বেড়েই চলেছে মোটা চাল আটা ও পাম তেলের দাম
গরিবের প্রধান খাদ্য মোটা চাল, খোলা আটা ও পাম তেলের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক মাসে এ পণ্য তিনটির মধ্যে মোটা চাল কেজিতে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ, খোলা আটা ৭ দশমিক ১৪ ও পাম তেলের মূল্য বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সঙ্গে বাড়ছে চিনির দামও। এ মূল্যবৃদ্ধিতে চাপের মধ্যে পড়েছে নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ। এদিকে বাজার পরিস্থিতি খারাপ হলেও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নীরব ভূমিকা পালন করছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে কোন পদপে নেয়া হচ্ছে না। অথচ মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে অনেক ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের তালিকাভুক্ত। শুধু তাই নয়, এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে গঠিত দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলটি অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে ব্যবসায়ীদের কালো থাবায় মনিটরিং সেলের কাজ সামনের দিকে এগোতে পারছে না।জানা গেছে, মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক পরিবার আটার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। আটার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আটার দামও বৃদ্ধি করেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, আটা ও চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হবে দরিদ্র মানুষের ওপর।
এদিকে দাম কমে যাওয়ার কারণে আলু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ভারত থেকে আলু আমদানি করা হচ্ছে না। নতুন আলু বাজারে আসায় মূল্য নেমে এক কেজি দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকাতে। সম্প্রতি বাজারে সব ধরনের চালের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। মোটা, সরম্ন ও মাঝারি ধরনের চালের দাম বাড়ছে। রায়েরবাজারে আসা ক্রেতা বাশার জানান, গত সপ্তাহে ৩২ টাকা দরে চাল কেনা হয়েছে। ওই চালের মূল্য এ সপ্তাহে ৩৬ টাকায় উঠেছে। একইভাবে বেড়েছে মোটা চালের মূল্যও। এক কেজি মোটা চাল সর্বোচ্চ ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উন্নতমানের পাইজাম ও লতার কেজি ৩২ থেকে ৩৬ টাকায় উঠেছে। মাঝারি ধরনের চালের মূল্য বেড়েছে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম মূল্য বেড়েছে সরম্ন চালের েেত্র। এক মাসের ব্যবধানে সরম্ন চালের দাম বৃদ্ধি পায় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। সরম্ন চাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৪ টাকা পর্যনত্ম।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মোটা চাল ব্যবহার করে গরিব মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়েছে গরিব মানুষের খাদ্যের। এ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। শুধু মোটা চাল নয়, গরিব মানুষের আরেকটি নিত্যপণ্য হচ্ছে খোলা আটা। বর্তমান এক কেজি খোলা আটার মূল্য হচ্ছে ২২ থেকে ২৩ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। মোটা চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার আটার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। আটা ও মোটা চালের মূল্যে কেজিতে ৫ টাকা পার্থক্য রয়েছে। গ্রামের মানুষ আটার ওপর নির্ভরশীলতার কারণে আটার চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে আটার মূল্যও বেড়েছে। পাশাপাশি পাম তেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায়। এদিকে ফের চিনির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কৌশলে চিনির মূল্য বৃদ্ধি করছে। চলতি সপ্তাহে কেজিতে এক টাকা বেড়ে ৫৬ টাকায় উঠেছে।
তবে দীর্ঘদিন পর কমেছে আলুর মূল্য। এর মূল্য হ্রাস পাওয়ায় ভারত থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আলুর মূল্য বেড়ে ৩৪ টাকায় ওঠে। এ পরিস্থিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারত থেকে আলু আমদানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু ফের বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় আলু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের মূল্য ৩৫ টাকা ও ডালের মূল্য কিছুটা কমতে শুরম্ন করেছে। ১৩৫ টাকার ডাল কমে ১২৮ টাকায় এসেছে। তবে আদা, রসুন ও হলুদের দামও বেশ চড়া।
এদিকে সম্প্রতি বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারম্নক খান। মন্ত্রণালয়ে গত বুধবারে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমদানি, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা গত এক বছরে দেশ ও জাতির প্রতি কোন অবদান রাখেনি। ইচ্ছেমতো ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকারও সমালোচনা করেন।
No comments