তবে ড্রোন হামলার অনুমতি দেওয়া হবে না-মার্কিন সেনা প্রশিক্ষকদের ফিরিয়ে আনবে পাকিস্তান

মার্কিন সেনা প্রশিক্ষকদের আগামী এপ্রিল বা মে মাসের দিকে আবার পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে দেশের অভ্যন্তরে কোনোভাবেই আর চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলার অনুমতি পাবে না সিআইএ। পাকিস্তানি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গত শুক্রবার রাতে এ কথা জানিয়েছে টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজ।


গত বছর ২৬ নভেম্বর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর বিমান হামলায় ২৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার পর দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনায় বর্তমানে কাজ করছে পাকিস্তানের সাংসদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। রাজনীতিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা পুনরায় শুরুর ব্যাপারে বেশকিছু শর্তসংবলিত একটি তালিকা ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ করতে পারেন। এর ভেতরে থাকবে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সিআইএ বা গোপন সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং অনুমতি ছাড়া আকাশসীমা লঙ্ঘন না করা।
পাকিস্তানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, শামসি ঘাঁটি বা দেশের অন্য যেকোনো স্থানে কোনোমতেই চালকবিহীন বিমানকে অনুমতি দেওয়া হবে না।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতি-অধ্যুষিত দুর্গম এলাকায় জঙ্গি দমনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল এই চালকবিহীন বিমান। এগুলোর বেশির ভাগই মোতায়েন ছিল ওই শামসি ঘাঁটিতে। তবে ন্যাটো হামলায় পাকিস্তানি সেনা হতাহতের ঘটনায় শামসি ঘাঁটি ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয়।
ফক্স নিউজের খবরে বলা হয়, ড্রোন হামলার অনুমতি দেওয়া না হলেও মার্কিন প্রশিক্ষকদের ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে এবং জঙ্গি দমনে সিআইএর সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে ন্যাটোর রসদ সরবরাহ রুট পুনরায় খুলে দেওয়া হতে পারে।
ওই জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপনের পর সম্পর্কোন্নয়নের প্রশ্নে খুব তাড়াতাড়িই অনেক কিছু ঘটতে পারে।
এ ছাড়া মার্কিন পদস্থ কূটনীতিকদের জন্য পাকিস্তানের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিশেষ দূত মার্ক গ্রসম্যান তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে পাকিস্তান সফরের চেষ্টা করে প্রত্যাখ্যাত হন। পাকিস্তান বলছে, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ চায়। যে পরিবেশ জাতি হিসেবে তাদের সম্মান দেবে, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, যেখানে উভয় পক্ষের সমান সহযোগিতা থাকবে।
এসব বিষয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘আমরা উপলব্ধি করেছি, পাকিস্তান সরকার মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ক পর্যালোচনার ওপর এখনো কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে আমরা দেশটির সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার ইচ্ছা পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে এ ক্ষেত্রে উভয় দেশেরই স্বার্থ রয়েছে।
‘পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল সম্পর্কের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নুল্যান্ড ভিক্টোরিয়া গত শুক্রবার বলেছেন, ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে শক্তিশালী ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল সম্পর্কের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত নভেম্বরে ন্যাটোর বিমান হামলায় পাকিস্তানি সেনা হতাহত হওয়ার পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুত মোটা অঙ্কের অর্থ-সহায়তা আটকে দেয়।
তবে মুখপাত্র নুল্যান্ড বলেন, পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরের ওই দুঃখজনক ঘটনার পরও সেটা বিঘ্নিত হয়নি। ডন ও এপিপি।

No comments

Powered by Blogger.