কে হতে চায় কোটিপতি? by মাহবুব মোর্শেদ
ভারতের সনি বা বাংলাদেশের দেশটিভিতে যারা 'কৌন বানেগা ক্রোড়পতি' বা 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠান দুটির নিয়মিত দর্শক, তাদের অনেকের কাছে হয়তো এমন কুইজ শোতে অংশ নিয়ে কোটিপতি হওয়াটাই সহজ পন্থা। কিন্তু কুইজ শো ছাড়া কোটিপতি হওয়ার আর উপায় কী? শোনা যায়, দেশে এখন হাজার হাজার কোটিপতি আছে। তাদের কাছে জেনে নেওয়া যেতে পারে কোটিপতি হওয়ার উপায়।
কিন্তু কোটিপতিরা কোটিপতি হওয়ার গল্প কি সহজে বলেন? টাকা বানানোর জাদুর প্রদীপ যাদের হাতে তারা সহজে প্রদীপের রহস্য ফাঁস করতে চান না। ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়। যারা বাঁকা চোখে দেখতে অভ্যস্ত তারা বলেন, এমন অনেক কোটিপতি আছেন যারা কখনও কোটিপতি হওয়ার গল্পটি বলতে পারবেন না। কেননা, কোটিপতি হওয়ার অনেক পথই বন্ধুর, সাধারণ দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য বলেও বিবেচিত হতে পারে। তবু কিছু গল্প প্রেরণাদায়ক। সে গল্পগুলোও বলা যায়, শোনা যায়। সত্যি কথা বলতে, নতুন প্রজন্মের কাছে কোটিপতি হওয়ার ভালো গল্পগুলো পেঁৗছানো দরকার। শচীন বনশাল ও বিনি্ন বনশালের গল্প এ দেশের কোটিপতিদের উৎসাহিত করতে পারে। গল্পটি ছাপা হয়েছে ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যায়_ ভারতের বাণিজ্য নিয়ে বিশেষ আয়োজনে। এ দু'জন ভাই নন, আত্মীয়ও নন। কিন্তু দু'জনের মিল দারুণ। দু'জনেই বড় হয়েছেন চণ্ডীগড়ে, দিলি্ল আইআইটিতে পড়েছেন, একটি আমেরিকান ফার্মে কাজ করেছেন। দুই বছর কাজ করার পর নিজেদের ১০ হাজার ডলারের সঞ্চয় নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে শুরু করেছেন ই-কমার্সের একটি উদ্যোগ। ব্যবসা শুরুর সাল ২০০৫। অ্যামাজন ডটকমের মতো একটি সাইট শুরু করেছিলেন তারা। নাম ফ্লিপকার্ট। বই বিক্রি দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে আরও পণ্য যুক্ত হয়েছে তাদের তালিকায়। এখন ওয়েবসাইটের রেজিস্টার্ড ইউজার ১০ লাখ। আর মাসে বিক্রি এক কোটি ডলার। এমন অবস্থানে পেঁৗছাতে দীর্ঘ একটি পথ পাড়ি দিয়েছে ফ্লিপকার্ট। ভারতের ই-কমার্সের অবস্থা এখন কিছুটা উন্নত হলেও পাঁচ বছর আগে আমাদের দেশের মতোই ছিল। অনলাইনে কেনাকাটা প্রায় অসম্ভব কাজ। অনলাইনে কেনাকাটার জন্য অনলাইন ব্যাংকি বা ক্রেডিট কার্ড সিস্টেম উপযুক্ত নয়। পে-পালের মতো নিরাপদ কেনাকাটার সাইট ভারতে চালু কিন্তু খুব বেশি মানুষ এটি ব্যবহার করেন না। অনলাইনে কিছু বিক্রি করে টাকা আয় করা কঠিন। শুধু পেমেন্ট বা ব্যাংকিংই নয়, ক্রেতা যে জিনিসটি কিনলেন সেটি ক্রেতার কাছে পেঁৗছানোও কঠিন। কেননা, ভারতে ডিএইচএলের মতো কুরিয়ার সার্ভিস নেই। স্থানীয় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর শেষ পর্যন্ত নির্ভর করতে পারেনি ফ্লিপকার্ট। ফলে তারা চালু করেছে এক অভিনব পদ্ধতি_ পিওডি_ পেমেন্ট অন ডেলিভারি। ফ্লিপকার্ট ডটকমে কেউ কোনো বইয়ের অর্ডার করলে দুই থেকে চারদিনের মধ্যে ফ্লিপকার্টের কর্মী পেঁৗছে যাবে ক্রেতার বাড়িতে, বই বুঝিয়ে দিয়ে দাম নিয়ে আসবে। এভাবে অনলাইন পেমেন্টের জটিলতা এবং পেঁৗছানোর সমস্যা দুটিকেই জয় করেছে ফ্লিপকার্ট। অবশ্য যারা ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন ব্যাংকিং বা পে-পালের মাধ্যমে কিনতে চান তাদেরও সুব্যবস্থা আছে। কিন্তু মাল পেঁৗছানোর দায়িত্ব ফ্লিপকার্টের কর্মীদের। আর তাদের তৎপরতা দেখে বড় গ্রুপ ও কোম্পানিগুলোও এখন ফ্লিপকার্টের মাধ্যমে বিকিকিনি করতে উৎসাহী হচ্ছে। ফ্লিপকার্টকে বলা হচ্ছে, আরেক ইনফসিস। ভারতীয় উদ্যোগে বিশাল এক আইটি সংস্থা ইনফসিস। প্রশ্ন হলো, শচীন ও বিনি্নর মতো উদ্যোগ কি বাংলাদেশে শুরু হতে পারে? ভারতের সঙ্গে তুলনীয় হলেও আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। এখানে কেউ যদি একটি ওয়েবসাইট খুলতে চান তবে সোজাসুজি ডোমেইন হোস্টিং পর্যন্ত কিনতে পারবেন না। কিছু কিনে দেশের বাইরে টাকা পাঠাবার সহজ উপায় নেই। অনলাইন ব্যাংকিং বলে যে ব্যাপারের কথা শোনা যায় তার সঙ্গে ই-কমার্সের যোগাযোগ সামান্য। পে-পাল চালু হয়নি হাজার দাবি সত্ত্বেও। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটার নজির খুব কম। এ অবস্থায় অ্যামাজনের মতো সাইট এখানে চালু করা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে ফ্লিপকার্ট বিশেষ সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে পিওডি সিস্টেম জ্যামের শহরে জনপ্রিয় হতে পারে।
No comments