সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল- চিকিৎসাসেবায় অচলাবস্থা, দুর্ভোগে রোগীরা



সুইপারদের কর্মবিরতি ও চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রোগীরা।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, জেলা সিভিল সার্জনের দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির কারণে তদারকি না থাকায় চিকিৎসকেরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে চিকিৎসাসেবায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
হাসপাতালের সুইপার, ভর্তি হওয়া রোগী ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত এক মাস ধরে সিভিল সার্জন অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসকদের তদারকি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ সুযোগে চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন না করে ব্যক্তিগত কাজে সময়ক্ষেপণ করছেন। বেশির ভাগ সময় তাঁরা হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে দীর্ঘ সাত বছর ধরে ১৫-১৬ জন সুইপার দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত আছেন। সুইপারের ১৬টি স্থায়ী পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিতর্কিত নিয়োগে এসব সুইপারের স্থায়ী চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এঁদের অল্প কয়েকজনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত শনিবার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং নিয়োগবঞ্চিত সব সুইপাররা কর্মবিরতি পালন করছেন।
গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। জরুরি বিভাগের মূল দরজার সামনে মল পড়ে আছে। বারান্দাজুড়ে রক্তের ছাপ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গজ-ব্যান্ডেজ। তৃতীয় তলায় ট্রমা সেন্টারের কেবিন ও ওয়ার্ডের বাথরুম দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কক্ষের মধ্যেই সব আবর্জনা রোগীদের শয্যার নিচে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। গাইনি বিভাগের ওয়ার্ডের বাথরুম ও কক্ষের অবস্থাও খুব খারাপ। দুর্গন্ধের কারণে বাথরুমে ঢোকা কঠিন। এক রোগীকে দেখতে আসা রহিমা খাতুন বলেন, প্রচণ্ড দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতালে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সেবিকা বলেন, চিকিৎসক অনুপস্থিতি এবং সুইপাররা কাজ না করায় পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন সুইপার বলেন, ‘সাত বছর ধরে মাসিক এক হাজার টাকায় কাজ করছি। আমাদের মধ্যে পাঁচজনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিলেও নিয়োগ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় যোগদান করতে পারিনি। এখন দৈনিক হাজিরার টাকাও পাচ্ছি না।’ নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন সুইপার বলেন, গত মাসের মজুরির টাকাও তাঁরা পাননি। তাই সবাই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রাজ্জাক জানান, সিভিল সার্জন তাঁকে শুধু নামেমাত্র হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আর্থিক বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা তাঁর নেই। ফলে চিকিৎসকেরাও তাঁদের ইচ্ছামতো অফিসে আসা-যাওয়া করছেন।
জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন আবুল ফারেজ বলেন, সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়, সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, উল্লাপাড়া ২০ শয্যার হাসপাতাল, সদর উপজেলার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারসহ আটটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিষয়ের ক্ষমতা সিভিল সার্জনের ওপর। তিনি এই ক্ষমতা হস্তান্তর করে না যাওয়ায় মাস্টাররোলে চাকরিরত কর্মচারীদের ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সিভিল সার্জন গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ছুটিতে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, তিন লাখ টাকা উৎকোচ দিয়েও চাকরি না হওয়ায় সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানায় প্রথম মামলাটি করেন লক্ষ্মী রানী নামের আয়া পদের একজন চাকরিপ্রার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রেজাউল করিম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোক্তার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে। একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নিয়োগ-বাণিজ্যের ওই অভিযোগ ওঠার পর থেকে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। একপর্যায়ে সিভিল সার্জন মো. নাজিমুদ্দিন খান ছুটি চেয়ে আবেদন করেন।

No comments

Powered by Blogger.