স্মরণ-একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ by বি ডি রহমতউল্লাহ
১৮ এপ্রিল ড. গোলাম মহিউদ্দিনের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। আমি যখন কুমিল্লা জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই, তাঁকে তখন অষ্টম শ্রেণীর বড় ভাই হিসেবে পাওয়া থেকে তাঁর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এমন একটি ঘটনাও ঘটেনি, যার জন্য তাঁর ওপর কোনো দিন রাগ করতে পেরেছি,
কোনো কাজের জন্য তাঁর সমালোচনা করতে পেরেছি কিংবা মুখ ফুটে কোনো অনুযোগ করতে পেরেছি। সেই পরিচয়ের দিন থেকে শেষ দিনটি পর্যন্ত তাঁর অপত্যস্নেহ, ভালোবাসা ও জীবনযুদ্ধে একজন বন্ধু, একজন অভিভাবক, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে পেয়েছি এবং তাঁর সততা, সরলতা, উদার মানসিকতা আর ব্যক্তিত্বের দ্যুতি দিয়ে আমাদের আকৃষ্ট করেছিলেন যে মহিউদ্দিন ভাইয়ের উদাহরণ তিনি নিজেই। এ এক অতুলনীয় চরিত্র।
দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন এক স্বাপি্নক, যে স্বপ্ন এক পরীক্ষিত আদর্শের ভিত্তিতে গেড়ে বসেছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর নিত্যদিনকার যুদ্ধ তাঁকে এত সাহসী করে তুলেছিল যে যখন আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের পদলেহী লোভাতুর প্রাণীগুলো একসময়কার অনেক প্রগতির যোদ্ধাকে বধ করে উল্লাস করছিল, অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন তখন উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সবাইকে নতুন দিনের গান শুনিয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন। নয়া ঔপনিবেশিক কৌশলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সাম্রাজ্যবাদী নীলনকশার বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্কারের আবরণে বিদ্যুৎ খাতকে ভেঙে তছনছ করে তাদের ওপর চিরদিন এ খাতকে যখন নির্ভরশীল করায় মত্ত হয়ে উঠেছিল, তখন তা প্রতিহত করতে এবং অমূল্য সম্পদ গ্যাসকে দেশের অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজনী প্রক্রিয়ায় (Value addition) আনতে এবং কাঁচামাল হিসেবে গ্যাস বিক্রির ষড়যন্ত্র রুখতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে প্রাঞ্জল ভাষায় জটিল বিষয়কে সাধারণের বোধগম্য করেছিলেন। খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে সে ক্ষেত্রটিকে তিনি কর্ষণ করেছিলেন- 'জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির' সদস্যসচিব হিসেবে। সেই কমিটি এখন 'জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি' হিসেবে দেশে অবদান রেখে চলেছে। এই রক্ষা কমিটিতে যাঁরা শ্রম দিয়ে চলেছেন শ্রদ্ধেয় প্রকৌশলী মো. শহীদুল্লাহসহ প্রত্যেকেই জাতির কাছে নমস্য। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিলেন প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী। এক অকুতোভয় সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী করিতকর্মা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন ভাই আমাকে ডেকে বললেন, 'রহমত, বিদ্যুৎ খাতকে বাঁচাতে তুমি একটি কর্মসূচি নাও, এখন তা বাস্তবায়ন করা যাবে। কারণ জনাব সিদ্দিকী দেশ বাঁচাতে যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পিছপা হবেন না।' তাঁরই পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় বিতরণ খাত, যা বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম দুর্বল উপখাত, সে উপখাতকে একটি মানসম্মত পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্যে স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস ইউনিট (এসবিইউ) নামে কার্যকর সফল কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
ড. মো. গোলাম মহিউদ্দিনের শেষ কর্মস্থল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৫ বছর তিনি ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরে। বুয়েটে যোগ দিয়েছিলেন তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। মৃত্যুকালে তিনি ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন প্রকৌশলী হয়ে তিনি উদীচীর মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও কেন্দ্রের সহসভাপতি হিসেবে। এক গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি উদীচীতে কাজ করেছেন। আজ ১৮ এপ্রিল ড. গোলাম মহিউদ্দিন ভাইকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
বি ডি রহমতউল্লাহ
দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন এক স্বাপি্নক, যে স্বপ্ন এক পরীক্ষিত আদর্শের ভিত্তিতে গেড়ে বসেছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর নিত্যদিনকার যুদ্ধ তাঁকে এত সাহসী করে তুলেছিল যে যখন আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের পদলেহী লোভাতুর প্রাণীগুলো একসময়কার অনেক প্রগতির যোদ্ধাকে বধ করে উল্লাস করছিল, অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন তখন উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সবাইকে নতুন দিনের গান শুনিয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন। নয়া ঔপনিবেশিক কৌশলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সাম্রাজ্যবাদী নীলনকশার বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্কারের আবরণে বিদ্যুৎ খাতকে ভেঙে তছনছ করে তাদের ওপর চিরদিন এ খাতকে যখন নির্ভরশীল করায় মত্ত হয়ে উঠেছিল, তখন তা প্রতিহত করতে এবং অমূল্য সম্পদ গ্যাসকে দেশের অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজনী প্রক্রিয়ায় (Value addition) আনতে এবং কাঁচামাল হিসেবে গ্যাস বিক্রির ষড়যন্ত্র রুখতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে প্রাঞ্জল ভাষায় জটিল বিষয়কে সাধারণের বোধগম্য করেছিলেন। খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে সে ক্ষেত্রটিকে তিনি কর্ষণ করেছিলেন- 'জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির' সদস্যসচিব হিসেবে। সেই কমিটি এখন 'জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি' হিসেবে দেশে অবদান রেখে চলেছে। এই রক্ষা কমিটিতে যাঁরা শ্রম দিয়ে চলেছেন শ্রদ্ধেয় প্রকৌশলী মো. শহীদুল্লাহসহ প্রত্যেকেই জাতির কাছে নমস্য। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিলেন প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী। এক অকুতোভয় সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী করিতকর্মা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন ভাই আমাকে ডেকে বললেন, 'রহমত, বিদ্যুৎ খাতকে বাঁচাতে তুমি একটি কর্মসূচি নাও, এখন তা বাস্তবায়ন করা যাবে। কারণ জনাব সিদ্দিকী দেশ বাঁচাতে যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পিছপা হবেন না।' তাঁরই পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় বিতরণ খাত, যা বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম দুর্বল উপখাত, সে উপখাতকে একটি মানসম্মত পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্যে স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস ইউনিট (এসবিইউ) নামে কার্যকর সফল কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
ড. মো. গোলাম মহিউদ্দিনের শেষ কর্মস্থল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৫ বছর তিনি ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরে। বুয়েটে যোগ দিয়েছিলেন তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। মৃত্যুকালে তিনি ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন প্রকৌশলী হয়ে তিনি উদীচীর মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও কেন্দ্রের সহসভাপতি হিসেবে। এক গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি উদীচীতে কাজ করেছেন। আজ ১৮ এপ্রিল ড. গোলাম মহিউদ্দিন ভাইকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
বি ডি রহমতউল্লাহ
No comments