জ্যোতি বসুর অবস্থা চরম সঙ্কটাপন্ন
চিকিৎসকরা শুক্রবার জানিয়েছেন, জ্যোতি বসুর হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কাজ করার
ৰমতা হারিয়েছে। হৃদযন্ত্রের পেশীর সঙ্কোচন প্রসারণের হার ক্রমশ কমছে। তাঁর
হার্টের ভাল্বে একটি ছিদ্র দেখা গেছে। ফলে শরীরের সর্বত্র রক্ত পৌঁছাচ্ছে
না।
বেড়েছে তাঁর শ্বাসকষ্টও। অক্সিজেন গ্রহণের ৰমতাও কমেছে। যে সব পেশীর
সাহায্যে রক্ত সঞ্চালন হয় সেগুলো ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ছে। ভেন্টিলেশনে
অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। শুধু ফুসফুস আর হৃদযন্ত্র নয়, জ্যোতি বসুর
কিডনিও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। করা হচ্ছে ডায়ালিসিস।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানান, তিনি ডায়ালিসিসের ধকল নিতে পারছেন। তবে তাঁর
শরীরের যা অবস্থা, ডায়ালিসিসে শরীরের বিপাকীয় সব বর্জ্য নিষ্কাশন হবে কি
না, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সন্দিহান। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুইড জমার
পরিমাণও বাড়ছে।মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সুশ্রম্নত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জ্যোতি বসুর হৃদযন্ত্র রক্ত সঞ্চালনের কাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। প্রতি মিনিটে যত বার হৃৎপি- পাম্প করার কথা, তা করছে না। তাঁর প্রস্রাবের পরিমাণ কম হয়েছে ১৫-২০ মিলিলিটার। এভাবে চলতে থাকলে তাঁর শরীরের একাধিক প্রত্যঙ্গের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তাঁর অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক বলে মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়।
নিউমোনিয়ায় আক্রানত্ম জ্যোতি বসুকে ১ জানুয়ারি কলকাতার সল্টলেকের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁকে দেখতে এসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁর চিকিৎসার জন্য যাবতীয় সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রসত্মাব অনুযায়ী জ্যোতি বসুর চিকিৎসার জন্য দিলস্নীর এইমসের চিকিৎসকদের পরামর্শও নেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের পরীৰায় জ্যোতি বসুর ফুসফুসে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়ে। ধরা পড়ে রক্তাল্পতাও। রক্তে হিমোগেস্নাবিনের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় ৩ থেকে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে চার ইউনিট রক্তও দেয়া হয়েছে। ওষুধ বদলে চিকিৎসা চলছে। ওষুধে কখনও কখনও ভাল সাড়াও পাওয়া গেছে। কিন্তু নিত্যনতুন উপসর্গ দেখা দেয়ায় জ্যোতি বসুর সার্বিক শারীরিক উন্নতি হয়নি বলে জানান চিকিৎসকরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকম-লীর বৈঠকে জ্যোতি বসুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে পলিটবু্যরোর সদস্য নিরম্নপম সেন বলেন, 'বসুর শারীরিক অবস্থা অত্যনত্ম উদ্বেগজনক।' রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু রাজ্য সম্পাদকম-লীর বৈঠকের পরে জ্যোতি বসুর শারীরিক অবস্থার কথা দিলস্নীতে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতকে জানান। পলিটবু্যরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির শুক্রবার কলকাতায় আসার কথা।
জ্যোতি বসুর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। উত্তর ২৪ পরগনার বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে হাসপাতালের কাছে। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে সবিসত্মার আলোচনা করেন বিমান বসু। হাসপাতালে যান সিপিএমের মহিলা সংগঠনের নেত্রীরাও। সস্ত্রীক যান জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু, গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তসহ সিপিএমের বিভিন্ন সত্মরের নেতৃবৃন্দ। খবর বিবিসি/আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের।
No comments