বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
১৯৯৬ সালে মারা গেছেন। তাঁর একটি বয়ান আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খণ্ডে। বয়ানে তিনি বলেন:
‘পটুয়াখালী থেকে পাকিস্তানি সেনারা পায়রা নদ দিয়ে বামনা-বরগুনা না গিয়ে অনেক ঘুরপথে মীর্জাগঞ্জের পাশের খাল দিয়ে লঞ্চে যেত। আগস্টের প্রথম দিকে আমরা তাদের গতিবিধিতে বাধা দেওয়ার জন্য মীর্জাগঞ্জের কাছে খালের দুইধারে অ্যামবুশ পাতি। একটি লঞ্চে করে যখন পাকিস্তানি সেনারা যাচ্ছিল, তখন মীর্জাগঞ্জে আমাদের অ্যামবুশে পড়ে। লঞ্চটি আমাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক হতাহতের সংখ্যা জানা না গেলেও পরে লোকমুখে জানা যায় পাকিস্তানি সেনাদের ১০ জন নিহত হয়েছে।
‘বিশখালী নদীতে পাকিস্তানি সেনারা গানবোটে করে পাহারা দিত। রাতে তারা পাহারা দিত বলে আমাদের গতিবিধির জন্য অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সে জন্য আগস্টের শেষে পরিকল্পনা নিই দিনের বেলা যখন গানবোট থানার কাছে যাবে, তখন আমরা কাছে থেকে হামলা করব। সেই মতো আমরা আগে থেকেই বামনা থানার কাছে অবস্থান নিয়ে তৈরি থাকি। বিকেল পাঁচটার সময় যখন গানবোট তীরে আসে, তখন আমরা গানবোটের ওপর আচমকা গুলি চালাতে থাকি। এই গুলির জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। এরপর শত্রুরা বন্দরে বা থানায় নামা বন্ধ করে দেয়।
‘আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সমগ্র পটুয়াখালী এলাকায় আমরা আমাদের তৎপরতা বাড়িয়ে তুলি। এতে পাকিস্তানি সেনাদের গতিবিধি অনেক কমে যায়। এই সময় আমি পটুয়াখালী জেলার দুই শহরে—পটুয়াখালী ও বরগুনাতে (বর্তমানে জেলা) মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ করাই। তাঁরা শহরে তাঁদের কার্যকলাপ শুরু করেন।
‘আগস্টের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনারা আমাদের মহিষপুর ক্যাম্পে আকস্মিক হামলা চালায়। মহিষপুর ছিল তালতলী বন্দরের কাছে। পাকিস্তানি সেনারা দালালদের কাছ থেকে আমাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে ও গানবোটে করে মহিষপুরে আসে। একটি দল ছয়-সাত মাইল দূরে নেমে হেঁটে আমাদের অবস্থানের দিকে আসে। সকাল ছয়টার সময় পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। নদীর ধার থেকে আক্রমণ হতে পারে—এ আশঙ্কা আমাদের ছিল। কিন্তু স্থলপথে আক্রমণ হবে এ আমাদের কল্পনাতীত ছিল। তাদের আক্রমণে হতবুদ্ধি ও দিগিবদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করি। হামলা মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আমাদের সমর্থনে জনগণ চিৎকার শুরু করে। এতে শত্রুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মহিষপুর এলাকা থেকে পালাতে থাকে। এ যুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানি সেনা ও ১৪ জন রাজাকার নিহত এবং অনেক আহত হয়। আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে দুজন কৃষক শহীদ হন।’
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মেহেদী আলী ইমামকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ১৪।
মেহেদী আলী ইমামের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামে। তবে বসবাস করতেন ঢাকায়। তাঁর বাবার নাম আবু মোহাম্মদ মোদাদ্দের বিল্লাহ। মা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী লায়লা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর মঠবাড়িয়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা এ কে এম ফয়সাল।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
‘পটুয়াখালী থেকে পাকিস্তানি সেনারা পায়রা নদ দিয়ে বামনা-বরগুনা না গিয়ে অনেক ঘুরপথে মীর্জাগঞ্জের পাশের খাল দিয়ে লঞ্চে যেত। আগস্টের প্রথম দিকে আমরা তাদের গতিবিধিতে বাধা দেওয়ার জন্য মীর্জাগঞ্জের কাছে খালের দুইধারে অ্যামবুশ পাতি। একটি লঞ্চে করে যখন পাকিস্তানি সেনারা যাচ্ছিল, তখন মীর্জাগঞ্জে আমাদের অ্যামবুশে পড়ে। লঞ্চটি আমাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক হতাহতের সংখ্যা জানা না গেলেও পরে লোকমুখে জানা যায় পাকিস্তানি সেনাদের ১০ জন নিহত হয়েছে।
‘বিশখালী নদীতে পাকিস্তানি সেনারা গানবোটে করে পাহারা দিত। রাতে তারা পাহারা দিত বলে আমাদের গতিবিধির জন্য অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সে জন্য আগস্টের শেষে পরিকল্পনা নিই দিনের বেলা যখন গানবোট থানার কাছে যাবে, তখন আমরা কাছে থেকে হামলা করব। সেই মতো আমরা আগে থেকেই বামনা থানার কাছে অবস্থান নিয়ে তৈরি থাকি। বিকেল পাঁচটার সময় যখন গানবোট তীরে আসে, তখন আমরা গানবোটের ওপর আচমকা গুলি চালাতে থাকি। এই গুলির জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। এরপর শত্রুরা বন্দরে বা থানায় নামা বন্ধ করে দেয়।
‘আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সমগ্র পটুয়াখালী এলাকায় আমরা আমাদের তৎপরতা বাড়িয়ে তুলি। এতে পাকিস্তানি সেনাদের গতিবিধি অনেক কমে যায়। এই সময় আমি পটুয়াখালী জেলার দুই শহরে—পটুয়াখালী ও বরগুনাতে (বর্তমানে জেলা) মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ করাই। তাঁরা শহরে তাঁদের কার্যকলাপ শুরু করেন।
‘আগস্টের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনারা আমাদের মহিষপুর ক্যাম্পে আকস্মিক হামলা চালায়। মহিষপুর ছিল তালতলী বন্দরের কাছে। পাকিস্তানি সেনারা দালালদের কাছ থেকে আমাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে ও গানবোটে করে মহিষপুরে আসে। একটি দল ছয়-সাত মাইল দূরে নেমে হেঁটে আমাদের অবস্থানের দিকে আসে। সকাল ছয়টার সময় পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। নদীর ধার থেকে আক্রমণ হতে পারে—এ আশঙ্কা আমাদের ছিল। কিন্তু স্থলপথে আক্রমণ হবে এ আমাদের কল্পনাতীত ছিল। তাদের আক্রমণে হতবুদ্ধি ও দিগিবদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করি। হামলা মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আমাদের সমর্থনে জনগণ চিৎকার শুরু করে। এতে শত্রুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মহিষপুর এলাকা থেকে পালাতে থাকে। এ যুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানি সেনা ও ১৪ জন রাজাকার নিহত এবং অনেক আহত হয়। আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে দুজন কৃষক শহীদ হন।’
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মেহেদী আলী ইমামকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ১৪।
মেহেদী আলী ইমামের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামে। তবে বসবাস করতেন ঢাকায়। তাঁর বাবার নাম আবু মোহাম্মদ মোদাদ্দের বিল্লাহ। মা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী লায়লা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর মঠবাড়িয়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা এ কে এম ফয়সাল।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments