সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষিত : নির্বাচন কমিশন কী চাইছে!


ভোলা-৩ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) জসিমউদ্দিনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখার পরও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রায় এক বছর ধরে অবৈধভাবে সংসদ সদস্যের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধাই শুধু ভোগ করছেন না, নিজের নির্বাচনী এলাকাজুড়ে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নিয়মিতভাবে সংসদ সদস্যের সরকারি বরাদ্দও তুলে নিচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছেন এমপি আছেন, ভবিষ্যতে তিনিই থাকবেন। এমন সুযোগ পাচ্ছেন তিনি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ফলে।

সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ৫ বছর পার না হওয়ার অভিযোগ তুলে একই আসনে টানা ছয়বার বিজয়ী সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিনের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জসিমউদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়ার অজুহাত তুলে নির্বাচন কমিশন ওই আসন শূন্য ঘোষণার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো রায় ঘোষণার ৪ মাস পর নিজেদের আইন সংশোধন করে সরকারদলীয় সদস্যকে রক্ষার অপচেষ্টা চালায়। এই সুযোগে করা জসিমউদ্দিনের আপিল সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে ১৮ অক্টোবর। সে রায়ের আদেশ অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডের মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছলেও গা করেনি তারা। দু’মাস পার হলেও কেন পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি নির্বাচন কমিশনে আসছে না সে প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট থেকে নির্বাচন কমিশনের দূরত্ব কতদূর? উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন স্বউদ্যোগে তা সংগ্রহ করে দ্রুত কার্যকর করার অনেক নজির থাকলেও এখন তারা চুপচাপ রয়েছে। অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডের মাধ্যমে পাওয়া আদেশবলে পদক্ষেপ নেয়াও নজিরবিহীন নয়। তবে কি সরকারদলীয় সদস্য বিবেচনা করেই নির্বাচন কমিশন থেকে এখনও বলা হচ্ছে ‘উই আর ওয়েটিং ফর দ্যাট’?
এই নির্বাচন কমিশন মোটেই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। অতীতেও তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার কথা কারও অজানা নয়। বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছিল। উদ্দেশ্য জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করা। এই কাজটি তারা করেছিল অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে একাট্টা হয়ে। ফলে গত বছর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহের ঘাটতি নেই। তারপরও বৃহত্তর স্বার্থে অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার উত্তম মেনে নিয়ে সবাই গণতন্ত্রের পথে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের পুরনো খাসলত মোটেই পাল্টায়নি। তারা আগের মতো অদৃশ্য সুতার টানে পরিচালিত হতেই পছন্দ করে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রক্ষায় তাদের আগ্রহের বড়ই অভাব। ক্ষমতাসীনদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হওয়ার বদভ্যাসই আঁকড়ে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এক্ষেত্রে তারা কতটা বেপরোয়া সেটা বোঝা যায় জসিমউদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নির্বাচন কমিশনে না আসার অভিযোগের জন্য আদালতের দিকে আঙুল তোলার মধ্য দিয়ে। এটা করার ফলে যে নিজেদের পক্ষপাতদুষ্টতাই নতুন করে প্রমাণ হচ্ছে, সেটা তাদের বলার কেউ আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া আদালতের রায় কার্যকর করতে বিলম্ব ঘটানো যে প্রকারান্তরে আদালতের এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল সেটাও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে, না সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সে প্রশ্নও চাপা থাকছে না। দলীয়করণে আওয়ামী লীগের অতীত রেকর্ড সবার জানা। বর্তমান প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলীয়করণের যে মোচ্ছব শুরু হয়েছে তার হাত থেকে নির্বাচন কমিশন যদি নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতাই শুধু ক্ষুণ্ন হবে না, সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যে কোনো নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.