আইনি বাধায় ডিসিসি নির্বাচন-জটিলতা দূর করে নির্বাচন হোক

যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। বিভাজিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ আইনি জটিলতা সহজে মিটবে, এমনটি মনে হয় না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল বিভাজিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন।


ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল পাঁচ বছর আগে। হয়নি। আইন করে ডিসিসি বিভাজনের পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীরা উৎসাহের সঙ্গে নিজেদের কাজ শুরু করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন তাদের মতো কাজ করছিল। কিন্তু সব উৎসাহে ভাটা পড়েছে হয়তো সরকারের অনিচ্ছার কারণে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক- এটা বোধ হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চায়নি। সরকারি দলের প্রার্থীদের ভরাডুবির আশঙ্কা আছে- সরকারের অনীহার নেপথ্য কারণ এটাও হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাসের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে আগের নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়কে নানাভাবে চাপ দিয়েছে বলে শোনা যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি। এমনকি অভিযোগ আছে, নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা না করার ব্যাপারে যেন মন্ত্রণালয় আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল।
স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী প্রতি আদমশুমারি শেষে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ সীমানা বিন্যাস করা হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৮ সালে নতুন করে সীমানা পুনর্নিধারণ করে ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করা হলেও একাধিক মামলার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সে কারণে পুরনো সীমানায় ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ডিসিসি নির্বাচন হয়। এরপর নানা কারণে সীমানা বিন্যাস করা হয়ে ওঠেনি। এখন মন্ত্রণালয় যদি মনে করে, নতুন করে সীমানা বিন্যাসের প্রয়োজন নেই এবং বিষয়টি যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে পারে তাহলে একটা মীমাংসা আশা করা যায়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমানা বিন্যাসের দায় সরকারের ওপর বর্তায়।
শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে ডিসিসি নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলেও তখন রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানায়। দলগুলো সংসদ নির্বাচনের আগে ডিসিসি নির্বাচন না করার পরামর্শ দেয়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অধ্যাদেশ আকারে প্রণীত সিটি করপোরেশন আইনটি সংসদে পাস না করে ১৯৯৮ সালের সিটি করপোরেশন আইন পুনঃপ্রচলন করে। সে কারণে বছরের শুরুতে কমিশন ডিসিসি নির্বাচন করতে পারেনি। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গঠিত ডিসিসির মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ মে। এরপর সিটি করপোরেশনের কোনো নির্বাচন হয়নি। আইন করে সিটি করপোরেশন দুই ভাগে ভাগ করার পর যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেটাও আদালতের নির্দেশে আটকে গেল। হাইকোর্টের নির্দেশনার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ চেয়ে এরই মধ্যে আবেদন করা হয়েছে। শেষ কথা হচ্ছে, নির্বাচন হতে হবে। একটি মহল নির্বাচন বন্ধ করা বা বন্ধ রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব ফিরে পাবে, আইনি জটিলতা দূর হবে- এমনটিই আশা করি আমরা।

No comments

Powered by Blogger.