জীবনকে সহজ করার দায়িত্ব সরকারেরই- প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা



যে সমাজ প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নেয় না, বলা যায় সে সমাজ নিজেই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী যে বয়সেরই হোক, তার দুর্দশার শেষ নেই। কেবল পরিবারের পক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুর বিকাশ ও অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
গতকাল সোমবারের প্রথম আলোয় বরগুনা জেলার প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে এই নির্মম বাস্তবতার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আসা প্রয়োজন।
সরকারি হিসাবে কেবল বরগুনাতেই প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ১১ হাজার। বেসরকারি পরিসংখ্যান এর দ্বিগুণের মতো। এদের মধ্যে সনদ রয়েছে মাত্র ৭০৩ জনের! সরকারি সংস্থার চোখে বাকিরা যেন থেকেও নেই। এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাগুলোরও তৎপরতাও জোরদার নয়। এই বিপুলসংখ্যক প্রতিবন্ধীর অনেকেই শৈশব বা কৈশোর পর্যায়ে আছে। এটা হলো সেই বয়স, যখন আদর-যত্নের পাশাপাশি বিশেষ সেবার প্রয়োজন হয়। অথচ সরকারি উদ্যোগ আয়োজন অতি নগণ্য। জেলার একমাত্র প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ১০ হলেও কার্যত আছে পাঁচজন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক একজন। তাঁকেই ওই পাঁচ শিশুর খাবার, পড়ালেখাসহ প্রতিষ্ঠানের দেখভালও করতে হয়। এই শিশুদের জন্য খাওয়া বাবদ মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৫০ টাকা। অর্থাৎ একেক বেলায় ১৭ টাকা করে। শিশুদের খাবার ও অন্যান্য সুবিধা যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে এই পরিহাসটুকু করা কেন?
যদি সরকারি সেবার হাল এই হয়, যারা এটুকু সেবা থেকেও বঞ্চিত তাদের অবস্থাটা কী? অপুষ্টি, অচিকিৎসা ইত্যাদি কারণে দরিদ্র পরিবারেই প্রতিবন্ধী শিশুদের উপস্থিতি বেশি। এমনিতেই প্রতিবন্ধীরা উপেক্ষিত, দরিদ্র পরিবারে সেই উপেক্ষা চরম আকার পায়। এদের পাশে সরকার ছাড়া আর কে দাঁড়াবে? অন্যদিকে যাদের অর্থকষ্ট কম, সেসব পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুরাও ভালো নেই। স্কুলে, রাস্তায় ও পরিবহনে—সব পাবলিক স্থানে প্রতিবন্ধীদের পড়ালেখা, চলাফেরা ও কাজকর্মের সহায়ক পরিবেশ তো নেই-ই, উপরন্তু এসব জায়গায় তারা নিরন্তর চাপের সম্মুখীন হয়। আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ যোগ্যতা ও মর্যাদার অনুকূল নয়। এত সব বাধার মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে নিদারুণ অসহায়ত্বে ভোগেন। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের অর্থবহ উদ্যোগের আশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.