বেহাল ওষুধ পরীক্ষাগার-ভালো-মন্দ বিচার করবে কে?

ট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় ওষুধ পরীক্ষাগার (ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি) নিজেই যখন রুগ্ণ তখন ওষুধের ভালো-মন্দ বিচার কে করবে_ এ প্রশ্ন দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় নকল ও ভেজাল, এমনকি নিম্নমানের ওষুধে বাজার ছেয়ে গেলেও ভোক্তা-রোগীদের ভাগ্যের হাতে জীবন সঁপে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।


শনিবার সমকালের ২০তম পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত প্রকাশিত এক রিপোর্টে দ্বিতীয় ওষুধ পরীক্ষাগারটির বেহাল অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। পরীক্ষাগারের কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ অধিকাংশ সময়ই থাকে তালাবদ্ধ। কর্মকর্তাদের অনেকেই সাধারণত বেতন তোলার জন্যই অফিসে যান। তাছাড়া অন্তত ১০টি পদ এখনও খালি। আর নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশ থেকে আনা ওষুধ পরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানোর মতো দক্ষ জনবল গড়ে ওঠেনি। ফলে মরিচা পড়ে যন্ত্রপাতির অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এজন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকদের কারও কারও সঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তার অশুভ যোগসাজশকে দায়ী করা হয়। কারণ ওষুধ পরীক্ষাগারকে অকেজো করে রাখতে পারলে নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধ অনায়াসেই বাজারজাত করা যায়। এতে নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুতকারক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি উভয়েরই লাভ। আর ক্ষতি হয় রোগীদের। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ পরীক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে এতদিন ধরে প্রায় অকেজো অবস্থায় থাকতে পারে তা সত্যিই বিস্ময়কর। পরীক্ষাগারটির এখানে সেখানে ছড়ানো-ছিটানো ওষুধের নমুনা এবং এর ভেতরে নোংরা পরিবেশ প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠানটিকে অকেজো রাখার চক্রান্তের জালটি বিস্তৃত এবং এর সঙ্গে জড়িতরা যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই তাদের সঙ্গে লড়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কর্মক্ষম করে তুলতে গেলে বাধা আসার সম্ভাবনা প্রবল। এজন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অফিসটি যেন স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিয়মিত চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রথমে। এখানকার খালি পদগুলো পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ওষুধ পরীক্ষার সর্বশেষ আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে এবং এর ব্যবহারের উপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে জরুরি ভিত্তিতে দেশের দ্বিতীয় ওষুধ পরীক্ষাগারটিকে আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.