বিড়াল প্রজাতির বিবর্তন by ইব্রাহিম নোমান
বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে মজার তথ্য পাওয়া গেছে। আদিম যুগের খড়গ-দনত্ম বাঘ ও আধুনিক বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের মাথার খুলি ও চোয়ালের বিবর্তনে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল ছিল।
এই দুই প্রজাতি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠে। তাদের শিকার করার পদ্ধতিই পরবর্তীতে তাদের অসত্মিত্বের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাংসাশী প্রাণীর দু'টি গোষ্ঠীই শিকারের ৰেত্রে ভিন্ন পরিবেশে বিবর্তিত হয়েছে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরের কর্মকর্তা পার ক্রিশ্চিয়ান সেন অনলাইন সাময়িকী পেস্নাস ওয়ানে নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা লিখেছেন। সত্মন্যপায়ী প্রাণীদের ইতিহাসে বিড়াল প্রজাতি হচ্ছে মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বিশেষায়িত প্রাণী। এরা মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। বিড়াল প্রজাতি দু'টি প্রধান উপবিভাগে বিভক্ত। এরা হচ্ছে (সকল আধুনিক প্রজাতিসমূহ) বিড়ালসদৃশ প্রাণী এবং বর্তমানে বিলুপ্ত খড়গ-দনত্ম বাঘ। দুটি গোষ্ঠীর কঙ্কাল মোটামুটি একই রকম। কিন্তু তাদের খুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এ থেকে অনুমান করা হয় যে, দু'টি গোষ্ঠী সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে এবং সময়ের ধারায় বিবর্তিত হয়েছে।অবশ্য ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে সমগ্র মাথার খুলি ও চোয়ালের হাড়ের ব্যাপক বিশেস্নষণের মাধ্যমে নতুন কৌশলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে বিড়াল প্রজাতির বিবর্তনের বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছে। আকৃতির দিক থেকে আধুনিক বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের মাথার খুলি দেখতে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। ছোট বিড়াল প্রজাতির প্রাণীরা বাঘ প্রজাতির তুলনায় সংৰিপ্ত আকৃতির, লম্বা ও গম্বুজাকৃতির হয়ে থাকে। অন্যদিকে সিংহ, বাঘ বা চিতার মতো বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের মাথার খুলি অনেক সমপ্রসারিত এবং আয়তাকার। এর আগে আধুনিক বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের দু'টি সুনির্দিষ্ট উপ-বিভাগ ছোট ও বড় বিড়াল শ্রেণীতে বিভক্ত করতে এসব আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত হয়েছে, যা বিবর্তনগত অস্থিবিদ্যায় পার্থ্যকের সূচনা করেছে। অবশ্য, বাসত্মবে এ ধরনের কোন অসত্মিত্ব নেই। খুলির প্রকৃত আকার লৰ্য করলে বোঝা যায় ুদ্রতম থেকে বৃহত্তম প্রজাতির ৰেত্রে ধীরে ধীরে এই ধারার ছাপ রয়েছে।
আধুনিক বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের খুলির আকৃতির পিছনে সবচেয়ে শক্তিশালী বিবর্তনজনিত চালিকাশক্তি হচ্ছে এর শিকারি দাঁতসমূহ। দেহের আকৃতি নির্বিশেষে শিকার ধরা ও হত্যা করার ৰেত্রে এটি খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। দেহের আকৃতির ভিত্তিতে বিড়ালে মসত্মিষ্কের আকার ছোট হয়ে থাকে। বিড়ালের আকার বড় হলে তুলনামূলকভাবে এর মাথার খুলির পেছনে মগজ ধারণের স্থান অপেৰকৃত ছোট হয়ে থাকে। শিকারকে কামড়ে মেরে ফেলার জন্য বড় ও শক্ত চোয়ালের পেশী থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়টি খুলির আকৃতির ৰেত্রে ভীষণ বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে থাকে। অর্থাৎ বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের বৃহৎ চোয়াল পেশী বিশিষ্ট সমপ্রসারিত খুলি থাকা প্রয়োজন। তারা শিকারকে কামড়ে মেরে ফেলার মতো শক্তির অধিকারী হয়। খড়গ-দনত্ম বিশিষ্ট বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের বিবর্তনের ৰেত্রে সব চেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে শিকারকে ধরে গলায় দ্রম্নত কামড় বসিয়ে মেরে ফেলার মতো ৰমতা থাকা। এ বিষয়টি সমগ্র খুলি এবং চোয়ালের হাড়ের আকৃতির পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছে।
উন্নত প্রজাতির থেকে শুরম্ন করে বর্তমানের বিড়াল শ্রেণীর ছোট-বড় সকল প্রাণী এবং আদিম খড়গ-দনত্ম বাঘের ৰেত্রে এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য। আধুনিক বিড়াল প্রজাতি থেকে যে কোন উন্নত খড়গ-দনত্ম বাঘের মাথার খুলি ও চোয়াল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। অধিকতর আদিম বিড়াল প্রজাতির থেকে তারা আরও আলাদা। শেষোক্ত প্রজাতির বাঘের ছোট ছোট ছেদন দনত্ম ছিল বলে মনে করা হয়। আদিম খড়গ-দনত্ম বাঘ প্রচ- কামড় বসিয়ে দ্রম্নত শিকারকে মেরে ফেলতে পারত। একই আকৃতির আধুনিক বাঘের চাইতে তারা ছিল অনেক শক্তিশালী চোয়ালের অধিকারী। শিকারের গলায় কামড় বসিয়ে মেরে ফেলার এই পদ্ধতি সম্ভবত বড় বড় পশু শিকারে বেশ কার্যকর ছিল। শিকারজীবী প্রাণীদের পরিবেশের ৰেত্রে এটা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অবশ্য এটা সম্ভবত খড়গ-দনত্ম বাঘ থেকে উন্নত বিড়াল শ্রেণীর প্রাণীদের জন্য কিছুটা খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা কেবল সীমিত সংখ্যক বড় বড় পশু শিকার করত। এর ফলে পরিবেশে খুব দ্রম্নত পরিবর্তন ঘটে এর ফলে প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আধুনিক ধূসর চিতা, অস্থিবিদ্যাগত দিক দিয়ে আদিম খড়গ-দনত্ম বাঘের খুবই কাছাকাছি। তাই ক্রিশ্চিয়ান সেন মনে করেন, সময়ের বিবর্তনে তারা আরও বিশেষায়িত এবং সত্যিকারের খড়গ-দনত্ম বিশিষ্ট হয়ে উঠবে।
সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
No comments