খালেদা জিয়া আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা দিতে পারেন কাল
কাল রবিবার যে কোন সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্প্রতি সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো মেনে না নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। পাশাপাশি দেশের স্বার্থ ৰুন্ন হবার অভিযোগে সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
ইতোমধ্যে আন্দোলন জোরদার করতে শরিক ও সমমনা দল এবং ভারতবিরোধী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। তবে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী দেবার আগে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি গ্রম্নপ ও দলের সিনিয়র নেতারা সারাদেশ সফর করবেন। দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় স্বাৰরিত তিনটি চুক্তি ও দু'টি সমঝোতাস্মারককে দেশবিরোধী আখ্যা দিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দেবেন বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া। এ সময় খালেদা জিয়া জনসচেতনতা সৃষ্টির লৰ্যে সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, বিৰোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন।ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার দিন দুপুরেই দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থ রৰা না করে ভারতের স্বার্থ রৰা করেছেন। একইদিন বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে সব কিছু দিয়ে এসেছেন, নিয়ে এসেছেন শুধু আশ্বাস। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের আশ্বাসে বিশ্বাস করে না। ভারত অতীতেও অনেক আশ্বাস দিয়ে তা রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। গয়েশ্বর বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ সরকারের এ সিদ্ধানত্ম মেনে নিতে পারে না। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে.জে.(অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সম্পাদিত চুক্তি দেশের জনগণ মেনে নেবে না। তাই বিএনপি এর বিরম্নদ্ধে আন্দোলনে যাবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর ঐদিনই বুধবার রাতে বিএনপির নতুন স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠক ডাকেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় চুক্তি ও স্মারককে দেশবিরোধী আখ্যা দেয়া হয়। এর বিরম্নদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পরামর্শ দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চেয়ারপার্সনকে জানান, কোনভাবেই এসব চুক্তি মেনে নেয়া যাবে না। তাঁরা আন্দোলনে যাবারও পরামর্শ দেন। এৰেত্রে চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করার পাশাপাশি সমমনা দল ও ভারতবিরোধী সংগঠনগুলোকে একত্রিত করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেন। সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত চুক্তিগুলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পরিপন্থী। চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথ ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত ফারাক্কা ও তিসত্মার পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে না। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিও মানবে না, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধানত্ম থেকেও তারা সরে আসবে না। এসব বিষয় জনগণকে বোঝাতে পারলে সরকারের বিরম্নদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা যেতে পারে। এজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার নেতাদের সমন্বয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের দেশব্যাপী সফরের ওপরও গুরম্নত্বারোপ করা হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করতে যোগাযোগের জন্য স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তেমনি জোটের বাইরে সমমনা দল ও ভারতবিরোধী সংগঠনগুলোকে একত্রিত করতে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া চুক্তির বিরম্নদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে দেশব্যাপী সফরের জন্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে কয়েকটি গ্রম্নপ তৈরি করতে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র কয়েক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরম্নর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিএনপি ও জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী ও জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতাস্মারকের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতাস্মারকগুলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক সইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলেও তারা মনত্মব্য করেন। কাজেই বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনে যাবার পরামর্শ দেন তারা। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের জানান, সরকার যে দেশবিরোধী কর্মকা- করছে, সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। বিএনপি অবশ্যই দেশবিরোধী কোন কর্মকা- মেনে নেবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন সরকারের দেশবিরোধী কর্মকা- সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করতে পেশাজীবীদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
No comments