চালচিত্র-বিএনপি সংসদে ফিরছে, রাজনীতিতে ফের সুচেতনার আভাস! by শুভ রহমান
দীর্ঘ সংসদ বর্জনের পর রাজনীতিতে মনে হচ্ছে এবার সুচেতনার সুবাতাস বইতে পারে। বিএনপি এবার সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির প্রস্তাব বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতেই অটল রয়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল।
রাজনীতিতে সুস্থতা ও স্বাভাবিক গতি ফিরে আসতে আসতেই আবার সংঘাতের আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগ 'লোকদেখানো' এবং সরকারের ইসি গঠন 'পূর্বনির্ধারিত' হয়ে আছে ও তা 'একতরফা' হবে বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করেছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
নতুন ইসি গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান গত ২২ ডিসেম্বর সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সংলাপ শেষ হয়েছে ১১ জানুয়ারি বিএনপি এবং ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে। মোট ২৩টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী এ সংলাপ-উদ্যোগে আমন্ত্রিত হয়নি। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবকেও সমর্থন করেন। রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে গেছে। সে প্রস্তাবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি হবেন কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য হবেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, দুদক চেয়ারম্যান, পিএসসি চেয়ারম্যান এবং মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।
এদিকে দেশবাসী আশান্বিত হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ-উদ্যোগে। বিশেষ করে কিছু তূষ্ণীভাব পোষণ করা সত্ত্বেও বিএনপি তার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ওই সংলাপ-উদ্যোগে যোগ দেওয়ায় দেশবাসী আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অত্যন্ত সৌজন্যমূলক আচরণ ও শিষ্টাচার প্রদর্শন করেছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ব্যক্তিগত কুশলবিনিময় ও কিছু ব্যক্তিগত আলাপচারিতাও করেছেন। তবে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির নির্ধারিত এজেন্ডা-বহির্ভূত আলোচনাই করে এসেছে, নতুন ইসি গঠনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিই জানিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েও পরম উদারতার পরিচয় দিয়ে বিএনপির বক্তব্য শুনেছেন এবং তাদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার কথা দিয়েছেন। অন্যদিকে পরদিন শাসক মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ তার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগ দিয়েছে। ত্রিপুরা সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংলাপে যোগ দিতে পারেননি। সংলাপ শেষে দলের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁরা এজেন্ডার মধ্যেই তাঁদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটিসহ যে প্রস্তাবই দেন, তা সমর্থন করবেন বলে তাঁকে জানিয়ে এসেছেন। সৈয়দ আশরাফ এজেন্ডা-বহির্ভূত বক্তব্য রাখার জন্য বিএনপির সমালোচনা করে বলেছেন, তাদের তাহলে সংলাপে যাওয়াই উচিত হয়নি। জনরোষের ভয়েই মাত্র তারা সংলাপে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলে সমালোচিত হয়েছে।
সচেতন দেশবাসী ও বিশ্লেষকরা বরং বিএনপির সংলাপে যাওয়াকে তাদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক বলেই প্রশংসা করেছেন। তাঁরা দেশে রাজনীতির একটা সুস্থ ও ইতিবাচক ধারা ফিরে আসছে বলেই মনে করেছেন। এমনকি বিএনপির দেওয়া আভাস থেকে তাদের সংসদের আসন্ন অধিবেশনে ফেরার ব্যাপারেও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন বসছে। এ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি বিল আকারে আসছে_এমন একটা জল্পনাও শুরু হয়েছিল। এর ফলে অনিবার্য সংঘাত এড়িয়ে দেশে সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বহু প্রতীক্ষিত ধারাই সূচিত হতে যাচ্ছে_জনমনে এমন আশাই সঞ্চারিত হচ্ছিল। এমনকি সংসদ অধিবেশনের আগে দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রশ্নে কিংবা আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো সর্বদলীয় ব্যবস্থা উদ্ভাবনের প্রশ্নে সংলাপ শুরু করার চিন্তাও দুই দলের দায়িত্বশীল অংশ করছিল বলে মহলবিশেষ জানিয়েছে।
ঠিক এ মুহূর্তে গত সোমবার বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগকে লোকদেখানো বলে নতুন করে তূষ্ণীভাব প্রদর্শন ও কটু মন্তব্য করে তার ফল প্রত্যাখ্যান করায় পরিস্থিতি ফের সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। বিএনপি এ অবস্থায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচিও তুলে ধরেছে। আর আগেই দেওয়া 'ঢাকা চলো' ও পল্টনে ১২ মার্চের মহাসমাবেশের কর্মসূচি তো আছেই।
এমন অবস্থায় রাজনীতিতে সুস্থতা, শালীনতা, গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল সংসদীয় আচার-আচরণ ফিরে আসতে আসতেও কেন অন্তর্হিত হচ্ছে, কেন রাজনীতি পুরোপুরি সংঘাতের আশঙ্কা ও রাহুমুক্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষক মহল ভাবিতই হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। ইইউ আরো সংলাপ চেয়েছে। ইইউ ও যুক্তরাজ্য উভয়ই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলেই আস্থা ব্যক্ত করেছে।
অন্যদিকে বিএনপির মধ্যে আগের চারদলীয় জোট তথা মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রাধান্য ও আপারহ্যান্ড না দিয়ে ১৬টি দল নিয়ে জোটকে সম্প্রসারণ এবং নিছক টেকনিক্যাল প্রশ্নে তথা সংসদ সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকি থেকে নয়, বরং সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক বিল উত্থাপিত হলে তা সমর্থনসহ সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়াকেই অধিকতর গুরুত্ব দিতে সংসদে ফেরার মনোভাব দেখা যাচ্ছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।
শাসক মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ এ অবস্থায় বিএনপির মধ্যে সূচিত এ রাজনৈতিক উত্তরণকে সহানুভূতি এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে উপলব্ধি ও গ্রহণ করতে সক্ষম হলে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের তথা দেশবাসীর জন্যই তা কল্যাণকর হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, কোনো রকম অসতর্কতা, কোনো নেপথ্য শক্তির প্ররোচনা কিংবা রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাবজনিত কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে সূচিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সুবাতাস ও সুচেতনা অন্তর্হিত হলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের জন্য কিছুসংখ্যক সেনাসদস্যকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নেপথ্য চক্রান্তকারী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ এক প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল এবং তার পুনরাবৃত্তিরোধে ও যেকোনো অসাংবিধানিক শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তির সর্বোচ্চ সতর্কতা ও লৌহদৃঢ় জাতীয় ঐক্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয়তে এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগে বিএনপির যোগদান নিছক কৌশল না হয়ে আন্তরিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগও সংলাপকে কোনো কৌশল নয়, আন্তরিক পদক্ষেপ বলেই গ্রহণ করবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় শুধু আন্তরিকতার অভাব ও ক্ষমতাসর্বস্ব জেদি মনোভাবের কারণেই দুপক্ষের সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় এ দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেনি। দুই দলের মধ্যে তাই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবার সব অমীমাংসিত বিষয়েই গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং সংসদকে সচল, প্রাণবন্ত ও কার্যকর করার মধ্য দিয়ে যেকোনো সংঘাতের আশঙ্কা শক্ত হাতে নির্মূল করাই বিশেষ করে দেশের প্রধান দুটি দলের এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমিক কর্তব্য বলেই সচেতন দেশবাসী মনে করছে।
২০.০১.২০১২
নতুন ইসি গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান গত ২২ ডিসেম্বর সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সংলাপ শেষ হয়েছে ১১ জানুয়ারি বিএনপি এবং ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে। মোট ২৩টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী এ সংলাপ-উদ্যোগে আমন্ত্রিত হয়নি। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবকেও সমর্থন করেন। রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে গেছে। সে প্রস্তাবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি হবেন কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য হবেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, দুদক চেয়ারম্যান, পিএসসি চেয়ারম্যান এবং মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।
এদিকে দেশবাসী আশান্বিত হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ-উদ্যোগে। বিশেষ করে কিছু তূষ্ণীভাব পোষণ করা সত্ত্বেও বিএনপি তার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ওই সংলাপ-উদ্যোগে যোগ দেওয়ায় দেশবাসী আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অত্যন্ত সৌজন্যমূলক আচরণ ও শিষ্টাচার প্রদর্শন করেছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ব্যক্তিগত কুশলবিনিময় ও কিছু ব্যক্তিগত আলাপচারিতাও করেছেন। তবে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির নির্ধারিত এজেন্ডা-বহির্ভূত আলোচনাই করে এসেছে, নতুন ইসি গঠনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিই জানিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েও পরম উদারতার পরিচয় দিয়ে বিএনপির বক্তব্য শুনেছেন এবং তাদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার কথা দিয়েছেন। অন্যদিকে পরদিন শাসক মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ তার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগ দিয়েছে। ত্রিপুরা সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংলাপে যোগ দিতে পারেননি। সংলাপ শেষে দলের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁরা এজেন্ডার মধ্যেই তাঁদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটিসহ যে প্রস্তাবই দেন, তা সমর্থন করবেন বলে তাঁকে জানিয়ে এসেছেন। সৈয়দ আশরাফ এজেন্ডা-বহির্ভূত বক্তব্য রাখার জন্য বিএনপির সমালোচনা করে বলেছেন, তাদের তাহলে সংলাপে যাওয়াই উচিত হয়নি। জনরোষের ভয়েই মাত্র তারা সংলাপে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলে সমালোচিত হয়েছে।
সচেতন দেশবাসী ও বিশ্লেষকরা বরং বিএনপির সংলাপে যাওয়াকে তাদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক বলেই প্রশংসা করেছেন। তাঁরা দেশে রাজনীতির একটা সুস্থ ও ইতিবাচক ধারা ফিরে আসছে বলেই মনে করেছেন। এমনকি বিএনপির দেওয়া আভাস থেকে তাদের সংসদের আসন্ন অধিবেশনে ফেরার ব্যাপারেও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন বসছে। এ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি বিল আকারে আসছে_এমন একটা জল্পনাও শুরু হয়েছিল। এর ফলে অনিবার্য সংঘাত এড়িয়ে দেশে সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বহু প্রতীক্ষিত ধারাই সূচিত হতে যাচ্ছে_জনমনে এমন আশাই সঞ্চারিত হচ্ছিল। এমনকি সংসদ অধিবেশনের আগে দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রশ্নে কিংবা আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো সর্বদলীয় ব্যবস্থা উদ্ভাবনের প্রশ্নে সংলাপ শুরু করার চিন্তাও দুই দলের দায়িত্বশীল অংশ করছিল বলে মহলবিশেষ জানিয়েছে।
ঠিক এ মুহূর্তে গত সোমবার বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগকে লোকদেখানো বলে নতুন করে তূষ্ণীভাব প্রদর্শন ও কটু মন্তব্য করে তার ফল প্রত্যাখ্যান করায় পরিস্থিতি ফের সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। বিএনপি এ অবস্থায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচিও তুলে ধরেছে। আর আগেই দেওয়া 'ঢাকা চলো' ও পল্টনে ১২ মার্চের মহাসমাবেশের কর্মসূচি তো আছেই।
এমন অবস্থায় রাজনীতিতে সুস্থতা, শালীনতা, গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল সংসদীয় আচার-আচরণ ফিরে আসতে আসতেও কেন অন্তর্হিত হচ্ছে, কেন রাজনীতি পুরোপুরি সংঘাতের আশঙ্কা ও রাহুমুক্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষক মহল ভাবিতই হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। ইইউ আরো সংলাপ চেয়েছে। ইইউ ও যুক্তরাজ্য উভয়ই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলেই আস্থা ব্যক্ত করেছে।
অন্যদিকে বিএনপির মধ্যে আগের চারদলীয় জোট তথা মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রাধান্য ও আপারহ্যান্ড না দিয়ে ১৬টি দল নিয়ে জোটকে সম্প্রসারণ এবং নিছক টেকনিক্যাল প্রশ্নে তথা সংসদ সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকি থেকে নয়, বরং সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক বিল উত্থাপিত হলে তা সমর্থনসহ সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়াকেই অধিকতর গুরুত্ব দিতে সংসদে ফেরার মনোভাব দেখা যাচ্ছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।
শাসক মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ এ অবস্থায় বিএনপির মধ্যে সূচিত এ রাজনৈতিক উত্তরণকে সহানুভূতি এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে উপলব্ধি ও গ্রহণ করতে সক্ষম হলে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের তথা দেশবাসীর জন্যই তা কল্যাণকর হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, কোনো রকম অসতর্কতা, কোনো নেপথ্য শক্তির প্ররোচনা কিংবা রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাবজনিত কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে সূচিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সুবাতাস ও সুচেতনা অন্তর্হিত হলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের জন্য কিছুসংখ্যক সেনাসদস্যকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নেপথ্য চক্রান্তকারী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ এক প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল এবং তার পুনরাবৃত্তিরোধে ও যেকোনো অসাংবিধানিক শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তির সর্বোচ্চ সতর্কতা ও লৌহদৃঢ় জাতীয় ঐক্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয়তে এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপ-উদ্যোগে বিএনপির যোগদান নিছক কৌশল না হয়ে আন্তরিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগও সংলাপকে কোনো কৌশল নয়, আন্তরিক পদক্ষেপ বলেই গ্রহণ করবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় শুধু আন্তরিকতার অভাব ও ক্ষমতাসর্বস্ব জেদি মনোভাবের কারণেই দুপক্ষের সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় এ দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেনি। দুই দলের মধ্যে তাই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবার সব অমীমাংসিত বিষয়েই গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং সংসদকে সচল, প্রাণবন্ত ও কার্যকর করার মধ্য দিয়ে যেকোনো সংঘাতের আশঙ্কা শক্ত হাতে নির্মূল করাই বিশেষ করে দেশের প্রধান দুটি দলের এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমিক কর্তব্য বলেই সচেতন দেশবাসী মনে করছে।
২০.০১.২০১২
No comments