আগের রূপে যানজট, সিগন্যাল পদ্ধতি মানছে না চালকরা- জনবল সঙ্কটে মোবাইল কোর্ট গঠন হচ্ছে না
আবারও ভেসত্মে যেতে বসেছে নগরীর যানজট নিরসনে ডিএমপির নতুন উদ্যোগ। হাত দিয়ে চলছে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ। রাজপথ দখলে চলে গেছে বিভিন্ন পরিবহন চালকদের। কমেছে নজরদারি। বেড়েছে স্বেচ্ছাচারিতা।
ফলে আগের রূপে ফিরছে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি মানছে না চালকরা। অনেক সিগন্যালে বিকল হয়ে আছে বাতি। লেন ব্যবহারে উৎসাহ হারিয়েছেন পরিবহন চালকরা। সেই সঙ্গে কমেছে মোবাইল কোর্টের তৎপরতা। নামমাত্র মামলা করে দায় সারছে ট্রাফিক পুলিশ। জনবল সঙ্কটের কারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা যাচ্ছে না। যে কারণে ছুটির দিনেও যানজট পিছু ছাড়ছে না নগরীর মানুষের। বেড়েছে ভোগানত্মি। সব মিলিয়ে ভিআইপি সড়ক থেকে শুরম্ন করে অলিগলি পর্যনত্ম যানজটে পুরনো আদলে যাচ্ছে ঢাকা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতুন কোন উদ্যোগ নেই নগর পুলিশের। মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পৰ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজনসহ নানা কারণে যানজট বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। আজ থেকে নতুন উদ্যমে আবারও শুরম্ন হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ অভিযান।
নগরীর যানজট নিরসনে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের নানা পরিকল্পনা ভেসত্মে যাওয়ার পর ডিসেম্বরের শেষ দিকে নতুন উদ্যমে আবারও মাঠে নামে ডিএমপি। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার ভিআইপি সড়কগুলোকে যানজট মুক্ত রাখার টার্গেট করা হয়। নেয়া হয় নতুন নতুন পরিকল্পনা। এর মধ্যে রয়েছে, লেন ও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি। নতুন এই পদ্ধতি সবার কাছে পেঁৗছে দিতে মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পৰ থেকে সপ্তাহব্যাপী চালানো হয় প্রচার অভিযান। বিতরণ করা হয় লিফলেট। মাইকিং চলে সমানতালে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। আইন অমান্যকারীদের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতার, জরিমানা, লাইসেন্স জব্দ করা, গাড়ি আটকসহ রাখা হয় বেশ কয়েকটি শাসত্মির বিধান। ২১ থেকে ২৮ নবেন্বর পর্যনত্ম পরীৰামূলকভাবে বিভিন্ন সড়কে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে গত বছরের আট ডিসেম্বর থেকে যানজট নিরসনে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে ট্রাফিক পুলিশ। উদ্যোগের প্রথম পর্যায়ে সফলতা বেশ। শধু মিডিয়াই নয়, সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও বাহবা পান ট্রাফিক বিভাগ। যানজটের যন্ত্রণা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলে সাধারণ মানুষের। ভিআইপি সড়কের গুরম্নত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয মোবাইল কোর্ট। আইন অমান্য করলেই নেয়া হয় শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা। দীর্ঘ সময় পর যানজট নিরসনে এবারের সফলতা নিযে আশাবাদী হন অনেকেই। যদিও নগর পরিকল্পনাবাদীরা আগে থেকেই বলছিলেন, সফলতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন। কারণ অপরিকল্পিত নগরে হঠাৎ করেই এ ধরনের উদ্যোগ বাসত্মবায়ন কঠিন। এই উদ্যোগ নেয়ার আগে বাসত্মবায়ন করতে হবে ঢাকা মহানগরের আধুনিকায়ন নিয়ে তৈরি করা মহাপরিকল্পনার সবকিছুই।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। যানজটের পুরনো চেহারায় ফিরে আসে গোটা রাজধানী। পথে পথে বাড়ে নাগরিক দুর্ভোগ। নগরজুড়ে অসহনীয় যানজটের কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন সামান্য সফলতার পর আবারও কেন যানজট? সরেজমিন দেখা গেছে, যানজট নিরসনে ভিআইপি সড়কগুলোতে মোবাইল টিমের বিশেষ অভিযান এখন নামমাত্র। কমেছে মামলাসহ আইন অমান্যকারীদের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা। যে কারণে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরিবহন চালকরা। রাজপথ দখলে চলে গেছে বিভিন্ন পরিবহন চালকদের। ইচ্ছামতো গাড়ি চালাচ্ছে পরিবহন চালকরা। চলছে ওভারটেকিং। চলাচলে মানা হচ্ছে না লেন পদ্ধতি। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা আগের মতো নেই। কোথাও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি বিকল। কোথাও চালকরা মানছে না। লাল বাতি জ্বললে গাড়ি চলার দৃশ্য ভিআইপি সড়কে এখন অহরহ। সবুজ বাতি জ্বললে গাড়ি থেমে থাকার চিত্রও চোখে পড়ে সমানতালে। বিভিন্ন অপরাধে জব্দ করা গাড়ি আবারও ফিরে এসেছে রাসত্মায়। নতুন করে গাড়ি আটক কমেছে। সেই সঙ্গে পুলিশের বিশেষ অভিযান নামমাত্র হওয়ার কারণে রাসত্মায় ফিরে এসেছে পুরনো, ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্র না থাকা অসংখ্য গাড়ি।
যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আানতে মহানগর পুলিশের বিশেষ অভিযানে অভিযান শুরম্নর এক সপ্তাহে ১০৩ জন চালককে গ্রেফতার করা হয়। আটক করা হয় ১৫৭টি গাড়ি। মোটরযান আইনে আট হাজার ১৮০টি মামলা করা হয়। এ সময় ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার অপরাধে পৌনে আট লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮৪ জন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। আট ডিসেম্বর থেকে শুরম্ন হওয়া প্রথম দিনের বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মোটরযান ও চালকের বিরম্নদ্ধে মোটরযান আইনে ৬৮৯টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ৬১ হাজার ৯০০ টাকা। তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ১১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স। জব্দ করা হয় ৫০টি। ট্রাফিক সংক্রানত্ম বিভিন্ন গুরম্নতর অপরাধে ১৭ জন গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয়েছে ১৩টি গাড়ি।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিকের কমিশনার সেলিম জাহাঙ্গীর জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি নগরীতে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। ঘন ঘন আয়োজন করা হচ্ছে সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী। এ ছাড়া মেলার আয়োজনও চলছে সমান তালে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় ভিআইপি সড়কে পরিবহন বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে যানজট দ্রম্নত ছড়িয়ে যায়। যে কারণে যানজট বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা চিনত্মিত। তবে নতুন কোন পরিকল্পনা নেই। আজ রবিবার থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে শুরম্ন হচ্ছে ১২ টিমের বিশেষ অভিযান। নতুন উদ্যমে যানজট নিরসনে আমরা কাজ শুরম্ন করছি। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বিশেষ অভিযানের জন্য নতুন টিম গঠনের বিষয়টি এখনও চূড়ানত্ম হয়নি।
No comments