অলিম্পিক ২০১২-আর মাত্র ১০০ দিন... by ডেভিড ক্যামেরন
আর মাত্র ১০০ দিনের মধ্যেই লন্ডনে বিশ্বের বৃহত্তম ও দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া আসর অলিম্পিক ২০১২-এর পর্দা উন্মোচিত হবে। এই অভূতপূর্ব অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আনন্দ আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভাগ করতে চাই। সে জন্যই আপনাদের উদ্দেশে আমার এই স্বাগত বার্তা।
এই ক্রীড়াযজ্ঞ আর এবারের গ্রীষ্মকাল ব্রিটেনের জন্য তৈরি করবে গর্বের উপলক্ষ। আমরা যে শুধু সর্বকালের সেরা অলিম্পিক আয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা-ই নয়, আমরা আনন্দের সঙ্গে উদ্যাপন করব মহারানির শাসনের ৬০ বছর, যা এই গ্রহে দ্বিতীয় দীর্ঘতম রাজত্বকাল। আমাদের দেশের জন্য এটি একটি বিশেষ সময় আর আমরা এর আনন্দ বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
আমি জানি, এই গ্রীষ্মে ব্রিটেন একটি চমৎকার রূপ ধারণ করবে। নির্ধারিত সময় ও বাজেটের মধ্যে আমরা অসাধারণ সব নতুন ভেন্যু তৈরি করেছি। আমাদের নগর প্রস্তুত, যানবাহন আর যোগাযোগব্যবস্থা সঠিক অবস্থানে। আমরা এখন বিশ্বকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়।
কী থাকছে লন্ডন অলিম্পিকে? আমার মতে, দুটো বিষয় এখানে উল্লেখ করার মতো। প্রতিযোগিতার এই বিশাল আয়োজনের মধ্যমণি অবশ্যই ক্রীড়া। প্রতিযোগিতা চলাকালে আমরা দেখব, রেকর্ড ভাঙছে, স্মৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে, বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হচ্ছে। আর যখন এই প্রতিযোগিতার যবনিকাপাত হবে, পদক হস্তান্তর শেষ হবে, আমি নিশ্চিত, এই অলিম্পিক মানবজীবনে শুভ পরিবর্তনের ধারার সূচনা করবে।
এই ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা অলিম্পিক আয়োজনের জন্য নির্বাচিত হলাম, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকস রগ এই গেইমস আয়োজনে যুক্তরাজ্যের জাদুকরি ব্যতিক্রম ঘটানোর দক্ষতার বিষয় উল্লেখ করলেন। আমরা এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছি।
তিনবার অলিম্পিক আয়োজনকারী একমাত্র নগর হিসেবে এই ক্রীড়া অনুষ্ঠানের মহান ঐতিহ্য আমরা সমুন্নত রাখব।
১৯০৮ সালে এই লন্ডনেই আধুনিক অলিম্পিকের সূত্রপাত ঘটে। এই নগরেই সর্বপ্রথম অলিম্পিক ক্রীড়াবিদেরা তাঁদের জাতীয় পতাকা নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন, ম্যারাথনের দূরত্ব ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ নির্ধারণ করা হয়, যাতে এটি উইন্ডসর প্রাসাদ থেকে শুরু হয়ে স্টেডিয়ামের রয়াল বক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে এই দূরত্বই মেনে চলা হচ্ছে।
১৯৪৮ সালে ধ্বংসাত্মক বিশ্বযুদ্ধের পর অনুষ্ঠিত হয় অলিম্পিক। এর মধ্যেও অলিম্পিকের বন্ধুত্বের আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বসম্প্রদায়কে একত্র করায় সফলতা অর্জন করে লন্ডন। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় মহিলাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, অলিম্পিক স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক প্যারা-অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা হয় এ সময়।
এই গ্রীষ্মে ক্রীড়াবিদ ও দর্শক যখন হাজির হবেন, লন্ডন নগরের পূর্ব দিকে অলিম্পিক পার্কজুড়ে তাঁরা এক নতুন দৃশ্য দেখতে পাবেন। নব উদ্যম সৃষ্টির এ যেন এক অপূর্ব কেন্দ্র। আর যখন এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে, তখন তৈরি হবে মানুষের আবাসন, বাণিজ্যকেন্দ্র আর কর্মসংস্থানের সুযোগ।
লন্ডন অলিম্পিককে সত্যিকার অর্থেই টেকসই করার লক্ষ্যে স্বল্প কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নির্মাণ ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
নতুন ক্রীড়া অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং সারা দেশের স্কুলগুলোতে নতুন ‘স্কুল ক্রীড়া’ প্রচলনের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলার আনন্দ উপভোগে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি।
তবে লন্ডন ২০১২-এর ধারাবাহিকতা কেবল ব্রিটেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের আন্তর্জাতিক প্রণোদনা কার্যক্রম সারা বিশ্বের ২০টি দেশের এক কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এর মাধ্যমে যে শুধু তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলা উপভোগ করছে তা-ই নয়। পাশাপাশি এসব দেশের স্কুলগুলোয় এবং সমাজজুড়ে খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন সাধনের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাইরেও সারা বিশ্বের জাতিগুলোর মধ্যে আমরা যে ২০১২-এর অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দিতে চাই, এটি তার একটি বড় দৃষ্টান্ত।
কাজেই আমি চাই, এই প্রতিযোগিতা শুধু এবারের গ্রীষ্মে ক্রীড়াবিদদের লন্ডনে স্বাগত জানানোর মধ্যেই সীমিত থাকবে না। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যে নতুন ও টেকসই যোগাযোগ তৈরি হবে।
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী বা শিক্ষাবিদ হন, তাহলে এ দেশ সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ নিতে পারেন, যে দেশে রয়েছে বিশ্বের সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, আর শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেই ৭৫টি নোবেল পুরস্কার অর্জনের গৌরব।
আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী হয়ে থাকেন, লন্ডন-২০১২ আপনার সামনে এমন একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে যেখানে বাণিজ্য উদ্যোগের অন্তরায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
আর আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন পর্যটক, তাহলে আপনার সামনে সুযোগ রয়েছে ব্রিটেনের নতুন আর পুরোনোর অপূর্ব সম্মিলন, আমাদের দুর্গ, নিসর্গ আর রাজপ্রাসাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংগীত ও শিল্প, ফ্যাশন ও নাট্যকলার অভিজ্ঞতা উপলব্ধির।
মহান ক্রীড়া। সুমহান বাণিজ্য। মহতী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। লন্ডন-২০১২ আয়োজন একটি অসাধারণ গৌরবের বিষয়। আমরা একে ব্রিটেনের বিরল মুহূর্ত হিসেবে ধারণ করে রাখতে চাই। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববাসীকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আমরা।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ডেভিড ক্যামেরন: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
আমি জানি, এই গ্রীষ্মে ব্রিটেন একটি চমৎকার রূপ ধারণ করবে। নির্ধারিত সময় ও বাজেটের মধ্যে আমরা অসাধারণ সব নতুন ভেন্যু তৈরি করেছি। আমাদের নগর প্রস্তুত, যানবাহন আর যোগাযোগব্যবস্থা সঠিক অবস্থানে। আমরা এখন বিশ্বকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়।
কী থাকছে লন্ডন অলিম্পিকে? আমার মতে, দুটো বিষয় এখানে উল্লেখ করার মতো। প্রতিযোগিতার এই বিশাল আয়োজনের মধ্যমণি অবশ্যই ক্রীড়া। প্রতিযোগিতা চলাকালে আমরা দেখব, রেকর্ড ভাঙছে, স্মৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে, বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হচ্ছে। আর যখন এই প্রতিযোগিতার যবনিকাপাত হবে, পদক হস্তান্তর শেষ হবে, আমি নিশ্চিত, এই অলিম্পিক মানবজীবনে শুভ পরিবর্তনের ধারার সূচনা করবে।
এই ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা অলিম্পিক আয়োজনের জন্য নির্বাচিত হলাম, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকস রগ এই গেইমস আয়োজনে যুক্তরাজ্যের জাদুকরি ব্যতিক্রম ঘটানোর দক্ষতার বিষয় উল্লেখ করলেন। আমরা এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছি।
তিনবার অলিম্পিক আয়োজনকারী একমাত্র নগর হিসেবে এই ক্রীড়া অনুষ্ঠানের মহান ঐতিহ্য আমরা সমুন্নত রাখব।
১৯০৮ সালে এই লন্ডনেই আধুনিক অলিম্পিকের সূত্রপাত ঘটে। এই নগরেই সর্বপ্রথম অলিম্পিক ক্রীড়াবিদেরা তাঁদের জাতীয় পতাকা নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন, ম্যারাথনের দূরত্ব ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ নির্ধারণ করা হয়, যাতে এটি উইন্ডসর প্রাসাদ থেকে শুরু হয়ে স্টেডিয়ামের রয়াল বক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে এই দূরত্বই মেনে চলা হচ্ছে।
১৯৪৮ সালে ধ্বংসাত্মক বিশ্বযুদ্ধের পর অনুষ্ঠিত হয় অলিম্পিক। এর মধ্যেও অলিম্পিকের বন্ধুত্বের আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বসম্প্রদায়কে একত্র করায় সফলতা অর্জন করে লন্ডন। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় মহিলাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, অলিম্পিক স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক প্যারা-অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা হয় এ সময়।
এই গ্রীষ্মে ক্রীড়াবিদ ও দর্শক যখন হাজির হবেন, লন্ডন নগরের পূর্ব দিকে অলিম্পিক পার্কজুড়ে তাঁরা এক নতুন দৃশ্য দেখতে পাবেন। নব উদ্যম সৃষ্টির এ যেন এক অপূর্ব কেন্দ্র। আর যখন এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে, তখন তৈরি হবে মানুষের আবাসন, বাণিজ্যকেন্দ্র আর কর্মসংস্থানের সুযোগ।
লন্ডন অলিম্পিককে সত্যিকার অর্থেই টেকসই করার লক্ষ্যে স্বল্প কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নির্মাণ ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
নতুন ক্রীড়া অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং সারা দেশের স্কুলগুলোতে নতুন ‘স্কুল ক্রীড়া’ প্রচলনের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলার আনন্দ উপভোগে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি।
তবে লন্ডন ২০১২-এর ধারাবাহিকতা কেবল ব্রিটেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের আন্তর্জাতিক প্রণোদনা কার্যক্রম সারা বিশ্বের ২০টি দেশের এক কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এর মাধ্যমে যে শুধু তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলা উপভোগ করছে তা-ই নয়। পাশাপাশি এসব দেশের স্কুলগুলোয় এবং সমাজজুড়ে খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন সাধনের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাইরেও সারা বিশ্বের জাতিগুলোর মধ্যে আমরা যে ২০১২-এর অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দিতে চাই, এটি তার একটি বড় দৃষ্টান্ত।
কাজেই আমি চাই, এই প্রতিযোগিতা শুধু এবারের গ্রীষ্মে ক্রীড়াবিদদের লন্ডনে স্বাগত জানানোর মধ্যেই সীমিত থাকবে না। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যে নতুন ও টেকসই যোগাযোগ তৈরি হবে।
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী বা শিক্ষাবিদ হন, তাহলে এ দেশ সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ নিতে পারেন, যে দেশে রয়েছে বিশ্বের সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, আর শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেই ৭৫টি নোবেল পুরস্কার অর্জনের গৌরব।
আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী হয়ে থাকেন, লন্ডন-২০১২ আপনার সামনে এমন একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে যেখানে বাণিজ্য উদ্যোগের অন্তরায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
আর আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন পর্যটক, তাহলে আপনার সামনে সুযোগ রয়েছে ব্রিটেনের নতুন আর পুরোনোর অপূর্ব সম্মিলন, আমাদের দুর্গ, নিসর্গ আর রাজপ্রাসাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংগীত ও শিল্প, ফ্যাশন ও নাট্যকলার অভিজ্ঞতা উপলব্ধির।
মহান ক্রীড়া। সুমহান বাণিজ্য। মহতী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। লন্ডন-২০১২ আয়োজন একটি অসাধারণ গৌরবের বিষয়। আমরা একে ব্রিটেনের বিরল মুহূর্ত হিসেবে ধারণ করে রাখতে চাই। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববাসীকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আমরা।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ডেভিড ক্যামেরন: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
No comments