নারীদেও চাকরির হালচাল by লাভলী হক লাবণ্য
যে কোন পেশাতেই মেয়েরা এখন স্বাচ্ছন্দ্য। যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠায় তাঁরা সমান পারদশর্ী। তারপরও কি মেয়েদের জন্য চাকরির জগতটা যথেষ্ট প্রসারিত? কিংবা প্রসারিত হলেও কি তাঁরা সমান সুবিধা পাচ্ছেন? এ বিষয়ে মতামত জানতে আমরা হাজির হয়েছিলাম সদ্য মাস্টার্স শেষ করা ক'জন চাকরিপ্রাথর্ীর কাছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ'র ছাত্রী তিতলী বললেন, আগের তুলনায় মেয়েদের চাকরির ৰেত্রটা যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে তেমনি প্রতিযোগিতাও বেশি। আবার মেয়ে হিসেবে কিছু অবহেলার শিকারও হতে হয়। যেমন_ কিছুদিন আগে আমি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম ইন্টার্নশিপ করার জন্য। ই্চ্ছা ছিল ইন্টার্নিশিপ করার পর ফুলটাইম জব করব। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অভ্যনত্মরীণ কিছু সমস্যা দেখাল কর্তৃপৰ, যেমন_ টয়লেট সমস্যা। এই প্রতিষ্ঠানে সবাই ছেলে। আমি একা মেয়ে। সুতরাং আমার এখানে কাজ করতে সমস্যা হবে। এসব কারণে আমার আর সেখানে ফুলটাইম চাকরি করা হয়নি। ইন্টার্নিশিপ করেই চলে এসেছি। এছাড়াও বিদেশী ফার্ম, ওষুধ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের একটু বেশি সময় দিতে হয়, যা অনেক সময়ই সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে পরিবার থেকে জোরালো সমর্থন পাচ্ছি চাকরি করার জন্য। বাবা-মা বলছেন, পড়াশোনা করেছ, চাকরি কর। ক্যারিয়ার গড়। পড়াশোনা কাজে লাগাও। এই সমর্থনটা আগে পাওয়া যেত না। এখন বরং পরিবার থেকে চাপ দিচ্ছে চাকরি করার জন্য। মেয়েদের চাকরি করার জন্য পারিবারিক সমর্থন খুব জরম্নরী। পরিবার থেকে সমর্থন না পেলে একটি মেয়ের ক্যারিয়ার গড়া খুব কঠিন।সমাজবিজ্ঞানে সদ্য মাস্টার্স ডিগ্রী পাস করা সাহানা বললেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। চাকরিতে সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন বিষয় হয়ে পড়েছে নারী-পুরম্নষ সবার জন্য। যদিও বলা হয়, পুরম্নষের চেয়ে নারীর চাকরির সুযোগ একটু বেশি। আমার মতে, তা সুন্দরী ও স্মার্ট নারীদের ৰেত্রে। চাকরির ৰেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পরিচিতি। যে কোন প্রতিষ্ঠানেই পরিচিতি ও টাকা_ এ দুটো জিনিস থাকলেই চাকরি নিশ্চিত। এৰেত্রে যোগ্যতা তেমন একটা প্রাধান্য পায় না। তার মতে, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরির ৰেত্রে অনেক সমস্যার শিকার হতে হয়। অনেক ৰেত্রে মেয়েদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করতে হয়। এছাড়া অনেক জায়গায় দুনর্ীতি রয়েছে। মেয়ে হিসেবে বাড়তি সুবিধা সব সময় পাওয়া যায় না বরং যোগ্যতার মাপকাঠিতেই মেয়েদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিবার থেকে চাকরি করার জন্য বেশ উৎসাহ পাচ্ছি। তবে আমার মনে হয়, বিবাহিত মেয়েদের ৰেত্রে অনেক সময় শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাধার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেতন বেশি পেলে সমস্যাটা আরও বেড়ে যায়। আর একটি মেয়ের পারিবারিক সমর্থন ছাড়া চাকরি করার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং পরিবারের মধ্য থেকেই প্রথমে সমর্থন আসা উচিত। নয়তো উচ্চ শিৰায় শিৰিত হয়েও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব হয় না।
জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন কেয়া। বর্তমানে চাকরির ৰেত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের তুলনায় মেয়েদের চাকরির ৰেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে ঠিকই, তবে সবাই সেই সুযোগ পাচ্ছে না। কেননা সব চাকরির ৰেত্রে অভিজ্ঞতা চায়। কিন্তু কর্তৃপৰের বুঝাতে হবে নতুনরা চাকরি করার সুযোগ না পেলে তারা অভিজ্ঞতা পাবে কোথায়? চাকরির ৰেত্রে বিশেষ করে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব। এজন্য কর্তৃপৰের সঙ্কীর্ণ মনমানসিকতা দায়ী। এমনই একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে কেয়া বললেন, যেমন_ কিছুদিন আগে আমি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। কর্তৃপৰ আমার কি কি করণীয় সবকিছু বুঝিয়ে দিল এবং সঙ্গে আরেকটা কথা এ্যাড করল : সবকিছুই করতে হবে; সঙ্গে আরও কিছু করতে হবে। আমি যদি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকি তবে আপনার দ্রম্নত পদোন্নতি হবে। এ কথার অর্থ কি? এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। তারা চাকরি ৰেত্রে অনেক গুণ চায় ঠিক আছে, কিন্তু প্রধানত চায় মেয়েদের সৌন্দর্য। এই সমস্যা বর্তমান যুগে মেনে নেয়া যায় না। মেয়েদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিয়োগ দেয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই পুরম্নষশাসিত সমাজ মেয়েদের সৌন্দর্যের মাপকাঠিতেই বিচার করছে_ সেটা চাকরি, বিয়ে সব ৰেত্রেই। তাঁর মতে, মেয়েদের সফলতার জন্য তাদের চিনত্মাধারাও উদার করা প্রয়োজন। যেমন অনেক মেয়েই আছেন, তাঁরা পড়াশোনা করছেন ভাল ও যোগ্য একটা পাত্র পাওয়ার জন্য। এই ধরনের মনমানসিকতা একবিংশ শতাব্দীর মেয়েদের থাকা উচিত না। মেয়েদেরকে মুক্তচিনত্মার অধিকারী হতে হবে। তাদের চিনত্মার ৰেত্রটাকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে না রেখে আরও প্রশসত্ম ও উদার চিনত্মা করতে হবে। তা হলেই মেয়েরা শুধু চাকরি নয়, জীবনের যে কোন ৰেত্রে সফলতার স্বাৰর রাখতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
No comments