দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রয়াস-প্রবাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

বর্তমানে ব্রিটিশ নাগরিক ও একাত্তরের সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মাঈনউদ্দিনের বিচারের বিষয়ে যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ কাম্য নয়। আগামী জুনের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনার সময়সীমা যেন পিছিয়ে না যায়।


ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ-এ এন্ড্রু গিলিগ্যানের ১৫ এপ্রিলের একটি প্রতিবেদন মাঈনউদ্দিনের বিচারের বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে।
তা সত্ত্বেও যে বিষয়টি আমাদের কাছে অস্বস্তিকর তা হলো, ব্রিটেনের মতো একটি দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এই সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী উসকানিমূলক বক্তব্য ও নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নীরবতা আমাদের উদ্বেগের কারণ।
দ্য টেলিগ্রাফ-এ এন্ড্রু গিলিগ্যানের ১৫ এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাঈনউদ্দিন ব্রিটেনে অত্যন্ত সফল পেশাদারি জীবন গড়ে তুলেছেন। তাঁর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততাও প্রতিবেদক স্পষ্ট করেছেন। এ প্রতিবেদনে তাঁর সম্পর্কে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে ব্রিটেনের আইন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো সংস্থা নীরব ভূমিকা পালন করতে পারে না।
দ্য টেলিগ্রাফ তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকা এবং মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ না করার মতো নীতিগত বিষয় চিহ্নিত করেছে। এসব বিষয় জটিল বটে। হয়তো তাঁর অনুপস্থিতিতেই বাংলাদেশে বিচার হবে। তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সর্বাত্মক কূটনৈতিক উদ্যোগও নিতে হবে।
এসব ছাপিয়ে যে প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে তা হলো, অনুসরণীয় সভ্যতার সূতিকাগার ব্রিটেনের হাত-পা কি বাঁধা? এ ধরনের একজন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী, ব্রিটিশ সমাজেও যাঁর গতিবিধি ও কার্যক্রম বিতর্কিত, তাঁর বিষয়ে ব্রিটেনের কি সত্যি কিছুই করার নেই?
বিদেশে অবস্থানরত সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে মাঈনউদ্দিন একটি বিশেষ চরিত্র। তাঁর ওপর বিবিসির চ্যানেল ফোরের নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র রয়েছে। এতে তাঁর যুদ্ধাপরাধ অনেকটাই প্রমাণিত। তাঁর বিরুদ্ধে টেলিগ্রাফ-এর নতুন প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে ব্রিটিশ সমাজ ও সরকারের নিশ্চয় কিছু দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।
ঢাকায় এসে এন্ডু্র গিলিগ্যানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্রিটেনে তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ব্রিটিশ সরকারের মানবাধিকার ও নীতিনৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তাঁরা বিচারের ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
বিদেশে অবস্থানরত যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রয়াস নিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ মানবাধিকারের প্রবক্তারা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। মৃত্যুদণ্ড হতে পারে—এই অজুহাতে কাউকে এমন লোকদের প্রত্যর্পণ না করার ব্রিটিশ নীতি তো মানবাধিকারের সঙ্গেই যুক্ত। এখন ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থেই এই চিহ্নিত অপরাধীদের প্রত্যর্পণ জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.