ই-সংসদ উন্নয়নের চাবিকাঠি by প্রফেসর লুফর রহমান
হাজার হাজার নারী-পুরুষ শহর বন্দর গ্রাম থেকে ভোট দিয়ে সাংসদ নির্বাচন করেন। সকলেরই প্রত্যাশা থাকে নির্বাচিত সাংসদের কাছে এলাকার সমস্যা তুলে ধরবে এবং সাংসদ সে অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন অথবা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় সাংসদের প েসময়মতো এলাকায় যাওয়া সম্ভব হয় না। সেেেত্র এলাকাবাসী তাদের সমস্যার কথা জানাবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ই-সংসদ এসব সমস্যার চমৎকার সমাধান দিতে পারে। বরং সামনাসামনি কথা বলার চাইতে এটি আরও কার্যকরী। এখানে আইনগত প্রমাণ থেকে যায়। যিনি আবেদন করেন এবং যিনি (সাংসদ) সেটি গ্রহণ করেন উভয়েই আইনের আওতায় পড়ে যান। কাজেই কারও অস্বীকার করা বা গুরুত্ব না দিয়ে উপায় থাকে না। এ ধরনের কাজে সম্মানিত সাংসদরাও উৎসাহিত হন। কারণ তিনি জনসাধারণের জন্য কি কাজ করেছেন তারও প্রমাণ থেকে যায়।ই-সংসদ জনগণকে উন্নতমানের সেবা দিতে পারে। তথ্য প্রযুক্তিই হতে পারে বাংলাদেশের সংসদের জন্য অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের হাতিয়ার এবং সংসদই হতে পারে মত বিনিময় ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ৯০টি দেশের ওপর সমীা চালিয়ে দেখেছে যে, ৭৭টি দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে অধিকতর সেবা দিতে সম হয়েছে। গবেষণায় আরও ল্য করা গেছে যে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বিশাল বৈষম্য বিদ্যমান। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসাধারণের তথ্য প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ও আসক্তি অনেক বেশি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানে একই রকম পরিস্থিতি ল্য করা গেছে। উক্ত অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত থেকে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সংসদের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে এবং খোলা মনের পরিচয় দিয়েছেন মাননীয় সাংসদবর্গ। সাংসদবর্গ বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন দারুণভাবে। শুধু তাই নয়, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারায় কিভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছেন সেই বিষয়টিও তুলে ধরলেন নির্দ্বিধায় নিঃসঙ্কোচে। একটি জাতি প্রযুক্তির েেত্র আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য এটিই পূর্ব ও শুভ লণ। বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতাই আমাদের শিখিয়ে দেয় বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সাংসদের তথ্য প্রযুক্তিতে মতায়নের মাধ্যমে কিভাবে ই-সংসদ বাস্তবায়ন করা যায়।
এখন থেকে ১৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংসদীয় অবস্থা এমন ছিল না। ঐ সময় বিলাতের কমনওয়েলথ সচিবালয়, সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সাংসদ, আমলা, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, অধ্যাপক, ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য পেশার সিনিয়র কর্মকর্তাদের তথ্য প্রযুক্তিতে মতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত একটি দেশ। উভয় সংস্থারই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সামাজিক বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিণের ব্যবস্থা রয়েছে সদস্য দেশের জন্য। বাংলাদেশ ও ভারত দুইটি প্রতিবেশী সদস্য রাষ্ট্র। অথচ প্রযুক্তির েেত্র দুটি দেশের মধ্যে বিশাল ব্যবধান। কমনওয়েলথ বা জাতিসংঘের কাজ হলো দুটি দেশের মধ্যে বৈষম্যের কারণ খুঁজে বের করা এবং সেই অনুযায়ী প্রশিণ কিংবা মতায়নের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনা।
অনেক দেশই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ ঐ সব দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ জনশক্তি পাওয়া যায় না অথবা সরকার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয় না। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলাদেশ এই ধরনের একটি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। কমনওয়েলথের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিচালক মিসেস জুডি জনসন প্রবন্ধকারকে (লুৎফর রহমান) বাংলাদেশে কমনওয়েলথ নির্ধারিত তথ্য প্রযুক্তিগত প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত এ ধরনের একটি প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণকারীদের আকর্ষণ করার কাজটি ছিল খুবই কঠিন। সেেেত্র সমন্বয়কারী অনেক খানি সাফল্যের দাবিদার। কারণ অংশগ্রহণকারীরা অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। ঐ সময়ে এশিয়া মহাদেশ থেকে একমাত্র বাংলাদেশ এবং আফ্রিকা থেকে তানজানিয়া সফলভাবে তথ্য প্রযুক্তি প্রশিণ পর্ব সমাপ্ত করে।
তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশ সংসদের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রযুক্তি গণতান্ত্রিক প্রযুক্তিকে আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং জবাবদিহিমূলক করতে পারে। কমনওয়েলথের তথ্য প্রযুক্তি প্রকল্পের ন্যায় জার্মানিতে অবস্থিত জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য একটি চমৎকার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানদূতের পদ সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানদূত বিজ্ঞানকে সংযুক্তিকরণ এবং বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার আদর্শে বিশ্বাসী। তারা বিজ্ঞান সংযোজনের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে এবং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিজ্ঞানের সাথে সমর্্পর্কযুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। এই কার্যক্রম প্রথমে শুরু হয় ইউরোপে, পরবতর্ীতে আফ্রিকায় এবং বর্তমানে এশিয়ার বাংলাদেশে। প্রবন্ধকার লুৎফর রহমানকে বাংলাদেশের বিজ্ঞানদূত হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কমনওয়লথের তথ্য প্রযুক্তির বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে আশা করা যায়, বর্তমান সরকার ই-সংসদ কার্যকর করার ল্যে বিজ্ঞানদূতকে যথার্থভাবে ব্যবহার করবে এবং জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত পথ অনুসরণে জোরালো ভূমিকা রাখবে। আর এভাবেই বাংলাদেশ ই-সংসদকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে উন্নতির চরম শিখরে পেঁৗছে যাবে।
লেখক : বাংলাদেশ বিজ্ঞানদূত (জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়)
প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ই-মেইল : ফর্লতমরআটতভধ.ডমব
No comments