মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী সেতু
একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ তখন প্রায় শেষ। পরাজয়ের গস্নানি মাথায় নিয়ে আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে পাকিসত্মানী হানাদারবাহিনী সারা দেশে শুরম্ন করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। পাততাড়ি গুটানোর মাত্র দু'দিন আগে অন্য বহু স্থাপনার মতো পাকবাহিনী বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত তৎকালীন ভৈরব সেতুর এপার-ওপারের কিছু অংশ।
ফলে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিলেট ও চট্টগ্রামসহ সংলগ্ন কয়েকটি অঞ্চলের। বঙ্গবন্ধু সরকার মতায় এসেই প্রথমে হাত দেয় সড়ক ও রেল যোগাযোগ পুনর্স্থাপনের কাজে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিধ্বসত্ম সেতুটির ভাঙ্গা অংশ মেরামত করে ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রেল চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। কর্তৃপরে সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী কথা ছিল ঐদিনই সেতুটির নতুন নামকরণ করা হবে বঙ্গবন্ধুর নামে। কিন্তু সেতু উদ্বোধনের সময় সেখানে ঘটে গেল অভূতপূর্ব এক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন এখানে যুদ্ধরত অবস্থায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তাঁর নাম হাবিলদার আব্দুল হালিম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধানত্ম পাল্টে দিলেন। বললেন, এখন থেকে এ সেতুর নতুন নাম হবে 'শহীদ হাবিলদার আব্দুল হালিম সেতু'।প্রসঙ্গত '৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এ রেলসেতুর ভৈরব পাড়ের ২টি ও আশুগঞ্জ পাড়ের ১টি গার্ডার উড়িয়ে দেয়া হয়। শক্তিশালী ডিনামাইটের বিকট আওয়াজে ভৈরব ও আশুগঞ্জবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, হাবিলদার শহীদ আব্দুল হালিমের বাড়ি চাঁদপুর শহর থেকে ৩ কি.মি. পূর্ব-উত্তরে তরপুরম্নী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আলী হোসেন। হাবিলদার আব্দুল হালিম '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। শহীদ আব্দুল হালিম '৭১ সালের ২৩ নবেম্বর তৎকালীন কুমিলস্না জেলার কসবা থানার চাঁদপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন। সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজে এ সেতুর নাম রাখেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। বঙ্গবন্ধুর এ মহানুভবতায় সেদিন ভৈরববাসী বিমোহিত হয়ে পড়েছিলেন।
শহীদ আব্দুল হালিম "বীর বিক্রম" উপাধি পেয়েছিলেন। বিষয়টি সবার অজ্ঞাত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর '৯৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাঁর প্রাপ্ত খেতাবের পদক শহীদ হালিমের বাড়িতে পেঁৗছানো হয়। তখনই এ শহীদ পরিবার জানতে পারে হাবিলদার আব্দুল হালিম "বীর বিক্রম" উপাধি পেয়েছিলেন।
'৯৬-এর ১৩ ডিসেম্বর কুমিলস্না সেননিবাস হতে ৪ সদস্যের একটি সেনাদল পদক নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যায়। শহীদ হালিমের মেজ ভাইয়ের কন্যা শাহীন আক্তার সেনা সদস্যদের কাছ থেকে পদকটি গ্রহণ করেন।
_কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব
No comments