পাঠ্যবই যখন অনলাইনে by তন্ময় হক
বিশ্বজুড়ে ই-বুকের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। অনেক দেশেই পাঠ্যবই হিসেবে ই-বুকের ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশেও পাঠ্যবইগুলো ই-বুক আকারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে পাঠ্যবই হিসেবে ই-বুককে জনপ্রিয় করতে হলে আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। আশার কথা হলো, সরকারি পর্যায় থেকে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আভাস মিলেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কাগজের বইয়ের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের হাতে ইলেকট্রনিক বই তুলে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে আমরা প্রত্যেক ছেলেমেয়ের হাতে কাগজের মোটা বই নয়, ইলেকট্রনিক বই তুলে দেব। সব বই (এক ডিভাইসে) ওখানেই থাকবে। ওটা হাতে নিয়ে গিয়েই তারা পড়াশোনা করবে। কাগজের মোটা বই আর বহন করতে হবে না।' প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশাজাগানিয়া। শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা বহন নিয়ে অনেক ধরনের কথা প্রচলিত হয়েছে। ই-বুককে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা কমবে।
এরই মধ্যে ২০১২ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব বই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া এসব বই বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে (িি.িহপঃন.মড়া.নফ) এসব বই পাওয়া যায়। বইগুলো পিডিএফ আকারে রয়েছে। পিডিএফ আকারের বইগুলো সংরক্ষণ করে নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই পাঠ্যবই পাবে। এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তক আরও একটি সাইটে (িি.িবনড়ড়শ.মড়া.নফ) পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে এই ই-বুক সাইটটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণের এই সাইট উদ্বোধন করেছিলেন।
অনেক ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে ই-বুক সাইট শুরু হলেও সময় বিবেচনায় এখনও কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি এ উদ্যোগ। কারণ হিসেবে প্রথমেই আসবে আমাদের দেশের ইন্টারনেটের নিম্নগতির কথা। ফ্ল্যাশনির্ভর ওয়েবসাইটটি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে যে গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন, সে গতির ইন্টারনেট খুব কম ব্যবহারকারীর রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা, যেখানে এখনও ইন্টারনেট বিষয়টি সম্পর্কেই সঠিকভাবে জ্ঞাত নয়, সেখানে এই গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে কীভাবে তারা ই-বুক সাইট ব্যবহার করবে_ সেটিই প্রশ্ন। ই-বুক সাইট থেকে বই ডাউনলোড করা যায়। কিন্তু ডাউনলোড হয় রার ফাইল। উইনরার সফটওয়্যার দিয়ে রার ফাইল এক্সট্রাক্ট করলে ফ্ল্যাশ ফাইল পাওয়া যায়। ফ্ল্যাশ ফাইল আলাদা করে দেখা অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন। পিডিএফ ফাইল থাকলে সেটা আরও সহজ হতো শিক্ষার্থীদের জন্য।
তুলনামূলক এনসিটিবির সাইট থেকে বই ডাউনলোড শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ। কারণ বেশির ভাগ কম্পিউটারেই পিডিএফ পড়ার জন্য সফটওয়্যার রয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে যেহেতু সব পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে, তাই ই-বুক ওয়েবসাইটকে কেবল পাঠ্যবইয়ের ওয়েবসাইট আকারে রেখে দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত হবে। শিক্ষার্থীদের পঠন অভ্যাসকে বৃদ্ধি করে এমন দেশি-বিদেশি বইও সাইটটিতে রাখা যেতে পারে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি। ই-বুক সাইট ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
No comments