দাদার নববর্ষ! by ফজলুল বারী
বাংলা নববর্ষ ১৪১৯’কে বরণ নিয়ে উৎসবে ব্যস্ত সারা জাতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষের সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। নববর্ষের শুভেচ্ছার ফুল আর মিষ্টি পাঠিয়েছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের। শনিবার বিকেলে গণভবনে দলের সিনিয়র নেতাকর্মী আর সাংবাদিকদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
কিন্তু এসবের কোথাও নেই আমাদের দাদা, ৫৫ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত! তার এপিএস’এর গাড়িতে ধরা পড়েছে রেলের নিয়োগবাণিজ্যের ঘুষ-বখরার ৭০ লাখ টাকা! রেলের দুর্নীতির ‘কালো বিড়াল’রা এপিএস’এর গাড়িতে চড়ে দাদা’র ঝিকাতলার বাড়ি যাচ্ছিল! নিয়োগবাণিজ্য-দুর্নীতির জন্য চিহ্নিত রেলে’র জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তাও মন্ত্রীর বাড়িতে টাকার বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যরাতে! আর দাদা এই টাকা-কেলেংকারি নিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষের সঙ্গে এক রাশ মিথ্যা বলেছেন! টাকাগুলো এপিএস’র, তারা এপিএস’র মোহাম্মদপুরের বাড়ি যাচ্ছিল, এসব কথাবার্তাও এর মাঝে অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। ‘কালো বিড়াল’দের তার কাছে পৌঁছা নিয়ে তার মোবাইল কথোপকথনের রেকর্ডও এখন গোয়েন্দাদের হাতে! প্রকৃতই সত্যিকারের মুসিবতে আমাদের দাদা! বাংলা বছরের শেষটা আর শুরুটা তার ভালো গেলো না। আর কী ভালো যাবার কোনও সুযোগ আছে?
অতএব প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জাফরউল্লাহ’র সঙ্গে মুসকিল আসানের জন্য বৈঠক করলেও প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মুখ তার নেই। শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বুঝতে তিনি তার কাছে গিয়েছিলেন! সে কারণে মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য হলেও প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করতে তিনি এয়ারপোর্টে যেতে পারেননি! যেতে পারেননি গণভবনের শুভেচ্ছা বিনিময় বৈঠকেও! শনিবার দেশে সবার সঙ্গে সাংবাদিকরাও নববর্ষ উদযাপন আর ছুটি কাটানো নিয়ে ছিলেন। দাদা’র ভাগ্যের শেষটার খবর তালাশে সময় দিতে পারেননি। নববর্ষের ছুটির কারণে রবিবার দেশের পত্রপত্রিকা না বেরুনোর কারণেও দাদা’র জন্য এটি কী কোনো স্বস্তিকর দিন হবে? প্রধানমন্ত্রী এখন কী করবেন? দেশের মানুষ এখন তা জানতে মুখিয়ে আছেন। দাদা’র ভাগ্য আর আওয়ামী লীগ অথবা মহাজোটীয় মেয়র প্রার্থীদের ভাগ্য কী দাঁড়াবে তা জানতে সবার এখন শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। দাদা-কেলংকারির পর ঢাকা সিটিতে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন যারা পাবেন, তাদেরও কপাল পুড়বে কী? বলা যায় না। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষ দেখায় সতর্কতা ছিল কেউ যাতে কোনো প্রশ্ন করতে না পারে। কিন্তু এ সতর্কতা তো বালি’র বাঁধ! কথাতো বলতেই হবে। কথা না বলে থাকা যাবে কতক্ষণ?
এরই মাঝে খবর বেরিয়েছে, ৫ কোটি টাকা দিয়ে ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জের(আইসিএক্স) লাইসেন্স নিয়েছেন দাদা’র ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত! এখন তাকে বিদেশ থেকে আরও ৩০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। অথচ কিছুদিন আগেও মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনে অগ্নি সিস্টেমস নামের একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সৌমেন! দাদা’র এপিএস হবার আগে টিউশনি করতেন তার এপিএস ওমর ফারুক। এর মাঝে তিনি নিজের ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক! তলে তলে যেমন এমন দ্রুতগতিতে অনেক কিছু চলছিল তা এখন বোঝা যাচ্ছে। হয়তো এখন যত রটছে এর সবটা সত্য না। কিন্তু কিছুতো বটেই। যেমন দাদা’র ছেলের ৫ কোটি টাকা জমা দিয়ে নেওয়া লাইসেন্স! যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ। সুনামগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন, দাদা’র লোকাল কাহিনী! সবার এমন জবান খুলে দিয়েছে সেই সত্তুর লাখের কেলেংকারি! এসবের ভিলেন অথবা নায়কটি কিন্ত সেই ড্রাইভার আজম। যাকে এখন আর কেউ কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না! গুম না হয়ে যান আজম! সে শঙ্কা তার পরিবারের। এপিএস ফারুকেরও কী বাচ্চু রাজাকারের মতো পালিয়ে যাবার পথ দখিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এতকিছুর পরও সে ব্যাংকে তার নামের একাউন্টে জমা করেছে কেলেংকারির আলামত সত্তুর লাখ টাকা! সেও এখন দাদা’র ইজ্জতের জন্য বড় এক থ্রেট। বিপদে পড়লে সবাই যার যার গর্দান রক্ষায় ইয়া নফসি ইয়া নফসি করে। এপিএস ফারুক, জিএম ইউসুফ আলী মৃধা, কমান্ডেন্ট এনামুল সবাই তা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারন এরা সবাই বলছিলেন তারা টাকার বস্তা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। দাদা বলেছেন, তার বাড়িতে না। তারা যে দাদা’র বাড়িতে যাচ্ছিলেন, সে প্রমাণ আছে দাদা’র মোবাইল ফোনের কললিস্টে।
সুরঞ্জিত দাদা’র সর্বশেষ অবস্থা জানতে রবিবার তার ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককে ফোন করি। ঘটনার পর দাদা’র সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে। আমাকে বললেন, যেখানে তারেকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদেশে টাকা পাচার করে, সেখানে ডিজিটাল সরকারের মন্ত্রী সুরঞ্জিত দাদার টাকা এনালগ পদ্ধতিতে মধ্যরাতে বস্তায় ভরে যাচ্ছিলো তার বাসায়! আমাকে বললেন, আপনাদের সিলেটের দাদা, তার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, শেষ। আওয়ামী লীগের জন্য বিপর্যয় হলো তার সমমানের অথবা সমমাপের একজন পার্লামেন্টারিয়ানকে তারা নৈতিকভাবে হারালো! পার্লামেন্টে তার বিকল্প কেউ নেই। আর কোনো দিন আগের মতো রাজনৈতিক হিউমার সহ পার্লামেন্ট মাতিয়ে বক্তৃতা দিতে পারবেন না এই দাদা! নৈতিক সে জোরটি তিনি সত্তুর লাখ টাকার বস্তার নিচে চাপা দিয়েছেন চিরতরে।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
অতএব প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জাফরউল্লাহ’র সঙ্গে মুসকিল আসানের জন্য বৈঠক করলেও প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মুখ তার নেই। শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বুঝতে তিনি তার কাছে গিয়েছিলেন! সে কারণে মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য হলেও প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করতে তিনি এয়ারপোর্টে যেতে পারেননি! যেতে পারেননি গণভবনের শুভেচ্ছা বিনিময় বৈঠকেও! শনিবার দেশে সবার সঙ্গে সাংবাদিকরাও নববর্ষ উদযাপন আর ছুটি কাটানো নিয়ে ছিলেন। দাদা’র ভাগ্যের শেষটার খবর তালাশে সময় দিতে পারেননি। নববর্ষের ছুটির কারণে রবিবার দেশের পত্রপত্রিকা না বেরুনোর কারণেও দাদা’র জন্য এটি কী কোনো স্বস্তিকর দিন হবে? প্রধানমন্ত্রী এখন কী করবেন? দেশের মানুষ এখন তা জানতে মুখিয়ে আছেন। দাদা’র ভাগ্য আর আওয়ামী লীগ অথবা মহাজোটীয় মেয়র প্রার্থীদের ভাগ্য কী দাঁড়াবে তা জানতে সবার এখন শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। দাদা-কেলংকারির পর ঢাকা সিটিতে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন যারা পাবেন, তাদেরও কপাল পুড়বে কী? বলা যায় না। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষ দেখায় সতর্কতা ছিল কেউ যাতে কোনো প্রশ্ন করতে না পারে। কিন্তু এ সতর্কতা তো বালি’র বাঁধ! কথাতো বলতেই হবে। কথা না বলে থাকা যাবে কতক্ষণ?
এরই মাঝে খবর বেরিয়েছে, ৫ কোটি টাকা দিয়ে ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জের(আইসিএক্স) লাইসেন্স নিয়েছেন দাদা’র ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত! এখন তাকে বিদেশ থেকে আরও ৩০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। অথচ কিছুদিন আগেও মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনে অগ্নি সিস্টেমস নামের একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সৌমেন! দাদা’র এপিএস হবার আগে টিউশনি করতেন তার এপিএস ওমর ফারুক। এর মাঝে তিনি নিজের ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক! তলে তলে যেমন এমন দ্রুতগতিতে অনেক কিছু চলছিল তা এখন বোঝা যাচ্ছে। হয়তো এখন যত রটছে এর সবটা সত্য না। কিন্তু কিছুতো বটেই। যেমন দাদা’র ছেলের ৫ কোটি টাকা জমা দিয়ে নেওয়া লাইসেন্স! যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ। সুনামগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন, দাদা’র লোকাল কাহিনী! সবার এমন জবান খুলে দিয়েছে সেই সত্তুর লাখের কেলেংকারি! এসবের ভিলেন অথবা নায়কটি কিন্ত সেই ড্রাইভার আজম। যাকে এখন আর কেউ কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না! গুম না হয়ে যান আজম! সে শঙ্কা তার পরিবারের। এপিএস ফারুকেরও কী বাচ্চু রাজাকারের মতো পালিয়ে যাবার পথ দখিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এতকিছুর পরও সে ব্যাংকে তার নামের একাউন্টে জমা করেছে কেলেংকারির আলামত সত্তুর লাখ টাকা! সেও এখন দাদা’র ইজ্জতের জন্য বড় এক থ্রেট। বিপদে পড়লে সবাই যার যার গর্দান রক্ষায় ইয়া নফসি ইয়া নফসি করে। এপিএস ফারুক, জিএম ইউসুফ আলী মৃধা, কমান্ডেন্ট এনামুল সবাই তা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারন এরা সবাই বলছিলেন তারা টাকার বস্তা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। দাদা বলেছেন, তার বাড়িতে না। তারা যে দাদা’র বাড়িতে যাচ্ছিলেন, সে প্রমাণ আছে দাদা’র মোবাইল ফোনের কললিস্টে।
সুরঞ্জিত দাদা’র সর্বশেষ অবস্থা জানতে রবিবার তার ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককে ফোন করি। ঘটনার পর দাদা’র সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে। আমাকে বললেন, যেখানে তারেকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদেশে টাকা পাচার করে, সেখানে ডিজিটাল সরকারের মন্ত্রী সুরঞ্জিত দাদার টাকা এনালগ পদ্ধতিতে মধ্যরাতে বস্তায় ভরে যাচ্ছিলো তার বাসায়! আমাকে বললেন, আপনাদের সিলেটের দাদা, তার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, শেষ। আওয়ামী লীগের জন্য বিপর্যয় হলো তার সমমানের অথবা সমমাপের একজন পার্লামেন্টারিয়ানকে তারা নৈতিকভাবে হারালো! পার্লামেন্টে তার বিকল্প কেউ নেই। আর কোনো দিন আগের মতো রাজনৈতিক হিউমার সহ পার্লামেন্ট মাতিয়ে বক্তৃতা দিতে পারবেন না এই দাদা! নৈতিক সে জোরটি তিনি সত্তুর লাখ টাকার বস্তার নিচে চাপা দিয়েছেন চিরতরে।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
No comments