বানের মতো মানুষের ঢল_ উৎসবের অংশ- আনত্মর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছুটির দিনে কেনাকাটার ধুম
সৈয়দ সোহরাব শুক্রবারের নিরালা শহর। মানুষ ও গাড়ি দুইয়ের সংখ্যাই ছিল কম। যানজটও ছিল না। ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যেই পেঁৗছেছে নিজস্ব গনত্মব্যে। এদিন কিছুটা হিমেল হাওয়া থাকলেও শীতের অনুভবটা ছিল কম।
নগরীর আকাশ পুরো দিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকলেও তার প্রভাব ছিল কম, সূর্যরশ্মি কুয়াশাকে ভেদ করে নগরীকে আলোকিত করে রেখেছে সকাল থেকেই। বিকেলে সূর্যের তেজ কমে আসলে কুয়াশা তার প্রভাব বিসত্মার করে পুরো আকাশময়। তেমন শীত নেই, আবার যানজটহীন ছিমছাম নগরীতে আয়েশীভাবেই চলাচল করেছে নগরবাসী। তবে এর বিপরীত একটা পরিবেশও লৰ্য করা গেছে ঢাকা আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। বিজয় সরণি থেকে শুরম্ন করে পুরো মিরপুর সড়কে ছিল গাড়ির জ্যাম। মানুষ আর মানুষ। মনে হয়েছে নগরীর সব মানুষ আর গাড়ি এদিন একই পথ বেছে নিয়েছে। যেন উৎসবে শামিল হতে সবাই ছুটে চলেছে মেলায়। অবশ্য বাঙালীর জন্য এটা একটা উৎসবেরই অংশ। আর্থিকভাবে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ সচ্ছল না হলেও নানা উৎসব-পার্বণে এরা মিলিত হয় প্রাণ খুলেই। হাজার হাজার মানুষের প্রাণময় উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠেছিল। আকাশে কুয়াশা থাকলেও শীত উধাও হয়ে গিয়েছিল এ এলাকা থেকে। তরম্নণ-তরম্নণী, শিশু-বুড়ো সব বয়সী মানুষের যেন ঢল নেমেছিল এদিন। মেলার স্টল বিক্রেতাদের মনত্মব্য, লাখো মানুষ এদিন এসেছিল মেলায়। পৰকালের মধ্যে এ ছুটির দিন বিক্রিও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সব গেট দিয়ে এদিন বানের ঢলের মতো মানুষ ঢুকেছে মেলায়।মেলা শুরম্নর পর এটা তৃতীয় শুক্রবার হলেও কার্যত এদিনই সবচেয়ে বেশি মানুষ এসেছে এবং বিক্রিও বেশি হয়েছে। পয়লা জানুয়ারি উদ্বোধনের দিনও ছিল শুক্রবার, তাই সেদিন লোকসমাগম ছিল ভালই, তবে খুব নয়। দ্বিতীয় শুক্রবারও লোকসমাগম ছিল বেশ, বিক্রিও ভাল হয়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। এ মাসে আরও দু'টি শুক্রবার পাবেন বলে ব্যবসায়ীরা বেশ উৎফুলস্ন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তাঁদের বিক্রি ভাল হবে তাই।
মেলায় মোট স্টল রয়েছে ৪৮৬টি। এর মধ্যে স্পেশাল প্যাভিলিয়ান ৭টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ান ৫টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ান ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ান ৪টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ান ৪৫টি, প্রিমিয়ার স্টল ৩৫টি এবং সাধারণ স্টল ৩০৮টি। এছাড়া খাবারের দোকান তো আছেই। বিদেশীদের মধ্যে ইউএসএ, থাইল্যান্ড, চীন, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিসত্মান, ইরান, দৰিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের স্টল আছে। তবে পাকিসত্মানী স্টলে এবার সয়লাব মেলা। বিদেশী স্টলগুলোতে মানসম্মত বাহারি পণ্যের বেশ সমারোহ ঘটেছে, ক্রেতাদেরকেও টানছে এসব পণ্য। ইরানী, পাকিসত্মানী, থাইল্যান্ড, হংকংয়ের স্টলগুলোতে বাহারি রং ও ডিজাইনের কারম্নকাজময় বহু পণ্যের সমারোহ ঘটেছে। তার মধ্যে ফাওয়ার ভাস, তৈজসপত্র, ক্রোকারিজ সামগ্রী, কার্পেট, দৃষ্টিনন্দন অর্নামেন্টস নারী ক্রেতাদের নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে। এসব স্টলে বিক্রি হওয়া জুয়েলারি সামগ্রীর দামও অনেকটা নাগালের মধ্যে। যেমন- বিভিন্ন ডিজাইনের নেকলেস ৮শ' থেকে ৩ হাজার টাকা, কানের দুল এক শ' থেকে এক হাজার টাকা, ব্রেসলেট এক শ' থেকে আট শ' টাকা, আংটি এক শ' থেকে পাঁচ শ' টাকা, চুড়ি এক শ' থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। বিদেশী স্টলগুলোতে এক শ'র ওপরে বিভিন্ন ডিজাইনের নেকলেস রয়েছে। তবে নিউজিল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত রঙিন ঝিনুকের তৈরি আকর্ষণীয় ডিজাইনের নেকলেস, আংটি, চুড়ি, লকেট, কানের দুলের প্রতি তরম্নণীদের আকর্ষণ ছিল বেশি। ঘরকন্নায় ব্যসত্ম যেসব নারী, তাদের তৈজসপত্রের স্টলগুলোতে বেশি ঘুরতে দেখা গেছে। এতে দেখা গেছে সিলভার, স্টীল ও সিরামিকের পেস্নট, বাটি, কাপসহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে বেশ। অনেকে আবার ঘরগৃহস্থালি সাজানোর জন্য গন্ধহীন অথচ বৈচিত্র্যপূর্ণ বাহারি রঙের ফুলের দোকান ও শোপিসের স্টলগুলোতে ঘুরছেন। তবে জামাকাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, টিভি-ফ্রিজের স্টলগুলোতেও লোকের কমতি নেই। অধিকাংশ স্টলেই ডিসকাউন্ট, মূল্য ছাড় ও নানা পুরস্কারের অফার থাকায় সবাই যার যার সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। এ প্রসঙ্গে জয় টেক্সটাইলের এক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের এখান থেকে একটি থ্রিপিস কিনলে আরেকটি ফ্রি দেয়া হয়। এছাড়া ১০ থেকে ১৪% প্রর্যনত্ম ডিসকাউন্ট রয়েছে। আমাদের এখানে ২৫০ থেকে ৬৫শ' টাকা দামের থ্রিপিস রয়েছে, যা কারখানা মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। আবুল খায়ের গ্রম্নপের মার্কস স্টলে পণ্যের প্যাকেজ ছেড়েছে। দুধ, ড্রিংস, চা, চানাচুর ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি বড় ও একটি ছোট প্যাকেটের প্যাকেজ আছে এখানে, দাম ৩শ' ও ২শ' টাকা। সঙ্গে আবার স্ক্র্যাচকার্ডও আছে। ঘসলেই ১০ টাকা থেকে শুরম্ন করে টিভি, মাইক্রো ওভেন, বস্ন্যান্ডার, আয়রনসহ ২০টি আকর্ষণীয় পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ। এমনই পুরস্কার অধিকাংশ স্টলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে মেলায় দিন দিন ভিড়ও বেড়ে চলেছে।
No comments