হাইতির ভূমিকম্প
ক্যারিবীয় দ্বীপ হাইতির ভূমিকম্প আবার নতুন করে চমকে দিয়েছে সবাইকে। ভূমিকম্পের কাঁপুনি এমন ভয়াবহ ছিল যে, দেশটি যেন ল-ভ- হয়ে গেছে। রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের অধিকাংশ ঘরবাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, হোটেল, স্কুল সব ধ্বংসসত্মূপে পরিণত হয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা লাখের ওপরে হবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাজার হাজার জীবিত মানুষ এখনও বাড়িঘরের ভগ্নসত্মূপের মধ্যে চাপা হয়েছে। তাদের আর্তনাদ চারদিকে। মৃতের পাশাপাশি আহত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প নিমেষে ধূলিসাত করে দিয়ে গেছে হাইতিকে। ভূমিকম্পে ৰতিগ্রসত্ম হাইতিতে উদ্ধার কাজসহ দ্রম্নত নানা সাহায্য-সহযোগিতার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়েছেন। উদ্ধার কাজ সেখানে চলছে। হাইতির ভূমিকম্পের ৰয়ৰতির খবরে সকলেই সে দেশের মানুষের প্রতি শোক ও সহানুভূতি জানাবেন। আমরাও ঐ ব্যাপক ৰতিতে সহানুভূতি জানাই।হাইতির ঐ ভূমিকম্প একটা তাগিদ দিয়ে গেল সকল দেশকে, বিশেষ করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে এমন দেশগুলোকে। ঝুঁকি আছে আমাদের। বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলছেন বাংলাদেশ ঝুঁকিপ্রবণ। বিশেষ করে এদেশের কোন কোন এলাকায় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি। ছোটখাটো ধরনের কম্পন আমাদের দেশেও অনেক বারই হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তবে কোনটাই অধিক মাত্রার ছিল না। অধিক জোরে কম্পন হলে কী ধরনের ৰতি হতে পারে আমাদের রাজধানী নগরীর, সে ব্যাপারে পূর্বাভাস দিয়েছেন অনেকেই। ঢাকা নগরীতে যেভাবে সুউচ্চ সব ভবন তৈরি হয়েছে, তাতে এসব ভবনের কত বড় মাত্রার কম্পন ঠেকাতে পারবে সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন। তবে যেভাবে উল্টোপাল্টাভাবে নিয়মবিধি না মেনে একের পর এক ভবন তৈরি হয়েছে তাতে বড় ধরনের ভূমিকম্প সহ্য করা অধিকাংশ ভবনের পৰে সম্ভব হবে না সেটা ধারণা করা কষ্টকর নয়। তবে যেসব ভবন তৈরি হয়েছে বিল্ডিং কোডসহ এতদসংক্রানত্ম সব নিয়মকানুন মেনে, সেগুলোর কথা আলাদা। ধারণা করা যায়, বহু ভবনই তৈরি করার সময় নিয়ম মানা হয়নি। ঢাকা নগরীতে নতুন কয়েক তলা ভবন তৈরি হওয়ার পর নিজে নিজেই কাত হয়ে পড়েছে এমন দু'একটি উদারণও রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে পুরনো জরাজীর্ণ বহু ভবন।
ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে এমন পূর্বাভাস অনেকদিন ধরে দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি ঢাকার ভবনগুলোর অবস্থার কথা ভেবে কেউ কেউ বড় ধরনের ভূমিকম্পে এই নগরীর কি ৰতি হতে পারে সে সম্পর্কেও কিছু কিছু পূর্বাভাস দিয়েছেন। খোদা-না-খাসত্মা, যদি কোনদিন হঠাৎ করে বড় ধরনের ভূমিকম্প এই নগরীতে আঘাত হানে তাহলে এ নগরী প্রায় ধ্বংসসত্মূপে পরিণত হয়ে যেতে পারে এমন পূর্বাভাস কেউ কেউ দিয়েছেন। এত বাড়িঘর ধসে পড়বে এবং এত প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা থাকবে_ যার তুলনা মেলা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
মোটকথা হচ্ছে এসবই অনুমান। তবে অনুমান করা হয় অন্যান্য দেশের ৰতি এবং আমাদের নিজেদের অবস্থা বিবেচনা করে। সেজন্য ভূমিকম্পের ব্যাপারে প্রধান কথাই হচ্ছে, ভূমিকম্প কবে কখন হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। না হয় সে তো ভালই, তবে যদি সত্যি সত্যি হয়ে যায়, তখন উপায় কী? সে উপায়ের জন্যই একমাত্র প্রয়োজন হচ্ছে ভূমিকম্পের ব্যাপারে কোন প্রকার ভয়ভীতি বা আতঙ্কের কোনই প্রয়োজন নেই, শুধু যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, সবদিকে সব ধরনের সাবধানতা, সতর্কতা অবলম্বন করা। যেহেতু হওয়া-না হওয়ার ব্যাপারে কোন পূর্বাভাস ঠিক ঠিকভাবে দেয়া সম্ভব নয়। তাই হোক বা না হোক, সাবধানতাই আসল কাজ। আমাদের ঘরবাড়ি স্থাপনা নির্মাণের ৰেত্রে এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক সকল পর্যায়ে ভূমিকম্পের ব্যাপারে এখন থেকেই যথাপ্রয়োজন সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকলের ৰেত্রে এই সতর্কতা প্রযোজ্য। হাইতির দুঃখজনক ঘটনা আমাদের সেই তাগিদই দিয়ে গেল।
No comments