্বীকার করলে বিজয় তো দূরের কথা শ্রীলঙ্কা আজও রক্তাক্ত হতো।
যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে এবং জেনারেল সরথ ফনসেকা উভয়েই জাতীয় বীরে পরিণত হন; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক দেশে যুগপত্ দু’জন জাতীয় বীর থাকবেন এবং দু’জনের মধ্যেই চমত্কার সম্পর্ক থাকবে—শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা দেখে মনে হয়, এ যেন প্রায় অসম্ভব। যুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে সেনাপ্রধান চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, আত্মসমর্পণকারী তামিল বিদ্রোহীদের হত্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে একে অপরের চরম প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় বিশাল বিজয়ের পর এই অনৈক্য এবং পারস্পরিক তিক্ততা কোনোক্রমেই শ্রীলঙ্কার জন্য শুভ সঙ্কেত দেয় না।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার মেয়াদ দু’বছর অবশিষ্ট থাকার আগেই জনগণের কাছ থেকে নতুন ম্যান্ডেট নেয়ার জন্য নির্বাচন ঘোষণা দেন।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এরকম ঔদার্য বিরল ঘটনা বটে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে কেন এ ঔদার্যের পথ বেছে নিলেন, সেই সম্পর্কে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হলো রাজাপাকসে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের সুযোগ পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি শুধু রাষ্ট্রপ্রধানই ছিলেন না, তিনি শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর প্রধান অধিনায়কও ছিলেন। সরথ ফনসেকা যদি হঠাত্ সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ না করতেন তাহলে বিজয় অর্জনের পুরো গৌরবই নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি দাবি করতে পারতেন। অবশ্য এ বিষয়ে রাজাপাকসের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তার দাবি হলো তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থেই আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ অবলম্বন করেছেন। ২০০৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তামিলরা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। কারণ, সশস্ত্র তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংস্থা লিবারেশন টাইগার অব তামিল ইলম নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিল। উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মূল তামিল ভূখণ্ডের বাইরেও তামিলরা এরকম পরিস্থিতিতে ভোট দিতে উত্সাহী হয়নি। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দাবি করেছেন, আগাম নির্বাচন দেয়ার পেছনে একটি মহত্ উদ্দেশ্য কাজ করেছে। উদ্দেশ্যটি হলো, যুদ্ধপরবর্তী জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট গ্রহণ। এ ম্যান্ডেটের আওতা উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের তামিল জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জাতিগত যুদ্ধের ক্ষেত্রে সামরিক বিজয় অর্জন এক কথা; কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিসত্তাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া ভিন্ন কথা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বটে। তামিল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, তাদের শ্রীলঙ্কার রাজনীতির মূলস্রোত থেকে প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তারা মনে করে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তারা সংখ্যালঘু হওয়ার ফলে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নির্বাচনের পর সামান্যই গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থাত্ এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ তামিলদের মনে কাজ করত।
সাবেক জেনারেল ফনসেকা নির্বাচনী লড়াইয়ে তামিল সমর্থন অর্জনের প্রয়াস নেন। তামিল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মুখপাত্র তামিল ন্যাশনাল পার্টিরও তিনি সমর্থন অর্জন করেছিলেন। যুদ্ধের সময় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি নিজেকে তামিলদের কাছে অনেকটা গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। ধারণা করা হয়েছিল, তামিলরা একযোগে ফনসেকাকে সমর্থন করলে এবং সিংহলিদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে তার বিজয় অসম্ভব কিছু হবে না। ফলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করলেন, নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং ফনসেকার জয়ী হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। তামিলরা ভোটকেন্দ্রে এসেছে খুবই কম হারে। তদুপরি তাদের অনেকে ভোটার না হওয়ার কারণে ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এরকম কিছু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, এখনও অনেক তামিল আশ্রয় শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। তত্সত্ত্বেও তামিলদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ তাদের শ্রীলঙ্কার মূল রাজনৈতিক ধারায় অংশগ্রহণের প্রবণতারই প্রমাণ। যেখানে ২০০৫’র নির্বাচনে তামিলরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি বললেই চলে, সেখানে এটি একটি বিরাট অগ্রগতি।
যুদ্ধোত্তর শ্রীলঙ্কাকে পুনর্নির্মাণ ও ঐক্যবদ্ধ করা একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে যদি ধৈর্য ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির ব্যবহার না করেন তাহলে এটি দুরূহতর হয়ে উঠবে। নির্বাচনোত্তর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে অনুমান করা যায়, শ্রীলঙ্কার রাজনীতি আগামী দিনে নিস্তরঙ্গ থাকবে না। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ফনসেকার মুখপাত্র মানোগনেশান বলেছেন, তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি সাহায্যের আবেদন জানাবেন। তিনি বলেন, ‘ফনসেকার নিরাপত্তার জন্য আমি প্রতিবেশী একটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।’ প্রতিবেশী দেশ বলতে তিনি সম্ভবত ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনার নির্মম পরিহাসই বলতে হবে। যে ফনসেকা একদিন নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এবং ভারতীয় হস্তক্ষেপের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সঙ্কল্পবদ্ধ ছিলেন সেই ফনসেকার নিরাপত্তার জন্য ভারতীয় সহায়তা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সোজা কথায়, ভারতকে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নাক গলানোর জন্য আমন্ত্রণ জ্ঞাপন। দেশীয় রাজনীতিতে অন্তর্বিরোধের ফলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কামনা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে একজন সাবেক সেনাপ্রধানের পক্ষে যখন এ রকম হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়, তখন পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের অনৈতিক রাজনীতি চালু আছে। গৃহবিবাদ থাকলে তার সুযোগে বাইরের লোকদের নাক গলানো অসম্ভব কিছু নয়। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে রাজনৈতিক পেশীর জোরে প্রতিপক্ষকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেয়াও চরম অপরিণামদর্শিতা। বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে শ্রীলঙ্কা যাতে কোনো রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে না পড়ে সেটাই আমাদের কামনা।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments