দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে এমএলএম ব্যবসা করা যাবে না by ফখরুল ইসলাম

দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে আর মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করা যাবে না। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করা যাবে না কাউকে। এমএলএমের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করা যাবে না কোনো অবস্তুগত বা অলীক পণ্য। সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে—এমন পণ্য বা সেবাও নিষিদ্ধ করা হবে।


এমএলএমে শুধু বস্তুগত পণ্য বিক্রি করা যাবে এবং এসব পণ্যে মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এ মোড়কে আবার পণ্যের উৎপাদক, পরিমাপ, ওজন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।
এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে ডাইরেক্ট সেল আইন, ২০১২-এর খসড়ার একটি সংক্ষিপ্ত-সার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা আইনের এ খসড়ায় ১৩টি অধ্যায়, ৫০টি ধারা ও দুইটি তফসিল রয়েছে।
এই আইন কার্যকর হওয়ার পর পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ বলে গণ্য হবে—এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য খসড়ায় এমএলএম-কে পণ্য বা সেবা বিপণনের ‘অভিনব কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ভারত, চীন, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা রয়েছে। বাংলাদেশে তা নেই। অথচ এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে।
এতে বলা হয়েছে, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে নিবন্ধন নিয়ে এবং এমনকি নিবন্ধন ছাড়াও অনেকে এমএলএম ব্যবসা করছে। এগুলোয় কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা হয়রানি ও প্রতারণা করছে জনগণের সঙ্গে। অনেক কোম্পানি গচ্ছিত অর্থ আত্মসাৎ করেও মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। এ অবস্থায় এমএলএম ব্যবসাকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা জরুরি।
এমএলএমের পাশাপাশি এ ধরনের পদ্ধতি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, পিরামিডসদৃশ বিক্রি কার্যক্রম, দ্বারে দ্বারে বিক্রি, টেলি মার্কেটিং, ই-মার্কেটিং, ডাইরেক্ট মার্কেটিং সিস্টেম, টিমওয়ার্ক মার্কেটিং সিস্টেম, ফ্রিডম এন্টারপ্রাইজ, হোম বেইজড মার্কেটিং, হলিডে বিজনেস ইত্যাদি নামে পরিচিত বলে সংক্ষিপ্ত-সারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, আমাদের দেশে এগুলো কোম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত। অনেক ক্ষেত্রে শুধু ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমেও ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ১০ বছর আগে ১৬টি থাকলেও ২০১০ সাল নাগাদ ৭০টি কোম্পানি এমএলএম রেজসকোতে নিবন্ধিত। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রেজসকো বর্তমানে নিবন্ধন বন্ধ রেখেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে এমএলএমের নামে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, সমবায় সমিতি, পর্যটন ও হলিডে প্যাকেজ, আবাসন ও বনায়নের পাশাপাশি ভেষজ ও হারবাল, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং গৃহস্থালি ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এ পদ্ধতির ইতিবাচক দিক হচ্ছে—বিপুল পরিমাণ মানুষের কমিশন হিসাবে আয়ের সুযোগ। আর নেতিবাচক দিক হচ্ছে—অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ইত্যাদি।
শুধু আইন প্রণয়ন নয়, এ আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একটি পরিদপ্তর করা হবে, যা ‘ডাইরেক্ট সেল নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তর’ নামে অভিহিত হবে। পরিদপ্তরের একজন নিয়ন্ত্রক থাকবেন, যিনি হবেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব ও ক্ষমতার মধ্যে আছে—ডাইরেক্ট সেল বা সরাসরি বিক্রয় কার্যক্রমের লাইসেন্স দেওয়া, লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত, বাতিল ও পুনর্বহাল করা; ক্রেতা, ক্রেতা পরিবেশক ও ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং তা লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তি; অপরাধ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনা ইত্যাদি।
আইন পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ বর্তমানে যেসব কোম্পানি ডাইরেক্ট সেল ব্যবসায় জড়িত, তাদের আইন জারির ৯০ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস, বাংলাদেশের (আইসিএবি) মতামত নিয়ে আইনের খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এটি পাস হলে এবং আইনটি কার্যকর হলে দেশের এমএলএম ব্যবসা শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।

No comments

Powered by Blogger.